পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԳ8 প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড মধ্যে যুদ্ধ-ব্যবসায়ী লোক দৃষ্ট হয় না। যুদ্ধ-ব্যবসায়ী লোক প্রধানতঃ কতকগুলি শ্রেণীর লোকদের মধ্যেই আছে। এইজন্ত . যুদ্ধ-প্রবণতা, কঠোরতা ও হিংস্রতা তাহাদের মধ্যে বেশী-পরিমাণে দেখা যায়। সকল শ্রেণীর সকল ভারতীয়ের মধ্যে এইসব গুণ উৎপাদন যদি বা বাঞ্ছনীয় মনে করা হয়, তাহা হইলেও বর্তমান অবস্থায় তাহ সম্ভবপর নহে। বল-প্রয়োগ ও হিংসার বারা দেশকে স্বাধীন করিতে হইলে প্রধানত: তাহদের দ্বারাই এই কাজ হইবে যাহাঁদের মধ্যে বর্তমানে এইসব গুণ আছে। তাহারা এত কঠিন একটা কাজ করিয়া দেশে গণতন্ত্র স্থাপন করিয়া দিয়া নিজের-নিজের স্বরে ফিরিয়া যাইবে, ইহা মনে করা বাতুলত । তাহারা গণতন্ত্রবাদ, সাম্যবাদ এবং রাষ্ট্রনীতি-বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ তত্ত্বসকলের ধার ধারে না । যাহারা নিজের শক্তিতে ইংরেজকে তাড়াইবে, “জোর যার মুলুক তার” নীতিরই অনুকরণ তাহার করিবে। তাহা হইলে ভারতবর্ষ ইংরেজের পদানত না থাকিয়া কতকগুলি যুদ্ধ-নিপুণ ভারতীয় লোকদের অধীন হইবে । কিন্তু ভারতীয়দের মধ্যে ইহারাই কি শ্রেষ্ঠ মানুষ, ইহারাই কি সৰ্ব্বজনহিতকর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রণয়ন করিয়া রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য যোগ্যতম লোক ? তাহা নহে। ভারতীয় স্বাধীনতা সকলের জন্ত হওয়া চাই ; শ্রেণী-বিশেষের প্রভুত্ব ভারতীয় স্বাধীনতা নহে। যে-কোনরকমের ভারতীয় লোকদের দ্বারা যে-কোনরকমের শাসন-প্রণালী অমুসারে রাষ্ট্রীয় কাৰ্য্য নির্বাহিত হওয়াটা ভারতীয় স্বাধীনতার উচ্চতম আদর্শ ত নহেই, উচ্চ আদর্শও নহে । আমাদের কথাটা অনেকের ভাল না লাগিতে পারে। ভাবুকতার আতিশয্যে র্তাহারা কল্পনা-নেত্রে সৰ্ব্বত্র ভ্রাতৃভাব দেখিতে পাইতে পারেন। কিন্তু বাস্তব অবস্থা তা ত নয়। ভারতবর্ষের সর্বত্র দেখুন, কোন-না কোন শ্রেণী যে-কোনপ্রকারেই হউক নিজেরা সুখস্ববিধ, টাকা-কড়ি, ক্ষমতা, রাষ্ট্ৰীয় অধিকার যে যতটা পারে দখল করিবার চেষ্টায় আছে ; তাহারা যথাসাধ্য দখল করিয়া লইবার পর বাকী যাহা থাকিবে, তাহাতে অপর সকলে ন্যায্য অংশ পাইবে কি না, সে-চিত্তা এই সব শ্রেণীর লোকেরা করে না। অবশ্য এইরূপ মতিগতি অন্য দেশেও আছে। কিন্তু আমরা এখন কেবল নিজের ঘরের সমস্যার কথাই বলিব । যে-সব শ্রেণীর লোকে স্থখ-সুবিধা ও ক্ষমতী-আদি লইয়া কাড়াকড়ি করিতেছে, তাহারা দেশের জন্য বড়-একটা কিছু কাজ বৰ্ত্তমানে করে নাই। অথচ তাহাদের দাবী-দাওয়া চেষ্টা উক্তরূপ। স্বতরাং ভাবিয়া দেখুন, যদি কোনকোন শ্রেণীর লোক যুদ্ধ করিয়া ইংরেজ তাড়াইয়া দিতে পারে, তাহা হইলে তাহারা সেই কৃতিত্বের বিনিময়ে কতখানি ক্ষমত, অধিকার, সুবিধা ও প্রভুত্ব চাহিবে। সৈনিক শ্রেণীর শাসন যে কেমন চমৎকার জিনিষ, ইতিহাসে তাহার অনেক প্রমাণ আছে। আধুনিক সময়ে জাৰ্শেনীতে প্রশিয়ার যুদ্ধপ্রিয় জাস্কার (Junker) দল জাৰ্ম্মেনীকে কেমন স্বদশায় উপনীত করিয়াছে, তাহা সকলেই দেখিতেছেন। বর্তমান অবস্থায় হিংসার পথে চলিয়া ভারতবর্ষকে স্বাধীন করিতে হইলে কিরূপ ফল ফলিতে পারে, তাহার কিছু আভাস দিলাম। অহিংসার পথে চলিয়া স্বাধীনতা লাভ করিতে হইলে তাহা সকল শ্রেণীর লোকের সংযম, সহিষ্ণুতা, সাত্বিক সাহস ও স্বার্থত্যাগ ব্যতিরেকে সম্ভব হইবে না ; এবং এইসকল গুণ যাহাদের মধ্যে আছে বা বিকশিত হইবে, তাহারা যে মানব-জাতির শ্রেষ্ঠ পৰ্য্যায়-ভুক্ত তাহাতে সন্দেহ নাই । অস্কান্ত কারণ ছাড়া, এইজন্যও আমরা অহিংসার পথ শ্ৰেয়ঃ মনে করি । - মানুষ-খুন না করিলেই যে অহিংসা হয়, তাহা নহে। রাষ্ট্রীয় বা অন্ত বিষয়ে ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি বিদ্বেষপোষণ, তাহাদের সন্ধন্ধে মিথ্যা কথার প্রচার, ছলে-বলেকৌশলে প্রতিদ্বন্দ্বীর অনিষ্ট করিয়া তাহার অনিষ্ট ও পরাজয় সাধন, এসমস্তই হিংসা। যাহারা এইরকম আচরণ করে, তাহারা “স্বরাজ্য-দল” ভুক্ত হউক, বা অন্য দলেরই হউক, তাহারা হিংসা-পন্থী। তাহারা ভারতীয় স্বরাজ চায় না, নিজেদের প্রভুত্ব চায়। ভারতীয় ঘেকোন একটা দলের প্রভুত্ব স্বরাজ নহে।