পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●>\b করেছি, সেই আপনাকে সার্থক মনে করেছে—আর এ তার দুটো বাহুর ভেতর আমার বেপমান বিহুবলততুলতাখানি জড়িয়ে ধরেও কোনো স্পন্দন অনুভব করলে না ? তার মানা না-মানার তিরস্কার দুটো চোখের কঠিন দৃষ্টির ভেতর দিয়ে তীক্ষ্ণ তীরের মতই আমাকে বিদ্ধ করে’ গেল । এখনো সে চাউনির কথা আমি ভুলতে পারছিনে। মহাভারতের ভীষ্মকে কবির কল্পনার বস্ত মনে কর্তুম, এখন দেখছি মানুষের রক্ত-মাংসের দেহের ভেতরেও ভীষ্মের প্রাণ আছে। সমস্তটা সমুদ্র দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। সামনের খানিকটা বাদ দিয়ে পেছনের সবই জ্যোৎস্নার অস্পষ্ট আলোর মধ্যে হারিয়ে গেছে। জ্যোৎস্নার কুহেলিকা যে মায়া রচনা করেছে তা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকূলে । এই অস্পষ্ট অজানার ভেতর হারিয়ে যাওয়ার যে একটা অপরূপ মাধুর্ঘ্য আছে তা আমাকে মাতাল করে তুললে। বেরিয়ে পড়লুম প্রকৃতির সেই আধো আলো আধো অন্ধকারের অভিসারে । তীরে নেমে দেখলুম আরো অনেকে বেরিয়ে পড়েছে, আমারি মতন এই অজানার অভিসারে । দলে-দলে নর-নারী জ্যোৎস্নার অবগাহন করছে। বালক-বালিকাদের একটা দল হুল্লোড় করে আমার সামনে দিয়ে চলে গেল । তাদের পায়ে-পায়ে উৎক্ষিপ্ত ভেজা বালির খানিকট ছিটুকে এসে আমার গায়ে লাগল। ফিরে’ তাকিয়ে দেখি ঠিক আমার পেছনেই একটি কিশোরী একটি কিশোরের হাত ধরে চলেছে। কিশোরীর মুখের লজ্জার আভা সেই অস্পষ্ট আলোতেও রাঙা অরুণের রেখার মতন জলছে—সম্ভবতঃ এর সদ্য-পরিণীত । দুজনের মুখেই মিষ্টি হাসি। সেই মিষ্টি হাসিতে তাদের মুখ-দুখানি সদ্য-প্রস্ফুটিত গোলাপের কুঁড়ি বলে মনে হ’ল। একেবারে সমূত্রের ধারে বসে একটি যুবক বালি খুঁড়ে পিরামিড তৈরি করছে। ধে খেলা কেবল ছোট ছেলেমেয়েদেরই মানায় এই পরিণতবয়স্ক যুবকের পক্ষেও তা কিছুমাত্র অস্বাভাবিক বলে’ মনে হচ্ছে না। এই জ্যোৎস্নার মায়াকাঠির স্পর্শে তার মন বুঝি কুড়ি বছর আগের একটা বয়সে ফিরে” গেছে ! দূরে—অনেক দূরে একটা বঁাশী প্রবাসী—পৌষ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড বাজছে। স্বর ভালো করে বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু তা আহবান বাতাসকে মাতাল করে’ তুলেছে। আমার বুকের রক্তের তালে-তালে তার ধ্বনি ধ্বনিত হ’ীে উঠল। কোথায়—কত দূরে সে ? পৃথিবীর এই সীমানায় না চোখের দৃষ্টির পরপারে, যেখানে সমুদ্র ও জ্যোৎস্ন পরস্পরের ভেতর আপনাকে হারিয়ে ফেলেছে! পথ ক্রমেই জন-বিরল হ’য়ে উঠছে, বাস-বিরল দেহের ভেতর দিয়ে সমুদ্রের শীকর-ধোয়া ঠাণ্ড বাতাস একটা মৃদু বেপথুর স্বষ্টি করছে—কিন্তু বঁাশীর স্বরও ক্রমেই স্পষ্টতর হয়ে উঠছে । বশীি গাইছে—”সখি জাগো জাগো’ । কা’কে জাগাবার সাধনায়, কোন মৃত প্রিয়াকে প্রাণ দেবার জন্যে এ-যুগের ‘অবুফিয়াস বঁাশীর সুরে ঝঙ্কান তুলেছে আজ এই জ্যোৎস্না-ধোয়া উপকূলে ? ‘জাগো নবীন গৌরবে - জাগো বকুল-সৌরভো সমুদ্রের তরঙ্গ-দোলায় কি তার প্রিয়। ঘুমিয়ে আছে ? নীল শাড়ীর জ্যোৎস্না-জড়ানো আঁচল অই বঝি তার দুলছে ঢেউয়ের বুকে বুকে ? “আজি চঞ্চল এ নিশীথে জাগো ফান্ধন-গুণ-গীতে’ একটা প্রকাও ঢেউ তাঁর ছাড়িয়ে অনেকটা দূর এসে বেশ বড় একটা ঝিমুক আমার পায়ের ওপর ছুড়ে দিয়ে গেল । সমুদ্রের অতল শয়নে প্রবালের শষ্যায় ধে সাগরিক ঘুমিয়ে আছে, গানের তান তা’কেও আঘাত করে’ বুঝি জাগিয়ে দিয়েছে ; এই ঝিল্লুক বুঝি তারি ঝিল্পকের নৌকায় -অতল সাগর পাড়ি দেওয়ার নিশানা । • একটা সাদা মেঘের আড়ালে চাদ তলিয়ে গেল । অদূরে অস্পষ্ট ছায়ালোকে বাদকের মুখ দেখা যাচ্ছে কিন্তু চেনা যাচ্ছে না। এগিয়ে চললুম—আরো এগিয়ে ! একি এ ধে সেই তরুণ যুবক যার কথা সমস্তটা দুপুর মনে পড়েছে, যার স্থতি সমস্তটা সন্ধা ভরপুর করে’ রেখেছিল !