পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఇసె\ు প্রবাসী—পৌষ, ১৩৩৪ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড ব্যক্তিবিশেষের তুচ্ছতাও প্রেমের কাছে মূল্যবান। ব্যক্তিবিশেষের ছোটবড় বিচিত্র দাবীর সমস্ত খুটিনাটিতে সেই প্রেমের আত্মদানশক্তি নিজেকে বহুধারায় উন্মুক্ত করে। ’ ব্যক্তিবিশেষের সেষ্ট নানা ক্ষুধার নানা চাওয়া মেয়ের প্রেমের উদ্যমকে কেবলি জাগিয়ে রেখে দেয়। যে-পুরুষ আপন দাবীকে ছোট করে সে খুব ভালো লোক হ’তে পারে, কিন্তু মেয়েকে সে পীড়া দেয়, অপূর্ণ করে রাখে। এই জন্যে দেখা যায় যে পুরুষ দৌরাত্ম্য করে” বেশি মেয়ের ভালোবাসা সেই পায় বেশি। নারীর প্রেম যে-পুরুষকে চায় তা’কে প্রত্যক্ষ চায়, তা’কে নিরন্তর নানা আকারে বেষ্টন করবার জন্যে সে ব্যাকুল । মাঝখানে ব্যবধানের শূন্যতাকে সে সইতে “ পারে না । মেয়েরাই যথার্থ অভিসারিকা। যেমন করে’ই হোক, যত দুর্গমই হোক, বিচ্ছেদ, পার হবার জন্য তাদের সমস্ত প্রাণ ছটফট করতে থাকে। এই জন্যেই সাধনারত পুরুষ মেয়ের এই নিবিড় সঙ্গবন্ধনের টান এড়িয়ে অতি নিরাপদ দূরত্বের মধ্যে পালাতে ইচ্ছা করে। পূৰ্ব্বেই বলেচি, আপন পূর্ণতার জন্যে প্রেম ব্যক্তিবিশেষকে চায়। এই ব্যক্তিবিশেষ জিনিষটি অত্যন্ত বাস্তব জিনিষ। তা’কে পেতে গেলে তার সমস্ত তুচ্ছ খুটিনাটির কোনোটাকে বাদ দেওয়া চলে না, তার দোষ ক্রটিকেও মেনে নিতে হয় । ব্যক্তিরূপের উপর ভাবের আবরণ টেনে দিয়ে তা’কে অপরূপ করে’ তোলা প্রেমের পক্ষে অনাবশ্বক I অভাবকে অসম্পূর্ণতাকে প্রেম কামনা করে, নইলে তার নিজের সম্পূর্ণত সফল হবে কিসে? দেবতার মনের ভাব ঠিকমত জানি বলে’ অভিমান রাথিনে কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কাৰ্ত্তিকের চেয়ে গণেশের পরে দুর্গার স্নেহ বেশি । এমন কি লম্বোদরের অতি অযোগ্য ক্ষুদ্র বাহনটার পরে কাৰ্ত্তিকের খোষ-পোষাকী ময়ূর লোভদৃষ্টি দেয় বলে’ তা’র পেখমের অপরূপ সৌন্দৰ্য্য সত্বেও তার উপরে তিনি বিরক্ত ; ঐ দীনাত্মা ইদুরটা যখন তার ভাণ্ডারে ঢুকে তার ভাড়গুলোর গায়ে সিধ কাটতে থাকে তখন হেসে তিনি তা’কে ক্ষমা করেন। শাস্ত্রনীতিজ্ঞ পুরুষবর নন্দী বলে, “মা, তুমি ওকে শাসন কর না, ও বড় প্রশ্রয় পাচ্চে ” দেবী স্নিগ্ধকণ্ঠে বলেন, ”আহ, চুরি করে খাওয়াই যে ওর স্বধৰ্ম্ম, তা ওর দোষ কি ! ও যে চোরের দাত নিয়েই জন্মেচে, সে কি বৃথা হবে ?” বাক্যের অপূর্ণতাকে সঙ্গীত যেমন আপন রসে পূর্ণ করে তোলে, প্রেম তেমনি স্থযোগ্যতার অপেক্ষা করে না, অযোগ্যতার ফাকের মধ্যে সে নিজেকে ঢেলে দেবার স্বযোগ পায় । মেয়েদের স্বষ্টির আলো যেমন এই প্রেম, তেমনি পুরুষের স্বষ্টির আলো কল্পনাবৃত্তি। পুরুষের চিত্ত আপন ধ্যানের দৃষ্টি দিয়ে দেখে, আপন ধ্যানের শক্তি দিয়ে গড়ে’ CŞto “We are the dreamers of dreams.” এ কথা পুরুষের কথা । পুরুষের ধ্যানই মানুষের ইতিহাসে নানা কীৰ্ত্তির মধ্যে নিরস্তর রূপ-পরিগ্রহ করচে। এই ধ্যান সমগ্রকে দেখতে চায় বলেই বিশেষের অতিবাহুল্যকে বর্জন করে ;–ষে-সমস্ত বাজে খুঁটিনাটি নিয়ে বিশেষ,সেইগুলো সমগ্রতার পথে বাধার মত জমে ওঠে। নারীর স্বষ্টি ঘরে, এই জন্তে সব কিছুকেই সে যত্ন করে জমিয়ে রাখতে পারে ; তার ধৈর্য্য বেশি, কেননা তার ধারণার জায়গাটা বড়। পুরুষের স্বষ্টি পথে পথে, এই জন্তে সব-কিছুর ভার লাঘব করে দিয়ে সমগ্রকে সে পেতে ও রাখতে চায়। এই সমগ্রের তৃষ্ণ, এই সমগ্রের দৃষ্টি নিৰ্ম্মম পুরুষের কত শত কীত্তিকে বহুব্যয়, বহুত্যাগ, বহুপীড়নের উপর স্থাপিত করেচে। পুরুষ অমিতবায়ী, সে দুঃসাহসিক লোকসানের ভিতর দিয়ে লাভ করতে কুষ্ঠিত হয় না। কারণ, তার ধ্যান সমস্ত লোকসানকে পেরিয়ে সমগ্র লাভটাকে স্বম্পষ্ট দেখে,—ছোট ছোট ক্ষতি তার কাছে নগণ্য হ’য়ে যায়। পুরুষের কল্পনাবৃত্তির সাহস এত অত্যন্ত বেশি, তার কারণ, স্থিতির ক্ষেত্রে স্থির হয়ে বসে বিচিত্রের সহস্র খুঁটিনাটিকে মমত্বের অঁাকড়ি দিয়ে জড়িয়ে ধরবার দীর্ঘ সময় তার কখনো ছিল না । এই জন্যে স্বষ্টির প্রয়োজনে প্রলয় করতে তার দ্বিধা নেই। মোট কথা, বাস্তবের মধ্যে যেসব বিশেষের বাহুল্য আছে তাকে বাদ দিয়ে পুরুষ একের সম্পূর্ণতা খোজে। এই জন্তেই অধ্যাত্মরাজ্যে পুরুষেরই তপস্তা, এই জন্যে সন্যাসের সাধনায় এত পুরুষের এত আগ্রহ। এবং এই