পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] কিন্তু পুরুষের পক্ষে মেয়ে আপনার সঙ্গে সঙ্গেই একটা দূরত্ব নিয়ে আসে ; তার মধ্যে খানিকট পরিমাণে নিষেধ আছে, ঢাকা আছে। ফোটোগ্রাফের মধ্যে সব আছে,কিন্তু আর্টিষ্টের ছবির মধ্যে সব নেই, এই জন্যে তা’তে যে ফাক থাকে সেইখানে রসজ্ঞের মন কাজ করতে পারে। সেইরকমের ফাকাটুকু মেয়েদের একটা সম্পদ, সেটা সম্পূর্ণ লুপ্ত করতে নেই। বিয়াত্রীচে দান্তের কল্পনাকে যেখানে তরঙ্গিত করে’ তুলেচে সেখানে বস্তুত একটি অসীম বিরহ। দান্তের হৃদয় আপনার পূর্ণচন্দ্রকে পেয়েছিল বিচ্ছেদের দুর আকাশে। চণ্ডীদাসের সঙ্গে রজকিনী রামীর হয়ত বাইরের বিচ্ছেদ ছিল না, কিন্তু কবি যেখানে তা’কে ডেকে বলচে– তুমি বেদবাদিনী, হরের ঘরণী তুমি সে নয়নের তারা,— সেখানে রজকিনী রামী কোন দূরে চলে গেছে তার ঠিক নেই। হোক না সে~নয়নের তারা তবুও যে নারী বেদবাদিনী হরের ঘরণী সে আছে বিরহলোকে । সেখানে তার সঙ্গ নেই, ভাব আছে। নারীর প্রেমে মিলনের গান বাজে, পুরুষের প্রেমে বিচ্ছেদের বেদন । ২রা অক্টোবর আমি বলছিলুম, মেয়েরা পর্দানসীন। যে কৃত্রিম পর্দা দিয়ে কৃপণ পুরুষ তাদের অদৃশ্য করে লুকিয়ে রাখে, আমি সেই বৰ্ব্বর পর্দাটার কথা বলছিনে ; নিজেকে স্বসমাপ্তভাবে প্রকাশ করবার জন্যেই তা’রা যেসব আবরণকে সহজপটুত্বে আভরণ করে তুলেচে, আমি তার কথাই বলুচি। এই যে নিজের দেহকে, গৃহকে, আচরণকে, মনকে নানা বর্ণ দিয়ে ভঙ্গী দিয়ে সংযম দিয়ে অনুষ্ঠান দিয়ে নিজের বিচিত্র একটি বেষ্টনকে তারা মুসজ্জিত করতে পেরেচে, এর কারণ, তা’রা স্থিতির অবকাশ পেয়েচে । স্থিতির মূল্যই হচ্চে তার আবরণের ঐশ্বৰ্য্যে, তার চারিদিকের দাক্ষিণ্যে, তা’র আভাসে, ব্যঞ্জনায়, তার হাতে যে সময় আছে সেই সময়টার মনোহর বৈচিত্র্যে । সবুরে মেওয়া ফলে, কেননা, মেওয়া যে প্রাণের জিনিষ, পশ্চিমযাত্রীর ডায়ারি ఇSసి যায় না। সেই বহুমূল্য সবুরটা হচ্চে স্থিতির ঘরের ি এই সবুরটাকে যদি সরস এবং সফল করতে না পারা গেল তবে তার মত আপদ আর নেই। মরুভূমি অনাবৃত, তার অবকাশের অভাব নেই অথচ সেই অবকাশ রিক্ত, এই কঠিন নগ্নতা পীড়া দেয়। কিন্তু যেখানে পোড়ো জমি পোড়ে হ’য়ে নেই, সেখানে সে ফসলে ঢাকা, ফুলে বিচিত্র ; সেখানে তার সবুজ ওড়না বাতাসে দুলে’ উঠচে। যে পথিক পথে চলে সেখানেই সে পায় তার তৃষ্ণার জল, ক্ষুধার অন্ন, তার আরামের ছায়, ক্লাস্তির শুশ্ৰুষা । সেখানকার স্থিতির পূর্ণতাই তার গতির সহায়, অবারিত মরুভূমি সবচেয়ে বাধা । নারী স্বভাবতই যে স্থিতি পেয়েচে, বসে’ বসে’ ধীরে ধীরে সেই স্থিতিকে রাঙিয়ে তুলে আপন হৃদয়রসে রসিয়ে নিয়ে তাই দিয়ে আপন বুকের র্কাচলি আপন মুখের ঘোমটা বানিয়েচে । এই ঢাকাতেই সে আপনার ঐশ্বৰ্য্য প্রকাশ করেচে, পুষ্পপল্লবের আবরণেই যেমন লতার ঐশ্বৰ্য্য। কিন্তু হঠাৎ আজকাল পাশ্চাত্য সমাজে শুনতে পাচ্চি, নারী বলচে, “আমি মায়ার আবরণ রাখব না, পুরুষের সঙ্গে ব্যবধান ঘুচিয়ে দেব। আমি হব বিজ্ঞানের চাদ ; তার চারদিকে বায়ুমণ্ডল নেই, মেঘ নেই, রঙ নেই, কোমল শু্যামলের চঞ্চল বিচিত্রতা নেই, তার কালো কালো ক্ষতগুলোর উপরে পদ্ধা নেই, আমিও হব তেমনি। এতদিন যাকে বলে এসেচি লজ্জা, যাকে বলে’ এসেচিত্র, আজ তাতে আমার পরাভব ঘটচে, সেসব বাধা বর্জন করব । পুরুষের চালে তার সমান তালে পা ফেলে তার সমান রাস্তায় চলব।’ এমন কথা যে একদল স্ত্রীলোকের মুখ দিয়ে বের হ’ল এটা সম্ভব হ’ল কি করে’ ? এতে বোঝা যায় পুরুষের প্রকৃতির মধ্যে একটা পরিবর্তন এসেচে। মেয়েকে সে চাচ্চে না । এমন নয় যে সে হঠাৎ সন্ন্যাসী হ’য়ে উঠেচে,—ঠিক তার উণ্টো ; সে হয়েচে বিষয়ী, মেয়েকে সে কড়ায় গগুrয় বুঝে নিতে চায়, কড়ায় গণ্ডায় যার হিসাব মেলে না তা’কে সে মনে করে বাজে জিনিষ, তা’কে সে মনে করে ঠকা । সে বলে, আমি চোখ খুলে সব স্পষ্ট করে তন্ন তন্ন করে দেখব ; অর্থাৎ কলের ফরমাসে তা’কে তাড়াহুড়ো করে’ গড়ে তোলা ধ্যানের দেখায় যা মনকে ভরিয়ে তোলে সেটাকে সে জানে