পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্লবের দিনে শ্ৰী মণীশ ঘটক (আইরিশ লেখক Iliam )'Flahortyর অমুসরণে } সন্ধ্যার মান আলো ক্রমে নিবিড় হ’য়ে আসছে। মেঘে ঢাকা সদ্যোজাত চাদের অস্ফুট আভা আর সন্ধ্যার আঁধার একসঙ্গে মিশে’ সহরের রাস্তা-ঘাট নদীর উপর একটা আস্তরণ বিছিয়ে দিয়েছে। চারদিক্‌ থেকে মাঝে-মাঝে বন্দুকের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। স্বাধীন-তন্ত্রী ( Free States ) wrq Atoto-Kolzo ( Republicans) মধ্যে ঘরোয়া যুদ্ধ চলছে । সহরের একটা ছাদের উপর সাধারণ-তন্ত্রীদের একজন সৈন্য লুকিয়ে বসে আছে । তার পাশে একটা রাইফেল, কঁধের উপর দিয়ে দূরবীন ঝোলানো । চেহারা পড়য়া ছোকৃরার মতে, পাতলা ; চোপের দৃষ্টি গভীর চিন্তাপূর্ণ— মৃত্যুর দিকে তাকিয়ে-তাকিয়ে যেন অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সে ক্ষুধাৰ্ত্তভাবে একটুকরো রুটিতে কামড় দিচ্ছিল । সকাল থেকে কিছু খায়নি। সারাদিন এমন উত্তেজনা গেছে—! রুটিটা শেষ করে’ ফ্লাস্ক থেকে থানিকট হুইস্কি ঢক্-টক্ করে’ গলায় ঢেলে দিয়ে সে বোতলট পকেটে রেগে দিলে । একটা সিগারেট খেতে তার ভয়ানক ইচ্ছা করছিল, কিন্তু সেটা স্ববিবেচনার কাজ হবে কি না বুঝতে পারছিল না । সিগারেট ধরাতে গেলেই আলো দেখ। যাবে । চারিদিকে শত্রু । যাকগে !—ভেবে-চিন্তে সে ধরানোই ঠিক কবুলে । দেশলাই জেলে সিগারেট ধরিয়ে কমে দু-চার টান লাগালে । সঙ্গে-সঙ্গে একটা গুলি এসে ছাদের কানিশে লাগল । সৈনিক আর-একটা জোর টান দিয়ে সিগারেটুটা ফেলে দিলে, তার পর একটু সরে’ বা দিকে গিয়ে বসূল । ধীরে-ধীরে, খুব সাবধানে, ছাদের আলসের উপর দিয়ে সে মাথা উচু করলে। আবার আর-একটা গুলি— মাথার উপর দিয়ে । সাম্নের ছাদ থেকে কে বন্দক ছুড়ছে । সে একটা থামের আড়ালে গিয়ে মাথা উচু করে দেখতে লাগল। কিছুই স্পষ্ট দেখা যায় না—কেবল সার-সার ছাদ । শত্রু নিশ্চয়ই লুকিয়ে আছে । ঠিক সেইসময় একখানা সশস্ত্র মোটর-গাড়ী নীচে রাস্তায় এসে থামূল। সৈনিকের বুক ধপ-ধপ, করছিল। শত্রুপক্ষের গাড়ী। গুলি ছুড়তে ভারি ইচ্ছে হচ্ছিল তার, কিন্তু জানত যে তা অনর্থক । বন্দুকের গুলি মোটরকারের লোহার দেয়াল ফুটো করতে পারবে না। রাস্তার উন্টে দিক থেকে আপাদমস্তক শালমুড়ি দেওয়া এক বুড়ী এসে মোটরকারের সৈন্তটির সাথে কথা বাৰ্ত্তা বলতে লাগল। তার পর আঙল দিয়ে সৈনিকের ছাদের দিকে দেখালে, হু – শত্রুর চর । মোটরের দরজা খুলে গেল। একটা মাথা বেরিয়ে এল । সৈনিক রাইকেল উচিয়ে তাগ করলে । তার পর— ব্যস্। মাথাটা মোটরের উপর ঝুলে পড়ল । বুড়ী উৰ্দ্ধশ্বাসে রাস্তার ধার দিয়ে পিঠটান দিচ্ছিল । সৈনিক আবার বন্দুক তুললে এক গুলিতেই বুড়ী ঘুরে একদম নর্দমার মধ্যে— হঠাৎ সামনের ছাদ থেকে একটা আওয়াজ এল আর সৈনিকের হাত থেকে বন্দুকট পড়ে গিয়ে এমন বিশ্রীরকম শব্দ হ’ল যে মনে হ’ল বুঝি মর্য-মানুষও চম্কে জেগে উঠবে । সে তাড়াতাড়ি বন্দুকটা তুলতে গেল কিন্তু পারলে না। তার ডানহাত অসাড় হ’য়ে গেছে । ছাদের উপর উপুড় হ'য়ে পড়ে হামাগুড়ি দিয়ে সে আলসের নীচে গেল। বঁ-হাত দিয়ে আহত হাতটা তুলে’ দেখতে লাগল। তার কোটের মধ্য দিয়ে রক্ত পড়ছে । বেদন বিশেষ নেই, শুধু মনে হচ্ছিল সব অসাড় হ’য়ে (引なゅ I সে চট করে’ পকেট থেকে ছুরি বার করে” কোটের হাতটা চিবে ফেললে । হাতে একটা ফুটে হয়েছে। হাতটা একটু নাড়াতে গিয়েই অসঙ্গ বেদনায় সে মুগ বিকৃত করলে । পকেট থেকে আইডিনের শিশি বার করে” সে ক্ষতস্থানে ঢেলে দিলে। যন্ত্রণায় তার মুখ-চোখ নীল হ’য়ে গেল। খানিকট তুলো দিয়ে ব্যাণ্ডেজ করে সে দাত দিয়ে গেরো এটে দিলে । তার পর খানিকক্ষণ চুপচাপ পড়ে থাকুল । আর সমস্ত মনের জোর দিয়ে দৈহিক বেদনাকে উপেক্ষা করবার চেষ্টা করতে লাগল। নীচে রাস্তায় সব চুপ। সশস্ত্র গাড়ীট চলে গেছে । বুড়ীর মৃতদেহ নৰ্দ্দমায় পড়ে আছে । সৈনিক অনেকক্ষণ চপ করে’ শুয়ে-শুয়ে ভাবলে কি করে’ সরে পড়া যায়। সামূনের ছাদের শক্রটাই তার বাধা । তা’কে সাবাড় করতেই হবে—কিন্তু রাইফেল ধরবার ত আর উপায় নেই। সঙ্গে কেবল একট। রিভলভার আছে । তা মাথায় একটা ফন্দী এল । মাথার টুপীট খুলে সে বন্দুকের নলের উপর পরিয়ে দিলে। তার পর ধীরে-ধীরে বঁ-হাতে রাইফেলটা ঠেলে’ আলসের গায়ে দাড় করিয়ে দিলে,—যাতে শুধুই টুপীটা দেখা যায়। প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই বন্দুকের আওয়াজ হ’ল ।