পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] চিঠিখানি নিয়ে উঠে-যাচ্ছি, তিনি কৃত্ৰিম অভিমানের স্বরে *UWA-You should have thanked me. wift তাকে ধন্যবাদ দিয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে পড়লুম। চিঠিখানার চেহারায় এবং তার ভেতকার গন্ধে একটু বাহুল্য ছিল। মেমসাহেব হয় ত মনে করেছেন, চিঠিখানা আমার প্রিয়তমের চিঠি। বাইরে এসে খুলে দেখি–প্রিয়তমেরই বটে। চিঠি লিখেছে পরেশ–একেবারে প্রেমের নিবেদনের স্ততিগানে ভরা। সে লিখেছে—আমার পায়ের তলে তার মুগ্ধ হৃদয়টি সে একান্তভাবেই উৎসর্গ করে’ দিয়েছে, তার হৃদয়-শতদল বিকশিত হয়ে উঠেছে, স্থধ্যের মতন আমারি মুখের পানে চেয়ে । আমি যদি গ্রহণ না করি, তার অমূল্য জীবন একেবারে ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমি কবে ফিরব ? আমারি পথের পানে তার সমস্ত হৃদয় পড়ে রয়েছে একটা দৃষ্টির মতন হ’য়ে—ইত্যাদি— ইত্যাদি । 婚 এমুনি-ধরণের চিঠি এ-জীবনে আরো কত পেয়েছি— হয়ত আরো অনেক পেতে হবে । পুরুষের এই ক্যাঙলপন—এ আমার মোটেই ভালো লাগে না। পুরুষের ঘ। বৈশিষ্ট্য এদের সেই জিনিষটারই অভাব রয়ে' গেছে— এদের মনের দৃঢ়তা নেই। এর প্রথম যে-নারীকে চোখ মেলে’ দেখে, তারি সঙ্গে প্রেমে পড়ে যায়। তার পর দুদিন পেরুতে না পেরুতেই মোহ যখন টুটে যায় তখন এই মাথার মণিই হয়ে ওঠে, বুকের ভারী বোঝার মতন। আমার চোখের সাম্ণে এদের লালসার মদ রক্তের মতন রাঙা হয়ে অনেকবার পান-পাত্র পূর্ণ করে উপচে পড়েছে। অনেকবার তা হাতে করে তুলে ধরেছি, কিন্তু অধর গলিয়ে তা ভেতরে গ্রহণ করতে পারিনি । এত বড়-বড় পুরুষগুলো -নারীর রূপের সামনে ‘ষে কেন ডিনামাইটে ধবসে-পড়া পাহাড়ের মতন গুড়িয়ে যায় আমার কাছে তা ভারি আশ্চৰ্য্য বলে’ भ८न श्ध । পরেশকে নিয়ে খেলাটা হয়ত একটু বেশী হয়ে পড়ছে —আর নয়। যে পতঙ্গ স্বেচ্ছায় আগুনের ভেতর ঝাপিয়ে পড়তে চায় তা’কে পুড়িয়ে আগুনের কোনো গৌরব নেই। তাকে লিখে দিচ্ছি—খেলার যবনিকা • পুরীর ডায়েরি 6כסי এইখানে পড়ে গেল—সে যেন আমাকে আর চিঠি না লেখে ! দূরে সমুদ্রের সাথে আকাশ মিশে গেছে—মহামিলনের অন্তরালে। তার পেছনে আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না । সেই মিলনের বাৰ্ত্ত তরঙ্গের তালে-তালে দুলছে, তার সঙ্গীত তরঙ্গের ভাষায় ছন্দিত হ’য়ে বিশ্বের বেলার ওপর লুটিয়ে পড়ছে। অসীম আকাশ যেমন অশাস্ত সমুদ্রকে গ্রহণ করেছে তেমনি একজনকে পাইনে যে পরেশ নরেশ নয়—যে এই দুৰ্ব্বিনীত নারী-হৃদয়কে আপনার প্রেমের গভীরতার দ্বারাই জয় করে’ নিতে পারে ? কে জানে কেন, প্রাণে আজ, জয় করবার নয়, পরাজিত হবার আকাঙ্ক্ষাটাই প্রবল হ’ধে উঠেছে। (8) ১৭ই আশ্বিন-১৩২৮ জ্যোৎস্নার সমুদ্রেও আজ বান ডেকেছে। আকাশ ছাপিয়ে বাতাসের বুক ভেদ করে অসংখ্য অক্ষৌহিণী তার পৃথিবী বিজয়ের অভিযানে মেতে উঠেছে । জ্যোংস্কার আলোকে ঢেউগুলো তার চকুচকু করছে । তীরের ওপর কুন্দফুলের মতন সাদা ফেনার আস্তরণ " সমুদ্র বুঝি চাদকে ভালোবাসে। তাই চাদের জন্য সমুদ্রের ক্ষ্যাপামির অন্ত নেই। চাদের পানে সমুদ্রের বাহু কি আকুল আগ্রহে উচ্ছসিত হ’য়ে ওঠে—কি আকুল আৰ্ত্তনাদ তার বুকে ! দূরের দুপ্রাপ্যের জন্তে এই আকাজক্ষা—এই হাহাকার, এ-মানুষের চিরন্তন দুৰ্ভাগ্য! কেবল মনে পড়ছে সেদিনের সেই মানের কথা— আর সেই পাথরের মতন কঠিন অথচ করুণায় উজ্জল সেই মুখখানি। সমস্তটা দুপুর তারি প্রতীক্ষায় কেটে গেছে, সমস্তটা সন্ধ্যাও তারি প্রতীক্ষায় কেটে গেল । সে আসবে না জেনেও প্রতীক্ষার নেশাটা কাটিয়ে উঠতে পারছিনে। যে উপেক্ষার অপমানের সঙ্গে সে আমাকে প্রাণটা ভিক্ষার বস্তুর মতন ফিরিয়ে দিয়ে গেল, সে ভিক্ষার সঙ্গে আমার কোনো কালের পরিচয় নেই। এতকাল আমি সকলকে অনুগ্রহ বিলিয়ে এসেছি, যাকে একটুখানি হাস্ত, দুটো মিষ্টি কথা, এক ঝলক বিহবল চাউনি বিতরণ