পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԵ একবার পাচ দিন জরের পর জানলার ধারে গিয়ে সরে’ বসেছি, দশটা তখনো বাজেনি, একটু পরেই গাড়ী এল কৃষ্ণাকৈ নিতে, তখন ডিসেম্বর মাস, তাকে দেখলাম একখানা ধূপছায়া রঙের র্যাপার গায় দিয়েছে, দরজা দিয়ে গাড়ীর ভিতর তার গায়ে রোদ পড়েছে, গল ছুটি লাল হ’য়ে উঠেছে, সে একবার চেয়েই চোখ নীচু করে নিলে। কৃষ্ণা এসে চড়লে পর গাড়ী ছেড়ে দিলে, সে আর একবার চটু করে দেখে নিলে আমার জানলার দিকে। তাকে রোজ-রোজ দেখি, সেও আমায় রেজ। দেখে, তাকে একদিন না দেখলে মনটা খারাপ হ’য়ে যায়। তার নাম জানিনে, জানবার কোন আশাও নেই, মনে হ’ত আমার যদি একটি বোন থাকত, আর সেও যদি ঐ স্থলেই পড়ত তবে ওর নামটি জেনে নিতে পারতাম। নিজে-নিজে তার কত নাম ঠিক করলাম, মালতী, অরুণা, বীণা, জ্যোৎস্না, কিছু দিন পরে আর এর কোন নামই ভালো লাগত না । এইরকম করে আরও পাঁচ ছয় মাস কেটে গেল । গরমের ছুটি এখন। আমার জানল এখন খুলে রাখবার জ্যেও নেই, দরকারও নেই, স্কুল ছুটি । কৃষ্ণাও তার মামার বাড়ী গেছে ছুটিতে। দিন আর কাটুতে চায় না। অনেকগুলি গল্পের বই কিনে' দিলেন কাকাবাবু। সব পড়ে শেষ কষ্ণুে’ ফেললাম। এই সময়ে আবার আমাব জর হ’তে লাগ ল । একদিন যতীন-মাম! একখানা বই এনে দিলেন আমাকে, ডাকঘর তার নাম। খুব ভালো লাগল পড়ে । বইখানা একবার শেষ করে আবার পড়লাম, তার পর আবার পড়লাম, শেষে সেইখানা সারাদিনই আমার বালিশের নীচে থাকৃত । আমি ভাব তাম আমি যদি অমল হতাম বেশ হত। আমারও ত অস্বথ করেছে, আমিও ঘরে বন্ধ। আমার তখন মনে পড়ত জামূতাড়ার কথা, সেখানকার সেই রাস্তা, খোলা মাঠ, শালবন আর কতদূরের পাহাড়গুলি। সঙ্গে-সঙ্গে আমার ঘরের সামনের সেই সাওতাল ছেলের বঁাশীর কথা মনে পড়ত প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড আবার স্কুল খুলেছে। আজ তাকে দেখলাম তা মাথায় আর ফিতে নেই, একখানা লাল পেড়ে শাড় পরেছে, আর কাণে দুইটি লাল প্রবালের জুল। ীি স্বন্দর লাগল তাকে আজ। কতদিন পরে দেখলা তাকে, আজ তার নাম দিলাম “স্বধা” । মনে হ’ব ঠিক নামকরণ করা হয়েছে। দিনের পর দিন চলেছে, ক্রমে বর্ষ এল । বং বিচ্ছিরি দিনগুলি হয় বর্ষায়—এই কলকাতায় । জানল খুলতে পারিনে। শাশির কাচ জলে ভিজে কুয়াসার মতন সাদা হয়ে যায়, বাইরের কিছুই দেখা যায় না কত দিন হ’য়ে গেল স্বধাকে দেখিনি । একদিন সকাল থেকে ভয়ানক বৃষ্টি, কৃষ্ণাকে নিয়ে গেল গাড়ীতে, কিন্তু স্বধাকে দেখতে পেলাম না। তার পর সারাদিন খুব বৃষ্টির পর বিকালে বৃষ্টি থামূল। রাস্তায় জল দাড়িয়ে গেছে । গাড়ী এল কৃষ্ণাকে দিতে, সে বেচারা আর নামৃতে পারে না । গাড়ীর ফুটবোর্ড জলে ডুবে গেছে। ভিতবে জল ঢোকে-ঢোকে। সহিস কৃষ্ণার বাড়ীর চাকর ডাকৃতে গেছে। আমি আস্তে-আস্তে জানলার ধারে গিয়ে বসেছি, আজ অনেক দিন পরে অনেকক্ষণ ধরে স্বধাকে দেখলাম। সে একটা সবুজ জামা আর একখানা বেগুনি রংএর শাড়ী পরেছে, চুলগুলি একটু ভিজে-ভিজে বোধ হ’ল । তার মুখখানি আজ হাসি-হাসি দেখলাম। কৃষ্ণাকে তাদের চাপরাশী কোলে করে’ নামিয়ে নিয়ে গেল। আজকে সবচেয়ে বেশীক্ষণ গাড়ী দাড়িয়েছিল, গাড়ী চলে গেল, তার পেছনে ঢেউ খেলে গেল, আমার মনেও আজ রংএর ঢেউ খেলতে লাগল। আবার পূজার ছুটি এল বলে। আজ শুক্রবার, কাল থেকে ছুটি, আজ স্বধার মুখখানি বেশ গম্ভীর লাগল। আমিও বোধ হয় খুব গভীর হয়েছিলাম। মন্ট এসে বললে, “দাদাভাই, কৃষ্ণ এ ছুটিতে কোথাও যাবে না”। সে ভেবেছিল আমি বোধ হয় খুব খুলী হ’ব এই খবরে, কিন্তু তার কোন লক্ষণ না দেখে বেচারা ঘর থেকে আস্তে-আস্তে চলে গেল । আমার জরটা আজকাল একটু বেড়েই চলেছে,