পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] পশ্চিমযাত্রীর ডায়ারি ё,e} নিজের মধ্যে অপরিচিতের পরিচয় পেতে থাকে । আৰ্য্যাবর্ভের বুকের উপর দিয়ে যে গঙ্গা চলে গেছে, সেই ত ভারতবর্ষের অপরিচিত পূর্বের সঙ্গে অপরিচিত পশ্চিমকে সহজেই মুখোমুখি করে দিয়েছিল। তেমনি যে মানুষের মনের মাঝখান দিয়ে চলতি নদী থাকে সে মানুষ আপনার কাছ থেকে আপনি শিক্ষা করবার স্বযোগ পায়। আমার মনে-সেই নদীটা আছে। তারই ডাকে ছেলেবেলায় আমি ইস্কুল পালিয়েছিলুম। যেসব জ্ঞান শিখে’ শিখতে হয় তার বিস্তর অভাব রয়ে গেল কিন্তু অন্যদিকে ক্ষতিপূরণ হয়েচে। সে জন্তে আমার মনের ভিতরকার ভাগীরথীকে আমি প্রণাম করি । বাইরে ডেক-এ এসে দাড়ালুম। তখন স্বৰ্য অরক্ষণ আগেই অস্ত গেছে। শাস্ত সমুদ্র, মৃদ্ধ বাতাসটা যেন মুখচোর। জল ঝিলমিল করচে। পশ্চিম দিকপ্রান্তে ছএকটা মেঘের টুকরো সোনার ধারায় অভিষিক্ত হ’য়ে স্থির হ’য়ে পডে' আছে। আর একটু উপরে তৃতীয়ার চাদের কণা। সেখানকার আকাশে তখনো সন্ধ্যার ঘোর লাগেনি—দিনের সভা যদিও ভেঙে গেছে, তবু সেখানে তার সাদা জাজিমখানা পাতা । চাদটাকে দেখে’ মনে হচ্চে যেন অসময়ে অজায়গায় এসে পড়েছে ৷ যেন একাদশের রাজপুত্র আরেক রাজার দেশে হঠাৎ উপস্থিত, যথোচিত অভ্যর্থনার আয়োজন হয়নি,—তার নিজের অহচর তারাগুলো পিছিয়ে পড়েচে । এদিকে ঠিক সেই সময়ে পশ্চিম আকাশের সমস্ত সোনার মশাল, সমস্ত সমারোহ স্বর্ঘ্যের অস্তযাত্রার আয়োজনে ব্যস্ত, ঐ চাদটুকুকে কেউ দেখতেই পাচ্চে না । o এই জনশূন্য সমুদ্র ও আকাশের সঙ্গমস্থলে পশ্চিম দিগন্তে একখানি ছবি দেখলুম। অল্প কয়েকটি রেখা, অল্প কিছু উপকরণ ; আকাশ এবং সমুদ্রের নীলের ভিতর দিয়ে অবসান দিনের শেষ আলো যেন তার শেষ কথাটি কোনো একটা জায়গায় রেখে যাবার জন্যে ব্যাকুল হ’য়ে বেরিয়ে আসতে চায়,কিন্তু উদাস শূন্তের মধ্যে ধরে রাখবার জায়গা কোথাও না পেয়ে মান হ’য়ে পড়চে,—এই ভাবটিই যেন সেই ছবিটির ভাব। ডেকৃ-এর উপর স্তন্ধ দাড়িয়ে শাস্ত একটি গভীরতার মধ্যে তলিয়ে গিয়ে আমি যা দেখলুম ভt'কে আমি বিশেষ অর্থেই ছবি বলচি, ষাকে বলে দৃগু, এ তা নয় । অর্থাৎ এর মধ্যে যা কিছুর সমাবেশ হয়েচে কেউ যেন সেগুলিকে বিশেষভাবে বেছে নিয়ে পরস্পরকে মিলিয়ে একটি সম্পূর্ণতার মধ্যে সাজিয়ে ধরেচে। এমন একটি সরল গভীর মহৎ সম্পূর্ণতার ছবি কলকাতার আকাশে একমুহূৰ্ত্তে এমন সমগ্ৰ হ’য়ে আমার কাছে হয়ত দেখা দিত না । এখানে চারদিকের এই বিপুল রিক্ততার মাঝখানে এই ছবিটি এমন একান্ত এক হ’য়ে উঠে আমার কাছে প্রকাশ পেলে । একে সম্পূর্ণ করে” দেখবার জন্তে এতবড় আকাশ এবং এত গভীর শুন্ধতার দরকার ছিল । জাপানের কথা আমার মনে পড়ে। একেবারে কোনো আসবাব নেই। একটি দেয়ালে একখানি ছবি ঝুলচে। ঐ ছবি আমার সমস্ত চোখ এক অধিকার করে ; চারিপাশে কোথাও চিত্তবিক্ষেপ করবার মত কিছুই নেই। রিক্ততার আকাশে তার সমস্ত অর্থটি জ্যোভিৰ্ম্ময় হ’য়ে প্রকাশ পায় । ঘরে যদি মান জিনিষ ভিড় করত, তবে তাদের মধ্যে এই ছবি থাকৃত একটি আসবাবমাত্ৰ হ’য়ে, তার ছবির মাহাত্ম্য স্নান হ’ত, সে আপনার সব কথা বলতে পাবৃত না । কাব্য সঙ্গীত প্রভৃতি অন্ত সমস্ত রসস্থষ্টিও এইরকম বস্তুবাহুল্যবিরল রিক্ততার অপেক্ষা রাখে । তাদের চারিদিকে যদি অবকাশ না থাকে তা হ’লে সম্পূর্ণ মূৰ্ত্তিতে তাদের দেখা যায় না। আজকালকার দিনে সেই অবকাশ নেই, তাই এখনকার লোকে সাহিত্য বা কলাস্থষ্টির সম্পূর্ণতা থেকে বঞ্চিত। তা’র রস চায় না, মদ চায় ; আনন্দ চায় না, আমোদ চায়। চিত্তের জাগরণটা তাদের কাছে শূন্ত, তা’র চায় চমক লাগা । ভিড়ের ঠেলাঠেলির মধ্যে অঙ্কমনস্কের মন যদি কাব্যকে গানকে পেতে হয় তা হ’লে তার খুব আড়ম্বরের ঘটা করা দরকার । কিন্তু সে আড়ম্বরে শ্রোতার কানটাকেই পাওয়া যায় মাত্র, ভিতরের রসের কথাটা আরো বেশি করে ঢাকাই পড়ে। কারণ, সরলতা স্বচ্ছতা আর্টের যথার্থ আভরণ। যেখানে কোলাহল ঘরের মধ্যে