পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] z o হবিকাঠ জুগিয়েছে তাদের সঙ্গেই আমিও মৃত্যুর বিষাণ বাজিয়েছি । অলক রায়ের নাম হয়ত তোমারো অপরিচিত নয়। এখনো তার নামের হলিয়া পুলিশের থানায়-থানায় ঝোলানো আছে । আজো মনে পড়ছে আমার সেদিনের সেই প্রলয় নৃত্যের কথা । মাথার ওপরে খড়গ দুলছে, পেছন থেকে মৃত্যুর দূত ছুটে আসছে, আর সাম্নে এগিয়ে চলেছি আমরা নির্দয় উল্লাসে আত্মভোলার দল। টোটা ভর রিভলভার কখনো হয়ত আঙুলের ইঙ্গিতে অট্টহাস্যের আৰ্ত্তনাদে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠত, পর মুহূৰ্ত্তেই হয়ত আবার পরম নিশিন্তে ঘুমিয়ে পড়ত নিভৃত বুকের দোলার ওপরে। কত রাত যে আমাদের সেই নিরুদেশ যাত্রায় দিনের কৰ্ম্ম-কোলাহলে ভরে’ উঠেছে, আর কত দিন যে রাতের ক্লান্ত অবসাদে ডুবে’ গেছে, আজ, গুণেও তার ংখ্যা নির্ণয় করতে পারিনে। আমাদের তখনকার গতি ছিল উদ্ধার দীপ্তির মতন, তা কেবল দুগ্ধই কর্ত না ভীতিরও সঞ্চার করত। দেশের লোকের সেবা করতে গিয়ে আমরা দেশের লোকের পর হয়ে গিয়েছিলুম, আত্মীয়েরা আমাদের সহ করতে পারেনি, বন্ধুরা ভয়ে আমাদের পরিত্যাগ করেছিল। তবু আমাদের পণ টলেনি, মন দোলেনি। রক্তের স্রোতের ওপর দিয়ে ধ্বংসের পথে আমাদের তরী ভেসে চলেছিল। এ যে আমরা পেরেছিলুম তার কারণ, আমরা যারা দেশের সেই একান্ত দুদিনে বিপ্লবের দলে নাম লিখিয়েছিলুম দেশকে তারা সত্যসত্যই ভালোবাসতুম। সে ভালোবাসার গভীরতা তোমার সাম্নের ঐ সমুদ্ৰ হ’তে কিছুমাত্র কম নয়। তার ঢেউ আঘাতের পর আঘাতে আমাদের সহিষ্ণুতার সীমাকে লঙ্ঘন করেছিল, তাই কুল ছাপিয়ে উঠতে আমরা ইতস্ততঃ করিনি । আমাদের সে বন্যায় কে ডুবেছে কে ডোথেনি তার সন্ধান রাখবার অবসর ছিল না । কিন্তু সে দিনকার মেঘ কেটে যাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গেই আমরা আমাদের হিংসা ভুলেছি। অথচ যারা যথার্থ অপরাধী তারা তাদের হিংসার আগুন রাবণের পুরীর ডায়েরি চিতার মতন করে’ই জালিয়ে রেখেছে। কাউকেফাসিতে ঝুলিয়ে, কাউকে আন্দামানে অসভ্যদের অস্বাস্থ্যকর আবহাওয়ার ভেতর নির্বাসিত করে, কাউকে আবার কারা-প্রাচীরের আবেষ্টনের ভেতর আবদ্ধ রেপে তখন তার প্রতিশোধ ত নিয়েইছে, আজ যার সব ছেড়ে নিজের নির্বাসন নিজে বরণ করে নিয়েছে তাদেরো তারা সোয়াস্তি দিচ্ছে না। অনুসন্ধানের দুৰ্দ্ধাস্ত কুকুর এখনো তাদের পেছন-পেছন ঘুরছে। তিন দিন আগে আমি জানতে পেয়েছি, পুলিশ, সন্ধান পেয়েছে, পুরীর বালুতটের ওপর অলক রায়ের খোজ মিলতে পারে। ধরা দিতে আমি একটুও ভয় পাচ্ছিনে। ফাসির দড়ি ফুলের মালার মতন বরণ করে” নিয়েই মাজুষ বিপ্লবের খাতায় নাম লেখায়। কিন্তু তৰু তোমার কথাটাও যে আজ ভুলতে পাচ্ছিনে, অসিতা ! ওগো রুদ্র পথের পথিক, তোমার মুখে হাসি দুলছে, কিন্তু আমার বুকে যে ভয়ের সমুদ্ৰ উথলে উঠছে, কান্না । যে আসন্ন আষাঢ়ের মেঘের মতন করে’ই সেখানে জলধারার স্বষ্টি কবৃছে। ঝড়ের আগে ধরণীর বুকের নিঃশ্বাসের স্পন্দন যেমন থেমে যায়,আমার বুকের নিঃশ্বাস তেমনি বেরিয়ে আসবার পথ খুজে পাচ্ছে না ! দুই হাতে মুখ ঢেকে বালির ওপর লুটিয়ে পড়ে' বল্লুম— তবু তুমি এখনো আমার প্রতীক্ষায় বসে আছ বন্ধু, এখনো পালাওনি ! কি নিষ্ঠুর তুমি ! কিন্তু আর এক মুহূৰ্ত্ত—আর এক দগু৪ এখানে তোমার থাকা চলবে না। অলক আবার একটু হেসে বললে—কোথায় যাবো ? পালিয়ে-পালিয়ে জীবনের ওপর ঘৃণা ধরে গেছে। তবু এখানকার স্মৃতিটি ভারি মিষ্টি লাগছে । সমুদ্রের এই মাতলামি মনে আর একটা নতুন মত্ততার স্বর জাগিয়ে তুলেছে, এখানে তোমার সঙ্গ পাচ্ছি। যদি মৰ্বতেই হয়, এর চাইতে ভালো জায়গা আর কোথায় পাবো ? তার সামনে সোজা হ’য়ে বসে বললুম—কিন্তু মরা তোমার হবে না অলক। তোমার জীবন নিয়ে তুমি যাখুসি করতে পারে। তাই বলে আমার জীবনটাকে ত