পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাস্তিক ঐ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ( > ) "অধ্যয়ন শেষ করে’ লোকনাথ যখন তার আচার্ধ্যের কাছে বিদায় চাইলেন, আচাৰ্য্য র্তাকে বলেছিলেন, “একটা কথা সব সময়ে মনে রেখো তুমি, অনেক লোকের ওপরে ‘লোকনাথ’ নামটি সার্থক করে জীবনের পথে অগ্রসর হবে ।” অলোকসামান্ত প্রতিভাবান এবং প্রিয়তম ছাত্রকে বিদায় দিয়ে, আচাৰ্য্য ২৩ দিন পর্যন্ত মৌনী ছিলেন। মঠ থেকে বার হয়ে লোকনাথ কোনো বড় রাজসভায় গেলেন না, অধ্যাপনা করবার কোনো আগ্রহ দেখালেন না, বিবাহ করে সংসারী হবার বিষয়েও সম্পূর্ণ উদাসীন রয়ে গেলেন । কিছুদিন লক্ষ্যহীন অবস্থায় এদিকওদিক ঘুরবার পর শেষে পুণ্যভার নির্জন তীরভূমিতে কুটার বেঁধে সেখানেই বাস করতে স্বরু করলেন। এতে বেশীর ভাগ লোকেই তাকে বললে পাগল। বাল্যকাল থেকেই লোকনাথ একটু অন্ত প্রকৃতির। যেদিন প্রভাতের আলো খুব ফুটুক্ত, বালক লোকনাথ তার গ্রামের ধারের মাঠে এক-একা বেড়িয়ে বেড়াতে,সমবয়সী অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে সে মিশত না। সদ্ধার ধূসর আকাশের তলে গ্রামের অদূরের ছোট পাহাড়টা যখন বড় আৰাশের গা থেকে খসে পড়া বড় একখও মেঘস্তুপের মতো দেখাতো, লোকনাথ দণ্ডের পর দণ্ড ধরে’ মাঠের ধারের বনের কাছে বসে’-বসে’ এক মনে কি ভাব ত, তার অপলক শিশু-নয়ন দুইটি দণ্ডের পর দণ্ড ধরে’ ওই পাহাড়ের দিকে আবদ্ধ থাকৃত । তার বিশ্বাস ছিল, ওই পাহাড়টাই পৃথিবীর প্রান্তসীমার পাহাড় । “আচ্ছ, যদি ও ছাড়িয়ে চলে যাই, দুরে, দূরে, ক্রমেই দূরে, আরও দূরে, খুব, খুব দূরে, খুব, খুব, খুব, খুব দূরে, তা হ’লে কোথায় গিয়ে .পৌছবো ?” দৃশ্যমান সীমাচিহ্ন ছাড়িয়ে অজ্ঞাত রাজ্যে এতদূর যাবার কল্পনায় বালকের মন বিস্থিত,অভিভূত হয়ে পড়ত, নিজের ঘর, নিজের ভাই-বোনের কথা সে ভুলে’ যেত, শুধু অস্পষ্ট সন্ধ্যার আলোকে পরিধৰ্ত্তনশীল মেঘরাজ্যের পেছনে, অনেক, অনেক পেছনে যে কোন দেশ, যেখানে এই এমুনি ধূসর, মৌন চারিদিক সে-দেশের কথা মনে হ’তেই তার মন অবশ হয়ে আসত। তার দিদিমা যে রামায়ণ, মহাভারতের গল্প করেন, সে-সব ঘটনা সেই দেশেই ঘটে, রাম-রাবণের যুদ্ধ সেখানে এখনও চলচে, সে-দেশের সীমাহীন, গহন বনের মধ্যে গলাকাটা কবন্ধ রাক্ষস এখনও অন্ধকার হাতড়ে বেড়াচ্চে, যত অসম্ভব আর আজগুবি জিনিষের দেশ যেন সেট । কিন্তু সে-সব অনেক দিনকার কথা। বড় হ’য়ে ಕಿಗೆ লোকনাথ অত্যন্ত রুক্ষদর্শন ও কঠোর প্রকৃতির লোক হ’য়ে উঠলেন। র্তার নীরস শুষ্ক পাণ্ডিত্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলবার জন্যেই যেন তার আকৃতি দিন-দিন লালিত্যহীন হ’য়ে উঠতে লাগল। যখন তার প্রকাও মাথাটার অসংযত দীর্ঘ চুলের গোছা আর দীর্ঘ রুক্ষ দাড়ি বাতাসে উড়ত তখন সত্যই তাকে অত্যন্ত ভয়ানক বলে মনে হ’ত। তীক্ষু ইস্পাতের মতন এক অস্বাচ্ছন্দ্যকর দীপ্ত নীল আভা তার চোখে খেলতে দেখা যেত, কিন্তু এক-এক সময় আবার সে-দীপ্তি শান্ত হয়ে আসত, তাকে খুব সৌম্য, খুব সুদৰ্শন, খুব উদার বলে মনে হ’ত । বয়স বাড়বার সঙ্গে-সঙ্গে লোকনাথের বাল্যের সে স্বদুর-পিয়াসী মন ধীরে ধীরে আত্ম প্রকাশ করতে লাগল। ত্রিশ বৎসর বয়স পূর্ণ হবার পূৰ্ব্বেই দৃশ্যমান জগৎট একটা প্রশ্নের রূপ নিয়ে তার চোখের সাম্নে উপস্থিত হ’ল । জগতের স্বষ্টিকর্তা কেউ আছে কি না এই আজগুবি প্রশ্ন নিয়ে লোকনাথ মহা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও মহা ব্যতিব্যস্ত অবস্থায় কালাতিপাত করতে লাগলেন। তার জীবনের লক্ষ্যও ছিল আজগুবি-ধরণের । ংসারিক স্বর্থ-স্ববিধা লাভের প্রচেষ্টাকে তিনি পূৰ্ব্ব হ’তেই অবজ্ঞার চোখে