পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ኟዓ።” কুঞ্জবাবু হিন্দুসমাজভূক্ত একেশ্বরবাদী ছিলেন । বাল্যকালে ও ছাত্রজীবনে তিনি কেশবচন্দ্র সেন ও প্রতাপচন্দ্র মজুমদার মহাশয়দ্বয়ের সংস্পর্শে আসায় তাহার সদগুণাবলী মুন্দরব্রুপে বিকশিত হইয়াছিল। তিনি বরাবর দেশভক্ত ছিলেন । এলাহাবাদে থাকিবার সময় "দেশী তেজারং”, “দেশী কারবার” প্রভৃতি দোকান হইতে ভারতজাত জিনিষ কিনিয়া ব্যবহার করিতেন, এবং অমৃতবাজার পত্রিকা ও সঞ্জীবনীতে তিনি বিচার-বিভ্ৰাটআদি সম্বন্ধে লিপিতেন । তিনি স্ত্রীশিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার পক্ষপাতী ছিলেন । তিনি স্বয়ং পরোপকারী ও সেবাপরায়ণ ছিলেন, এবং পু দিগঞ্জে ও তাহা করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন । সে-চেষ্টা বিফল হয় নাই । সামাজিক পবিত্রতা-বিষয়ে তাহার দৃষ্টি থাকায় তিনি কথন সেইসব থিয়েটারে যান নাই, যাহার অভিনেত্রীরা পাপের ব্যবসা করে । আমি যখন এলাহাবাদে একটি কলেজে কাজ করিতাম, তখন র্তাহার সহিত পরিচিত হই । আমার তখন সে-অঞ্চলের রীতি-নীতি, লোকদের ভাবগতিক জ্ঞান ছিল না ; কলেজ-কমিটির বড় সভ্য অনেকেই হাইকোর্টের উকীল ও কর্মচারী ছিলেন। এইসব কারণে কুঞ্জবাবুর সাহায্যে ও পরামর্শে আমি আমার কলেজ-সম্পৃক্ত ও সাৰ্ব্বজনিক কাজে উপকৃত হইয়াছিলাম, তাহার জন্য এবং তাহার পরেও নানাভাবে তাঙ্গার নিকট হইতে সাৰ্ব্বজনিক কাজে ফেসাহায্য পাইয়াছি তাহার নিমিত্ত চিরকৃতজ্ঞ থাকিব । তিনি আমার শ্রদ্ধাভাজন বন্ধু ছিলেন । কুঞ্জবাবুর স্বভাবের একটি বিশেষত্ব এই ছিল, যে, অন্য সব মামুষের ন্যায় যদিও তাহাকেও জীবনে অনেক দুঃখ ও পরীক্ষাৰ ভিতর দিয়া অগ্রসর হইতে হইয়াছে, তথাপি তিনি তাহার নিজের স্ববিধার দিকে দৃষ্টি রাখিয়৷ কাজ করিতে বন্ধুবৰ্গকে অনুরোধ করিতেন না। নিজের বোঝা তিনি ধৈয্যের সহিত বহিতেন, এবং তাহার জন্য কেহ কোন চেষ্টা করিলে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা অনুভব করিতেন। তিনি খুব বন্ধুবৎসল ছিলেন । প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩১ [ ২৪৭ ভাগ, ২য় খণ্ড মৃত্যুর অল্পক্ষণ পূৰ্ব্বে তিনি করযোড়ে প্রার্থনা করেন, এবং সজ্ঞানে দেহত্যাগ করেন । গৌরহরি সেন পরলোকগত গৌরহরি সেন মহাশয়ের পরিচয় দিতে গেলে ইহা বলাই যথেষ্ট, যে, তিনি চৈতন্য লাইব্রেরীর গৌরহরি-বাৰু। তিনি নিষ্ঠ ও শৃঙ্খলার সহিত এই লাইব্রেরীর কাজ যৌবনকাল হইতে করিয়া আসিতেছিলেন । ইহা হইতে বিস্তর লোকের পাঠামুরাগ জন্মিয়াছে ও বিদ্যাকুশীলনের স্থবিধা হইয়াছে । তা ছাড, গৌরহরি-বাবুর উদ্যোগে চৈতন্য লাইব্রেরীর সম্পর্কে আহুত সভায় শ্ৰীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রভৃতি অনেক ভারতীয় মনীষী এবং অনেক বিদেশী কৃতী ব্যক্তি বহু সারগর্ভ প্রবন্ধ পাঠ এবং বক্তৃতা করেন । এইজন্য বিদ্যালয়-সংস্থাপক ও পরিচালকের যে প্রশংসা প্রাপ্য, গৌরহরি-বাবুও তদ্রুপ প্রশংসার উপযুক্ত পাত্র । চৈতন্য লাইব্রেরীর স্থায়িত্ব-বিধান ও উন্নতি-সাধন তাহার স্মৃতিরক্ষার শ্রেষ্ঠ উপায় । মহাত্মা গান্ধী মহাত্মা গান্ধী নিরাপদে একুশ দিন উপবাসের ব্রত উদযাপন করিতে সমর্থ হওয়ায় স্বর্থী হইয়াছি। এই দীর্ঘ উপবাসে র্তাহার দেহ ক্ষীণ ও মস্তিষ্ক দুৰ্ব্বল হইয়াছে । সেইজন্ত র্তাহার চিকিৎসকেরা তাহাকে শারীরিক শ্রম অপেক্ষাও মানসিক শ্রম হইতে যথাসাধ্য দীর্ঘকাল বিশ্রাম করিতে পরামর্শ দিয়াছেন । এই কারণে তিনি তাহার বন্ধু মিষ্টার এও জকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ইয়ং ইণ্ডিয়া সম্পাদন করিবার ভার দিয়াছেন । গান্ধীজির বিশ্রামের প্রয়োজন হইলেও, সাৰ্ব্বজনিক কাজ তাহাকে ছাড়ে না। কি-প্রকারে সম্মিলিত কংগ্ৰেসূ হইতে পারে, তৎসম্বন্ধে পরামর্শ করিবার জন্য তিনি কলিকাতা আসিয়াছিলেন । কার্য্য-সমাপনাস্তে আবার দিল্লী ফিরিয়া গিয়াছেন ।