পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లి)8 ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে যেতেই একজন লোকের সঙ্গে হাত । দুটাে লতার মতে জড়িয়ে গেল। ঢেউটা সরে যেতেই, দেখলুম, একটি তরুণ মানবের সঙ্গে স্রস্ত-বাস দেহখানা আলিঙ্গনের মতন হ’য়েই জড়িয়ে আছে। একান্ত অসহায় আমাকে তার সবল বাহুবন্ধের বেষ্টন হ’তে মুক্তি দিয়ে যুবক বললেন–‘সমুদ্র আঙ্গ ভারি ক্ষেপে উঠেছে, সাবধান ? একটু কুণ্ঠ-মিশ্রিত অবজ্ঞার হাস্তে তা’কে পুরস্কৃত করে প্রকাগু একটা ঢেউকে গ্রহণ করবার জন্যে আবার কখে দাড়ালুম। সমুত্রের দুঃসহ আনন্দ-অত্যাচার, তার নিষ্ঠুর স্নেহের উন্মাদনা আমার সারা দেহে নিৰ্দ্দয় আঘাত করে গেল । তার আলিঙ্গনের ঘাত-প্রতিঘাতে আমার দুৰ্ব্বল দেহু কখনো সামনে কখনো পেছনে ঘড়ির পেণ্ডুলামের মতন ছলতে লাগল। চোখ দুটো দারুণ ব্যথায় বিষিয়ে উঠল । সমস্ত শিরাউপশিরার ভেতর দিয়ে একটা ক্লাস্তির অবসাদ অনুভব করতে লাগলুম। তবু সমুদ্রের বুকের মায়া আমাকে সাপের মতন করে’ই জড়িয়ে ধরে রইল। মরুপথে যারা চলে তাদের চোখের সম্মুখে মরীচিকা যে ছায়াশীতল উদ্যানের রচনা করে, তার অস্তিত্ব নেই জেনেও যেমন পিপাসাতুর মরু-যাত্রী তার পথ হ’তে আপনাকে ফেরাতে পারে না, ক্লাস্তি তাদের যত বেড়ে যায়, গতি তাদের ততই দ্রুততর হয়ে ওঠে, ঠিক তেমনি করে সমুদ্রের মায়া আমার ভেতর একটা মরীচিকার স্বষ্টি করে। বসল। সে মরীচিকার মোহ কাটিয়ে ফিরে আসবার আগেই একটা ফিরে-চলা ঢেউ আমাকে তার নিরুদ্দেশ যাত্রার সঙ্গী করে’ বুকের ভেতর জড়িয়ে নিলে। ক্ষুব্ধ ক্ষুণ্ণ ক্ষুধাৰ্ত্ত দরিয়ার মুখের অবগুণ্ঠন হঠাৎ খসে পড়ল। তীরের দিকে তাকিয়ে শঙ্কা-বিহ্বল-কণ্ঠে আমি চীৎকার করে’ উঠলুম। সমুদ্রের মায়া তখন টুটে গেছে, ঘন নীল নিতল জলের অন্ধকার আমার চোখের সামনে একটা বিত্র কালে যবনিক মেলে’ ধরেছে মৃত্যুর ছায়ার মতন, ঢেউগুলো সাপের মতন বেঁকে-বেঁকে চলেছে ফণা তুলে-তুলে । সেই বীভৎস, বিবর্ণ সমুদ্রের চেহারার পানে চেয়ে-চেয়ে আমার চোখের সাম্নের আলো নিবে যাচ্ছে। হঠাৎ বুকের প্রবাসী—পৌষ, రిరి লোণা জলের ঝাপটায় 鳴 [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড ওপর কার ছুটি বলিষ্ঠ বাহুর স্পর্শ পেলুম। তাকিয়ে দে সেই তরুণ যুবকটি। ক্রুদ্ধ কঠিন মুখখান তার আম বুকের কাছে ঝুকে পড়েছে, দৃষ্টির ভেতর তার কঠে। তিরস্কার পুঞ্জীভূত। বিরক্তিতে তার মুখ ভারী হ' উঠেছে, কিন্তু তবু সে প্রাণপণে লড়ছে সমুদ্রের সঙ্গে সমুদ্রের প্রহার যত কঠিন হয়ে উঠছে আমাকে ছিনি নেবার জন্যে তার স্পর্শের দৃঢ়তা ততই নিবিড় ক:ে অনুভব করতে লাগলুম। to 邻 জীবন-মরণের এম্বন্দ্ব মন্দ লাগছে না। অপরিচি বন্ধুর স্পর্শ এসে লাগছে দেহের সঙ্গে, তার উষ্ণ নিখা আমার দেহের রক্তকণাগুলিকে দোলা দিচ্ছে, লজ্জা নেই ভয় নেই! অজানা পথ-যাত্রায় সঙ্গী—মৃত্যু-বাসরে অপরিচিত প্রিয়তম ! মনে হচ্ছে মরণের আগের মুহূর্তে এ-স্পর্শকে সার্থী করে বেশ চলে যাওয়া যায়—মৃত্যুর যে পথটায় এক পা বাড়ানো ধায় না, দুজনে মিলে’ সে-পথ পাড়ি দেওয়া মোটেই কঠিন নয়! আমার দেহ তার বাহুর তলে একেবারে এলিয়ে দিলুম।. 署 薔 彎 আমাকে নিয়ে সে যখন তীরে ফিরে এল তখন তার অবসন্ন দেহ একেবারে এলিয়ে পড়েছে । হাপরের হাওয়ার মতন বুকের ভেতর প্রাণটা যে তার দুপ-দাপ করছে, বাইরে থেকে তার শব্ব শুনে আমার চিত্ততল বেদনায় ব্যথিয়ে উঠল—কিন্তু তার বরফের মতন ঠাণ্ড চাউনির দিকে তাকিয়ে মমতা দূরে যাক, একটা কৃতজ্ঞতার কথাও ব্যক্ত করতে পাৰ্বলুম না । কেবল তাকে বলে এলুম— সমুদ্রের কোল ঘেষে ঐযে লাল রংএর বাড়ীটা আকাশের পানে মাথা তুলেছে—ঐটেই আমাদের...কিন্তু কথাটা শেষ করতে পাৰ্বলুম না—আমারও শরীর এলিয়ে আসছে! (w) ১৬ই আশ্বিন—১৩২৮ ভোরের বেড়ানো শেষ করে’ চিঠি নিতে পোষ্ট আফিসে এসে দাড়িয়েছি, মেমসাহেব পোষ্টমাষ্টার আমার নামের চিঠিখানি হাতে দিয়ে একটু মৃদ্ধ হাসলেন। ছ'দিন আগে এই পোষ্টমাষ্টারনীর সঙ্গে আমার আলাপ হ’য়ে গেছে।