পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] বস্তুতঃ স্তায়-অন্ধ্যায়, সত্য-অসত্যের বিচার না করিয়া সাংসারিক কুবিধা ও প্রতিপত্তি-প্রভুজের জন্ত বলপ্রয়োগ ও অস্ত্র-চালনার রীতি যতদিন রাষ্ট্রীয় কাৰ্য্যক্ষেত্রে বৈধ পরিগণিত থাকিবে, ততদিন বিপ্লবীদের দ্বারা অনুষ্ঠিত বল-প্রয়োগ ও অস্ত্র-প্রয়োগের নিম্বা সম্পূর্ণ ফলদায়ক হইবে না। তাহা পা হইলেও, আমরা ব্যক্তির পক্ষে যেমন নেগুৰু বা জাতির পক্ষেও তেমনি পরস্ব-অপহরণ ও আনুষঙ্গিক অল্প বা অধিক নরহত্যাকে গৰ্হিত বলিয়া আসিতেছি, ভবিষ্যতেও বলিব । ফলাফল চিস্তা করিব ন । সাধারণ ডাকাতি ও রাজনৈতিক ডাকাতি উভয়ই অধৰ্ম্ম । কিন্তু নেগুন বা জাতি দ্বারা পরদেশ আক্রমণ বা অধিকার এবং ভিন্ন জাতির সম্পত্তি অপহ · বিশালতর রাজনৈতিক ডাকাতি, ইহা বাক্যতঃ ও কাৰ্য্যতঃ স্বীকৃত না হইলে, যাহার ব্যক্তিগতভাবে সত্যিকার রাজনৈতিক ডাকাত তাহাদিগের কাৰ্য্যের গর্হিততা তাহাদিগকে বিজয়ী রাজা রাষ্ট্রপতি মন্ত্রী সেনাপতি প্রভৃতির বুঝাইতে পারিবেন না। ব্যক্তি দ্বারাই হউক, বা নেশুন দ্বারাই হউক, ডাকাতি-মাত্রকেই আমরা অধৰ্ম্ম মনে করি ও বলি । অতএব আমাদের কথায় কোন অসঙ্গতি নাই । বিপ্লব-বাদের মূল উচ্ছেদ করিতে হইলে ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে যে-পরিবর্তন প্রয়োজন, এবং জগতের রাষ্ট্রীয় ব্যাপারসকলে বৈধতা-অবৈধতার বিচার যেনীতি অনুসারে হয় তাহার যেরূপ পরিবর্তন আবশ্যক, তাহার কিঞ্চিৎ আভাস দিলাম । এক্ষণে আরো কয়েকটি কথা বলিব । বাংলা দেশে প্রতিবৎসর হাজার-হাজার ছেলে কিছু লেখাপড়া শিখিয়া সংসারে প্রবেশ করিতে চাহিতেছে। কিন্তু ইহাদের জন্য যথেষ্ট বিস্তীর্ণ কাৰ্য্যক্ষেত্র ও যথেষ্টসংখ্যক কাজ নাই। বরং কলকারখানা, রেলওয়ে প্রভৃতির বৃদ্ধি ও বিস্তার হেতু মজুর, মিস্ত্রী ও কারিগরদের কার্য্যক্ষেত্র ও কাজ বাড়িতেছে, কিন্তু লেখাপড়া-জানা মাত্র যাহাদের সম্বল তাহাদের জীবিকা নিৰ্ব্বাহের নূতন পথ সামান্তই খুলিতেছে। কথায় বলে, বিবিধ প্রসঙ্গ—বিপ্লব-বাদের উচ্ছেদের উপায়

ፃ »

করে। এই কারণে অল্প বা বেশী-লেখাপড়া-জানা লোকদের শিক্ষার রকমওয়ারী চাই, এবং কাৰ্য্যক্ষেত্রেরও বিস্তার চাই। নতুবা যদি শুধু পেটের দায়েই অনেকে ডাকাতি করে, তাহা আশ্চর্য্যের বিষয় হইবে না । প্রশ্ন হইতে পারে যে, ইহার সহিত বিপ্লব-বাদের সম্বন্ধ কি ? সম্বন্ধ এই যে, বেকার অবস্থার জন্ত রাষ্ট্র দায়ী, ইহা সভ্যজগতে সৰ্ব্বত্র স্বীকৃত। ইংলগুেইত লক্ষ-লক্ষ লোককে যুদ্ধের পর রাষ্ট্রকে খোরপোষ দিয়া বাচাইয়া রাখিতে হইয়াছে ; সরকারী ব্যয়ে কয়েক লক্ষ বাড়ী তৈয়ার করিবার সঙ্কল্প স্থির হইয়া আছে। স্বতরাং বেকার লোকেরা আমাদের দেশেও ষে গবর্ণমেণ্টকে দায়ী মনে করিবে, তাহাতে আশ্চৰ্য্য কি অধিকন্তু ইংরেজ-রাজত্বে এমন অনেক চাকুরী আছে, যাহার কাজ .ভারতীয়ের অনায়াসে করিতে পারে, অথচ সে-সব চাকরী পায় ইংরেজরা । কোম্পানীর আমলে অনেক পণ্যশিল্প ও ব্যবসা ছিল, যাহার হ্রাস বা লোপে বেকারের সংখ্যা বাড়িয়াছে। ইহার জন্য লোকে ইংরেজ সরকারকে দায়ী করে । আমাদের সরকারী শিক্ষা-প্রণালী এরূপ কেন যাহাতে মানুষ নানা উপায়ে রোজগার করিতে শিক্ষা পায় না ? ইহার জবাব গবর্ণমেণ্টের নিকট হইতে চায়। জাপানে যেমন আধুনিক ধাচের নানা পণ্যশিল্প, কলকারখানা জাপানী গবর্ণমেণ্ট, দ্বারা প্রবর্তিত হইয়াছে, এদেশে কেন তাহা হয় নাই, তাহার জন্যও লোকে গবর্ণমেণ্টকে দায়ী করে। অতএব বিপ্লব-বাদের মূল উচ্ছেদ করিতে হইলে বেকার সমস্তার সমাধানের জন্য বিশেষরকম চেষ্টা করিতে হইবে, শিক্ষার রকমওয়ারী করিতে হইবে, ভারত-সম্পর্কে ইংরেজের বাণিজ্য-নীতি ও পণ্যশিল্প-নীতি বদলাইতে হইবে । আমরা আগেই বলিয়াছি, বিপদকে তুচ্ছ করিবারসাহসের কাজ করিবার প্রবৃত্তি মানব-প্রকৃতিতে নিহিত আছে । ইংরেজরা ভুলিয়া যায়, যে, বাংলা দেশেও এই মানব-ধর্মের ব্যতিক্রম হয় নাই । কিন্তু আমাদের ছেলেদের বিপদকে অগ্রাহ করিয়া সাহসের কাজ করিবার ক্ষেত্র ও