পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] জন্তেই ভাবরাজ্যে পুরুষের স্বষ্টি এত বেশি উৎকর্ষ এবং জ্ঞানরাজ্যে এত বেশি সম্পদ লাভ করেচে। পুরুষের এই সমগ্রতার পিপাসা তার প্রেমেও প্রকাশ পায় । সে যখন কোনো মেয়েকে ভালোবাসে তখন তা’কে একটি সম্পূর্ণ অখণ্ডতায় দেখতে চায় আপনার চিত্তের দৃষ্টি দিয়ে, ড্রাবের দৃষ্টি দিয়ে। পুরুষের কাব্যে বারবার তার পরিচয় পাওয়া যায়। শেলির এপিসিকীডিয়ন পড়ে’ দেখ । মেয়ের একথা জানে। পুরুষের এই প্রার্থনা মেয়েদের বিশেষ করে "স্বষ্টি করতে থাকে। কেননা প্রার্থনার বেগ প্রার্থনাব তাপ মানুষের সংসারে স্বাক্টর একটা প্রধান শক্তি। আমরা কি চাইব সেটা যদি ঠিকমত-ধরতে পারি তা হ’লে আমরা কি পাব সেটা নিয়ে ভাবতে হয় না। পুরুষেরা একরকম করে চেয়ে চেয়ে মেয়েদের একরকম করে’ গড়ে তুলেচে। মেয়েরা আপনার জীবনে এত জায়গায় এত পর্দা খাটায় এই জন্তে ; আপনার থেকে সে কত কি বাদ দিয়ে চলে। আমরা বলি লজ্জা স্ত্রীলোকের ভূষণ । তার মানে, লজ্জা হচ্চে সেই বৃত্তি যাতে করে মেয়েরা আপনার বাস্তবের বাহুল্যকে সরিয়ে রাখে ; মেয়ের রাজ্যে এই জন্যে মস্ত একটা অগোচরতার ব্যবস্থা আছে। সে আপনার এতখানি বাকি রেখেচে যা পুরুষ আপনার মন দিয়ে পুরিয়ে নিতে পারে। সে আপনার খাওয়া-শোওয়া, চাল-চলন, বাসনা-সাধনা সমস্ত থেকেই অতিবাস্তবের প্রত্যক্ষতা এতটা পরিমাণে ঢাকা দেয় যাতে পুরুষের ভাবের মধ্যে তার ছবি সম্পূর্ণ হ’য়ে উঠতে বাধা না পায় । * মেয়েদের সঙ্গে পুরুষের ব্যবহারে সম্পূর্ণ এর উণ্টো দিক্‌টাও দেখা যায়। পুরুষ কখনো কখনো এমন কাও করে যেন নারীর মধ্যে অনিৰ্ব্বচনীয়তার কোনো আভাস নেই, যেন তার মাটির প্রদীপে কোনো আলোই জলেনি ; তখন লুব্ধ দাত দিয়ে তা’কে সে আখের মত চিবিয়ে আবর্জনার মধ্যে ফেলে’ দেয়। সাত্ত্বিকের ঠিক উণ্টেপিঠেই থাকে তামসিক, পূর্ণিমারি অন্য পারে অমাবস্তা। রাস্তার এ দিকূটাতে যে সত্য থাকে ঠিক তার সামনের দিকেই তার বিপরীতের বাস। ফেউ সাক্ষ্য দেয় বাঘেরই অস্তিত্বের । সেই একই কারণে, মেয়ে সংসার পশ্চিমযাত্রীর ডায়ারি ২৯৭ স্থিতির লক্ষ্মী ; আবার সংসার ছারখার করবার প্রলয়ঙ্করীও তার মত কেউ নেই। যা হোক, এটা দেখা যাচ্চে, সৰ্ব্বত্রই সৰ্ব্বকালেই মেয়ে নিজের চারদিকেই একটা বিচিত্র চিত্ৰখচিত বেড়ার দূরত্ব তৈরি করে রেখেচে । দুর্গমকে পার হবার জন্যে পুরুষের যে স্বাভাবিক অধ্যবসায় আছে, সেইটেকে যতটা পারে সে জাগন্ধক করে রাখে। পড়ে'-পাওয়া জিনিষ মূল্যবান হ’লেও তাতে পুরুষের তৃপ্তি নেই ; যাকে সে জয় করে’ পায় তা’কেই সে যথার্থ পায় বলে’ জানে ; কেননা জয় করে’ পাওয়া হচ্চে মন দিয়ে পাওয়া । এই জন্যে অনেক ছল-যুদ্ধের আয়োজনে মেয়েদের সময় কাটে। নীতিনিপুণ বলে’e বসবে, এই মায়া ত ভালো নয়। পুরুষ নিজেই চিরকাল ধরে দাবী করলে এই মায়াকে, এই মায়াস্থষ্টির বড় বড় উপকরণ সে জুগিয়ে দিলে নিজের কল্পরাজ্য থেকে, কবিরা চিত্রীরা মিলে’ নারীর চারদিকে ংবেরঙের মায়া-মণ্ডল আপন ইচ্ছায় বানিয়ে দিলে ; অবশেষে এই মায়ার কাছে পরাতবশক্ষায় ত্রস্ত সাধুসঙ্গন মেয়ে জাতকে মায়াবিনী বলে’ গাল দিতে লেগেছে ; তার মায়াদুর্গের উপরে বহুকাল থেকে তা’রা নীরস শ্লোকের শতঘ্নী বর্ষণ করচে, কোথাও দাগ পড়চে না । যা’র বাস্তবের উপাসক তা’রা অনেকে বলে, মেয়ের অবাস্তবের কুয়াশা দিয়ে নিজেকে ঢেকে ফেলেচে—এ সমস্তর ভিতর থেকে একেবারে খাটি সত্য মেয়েটিকে উদ্ধার করা চাই । তাদের মতে সাহিত্যে শিল্পে সব জায়গাতেই এই অবাস্তব মেয়ের ভূতের উপদ্ৰব অত্যন্ত বেশি। এরা মনে করে মায়া থেকে ছাড়িয়ে নিলেই বাস্তব সত্যকে পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তব সত্য বলে’ কোনো জিনিষ কি স্বষ্টিতে আছে ? সে সত্য যদি বা থাকে তবে এমন সম্পূর্ণ নিৰ্ব্বিকার মন কোথায় পাওয়া যাবে যার মধ্যে তার বিশুদ্ধ প্রতিবিম্ব পড়তে পারে ? মায়াই ত স্বষ্টি ; সেই স্বষ্টিকেই যদি অবাস্তব বল ত হ’লে অনাস্থষ্টি আছে কোন চুলোয়, তার নাগাল পাবে কোন পণ্ডিত ? - নানা ছলাকলায়, হাবেভাবে, সাজেসজ্জায় নারী নিজের চারদিকে যে একটি রঙীন রহস্ত স্বষ্টি করে’ তুলেচে সেই