পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] রচন্দ্র ·GI পতির আচরণে ক্রোধাম্বিত হইয়া ভূতবানের স্বষ্টি করেন । এখন দেখা যাউক এই ভূতবান কে। আমরা দেখিতে পাই, রুদ্র আর্জা নক্ষত্রের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা । আৰ্দ্ৰ নক্ষত্র হইতে দক্ষিণ দিকে একটি সরল রেখা টানিলে মৃগশিরা ভেদ করা যায়। ইহা ছায়াপথ বা স্বৰ্গগঙ্গার (Milky way) ঠিক নিম্নদেশে, এবং কাল পুরুষ বা প্রজাপতির (Orion) দক্ষিণ স্বন্ধে অবস্থিত। মৃগশিরার আকার কতকটা একটা মৃগের মস্তকের মত, উহার দক্ষিণ শৃঙ্গের ঠিক উপরিভাগে উজ্জল তারাই আমাদের আর্দ্র নক্ষত্র। মৃগের মস্তকদেশে সমরেখায় পাশাপাশি তিনটি উজ্জ্বল তারা আছে । ইহাই আমাদের পুরাণ-কথিত রুদ্রের ত্রিশূল অথবা বেদের ত্রিকাও ইষু অর্থাৎ যে-অস্ত্র দ্বারা মৃগরূপী প্রজাপতিকে বধ করা হইয়াছিল। এইসকল কারণে মনে হয়, এই আর্দ্র নক্ষত্রই আমাদের আখ্যানের ভূতবানু বা রুদ্র । বিষুববিন্দু রোহিণী নক্ষত্রে গমন করায় যজ্ঞাদির কালগণনার জন্য মৃগশিরার আর কোনও প্রয়োজন থাকে ন ; কাজেই এই আখ্যানে রুদ্র বা ভূতবান প্রজাপতিকে বধ করেন। বিবিধ পুরাণে এই রুদ্র বা প্রজাপতি সম্বন্ধে যতপ্রকার উপাখ্যান দেখিতে পাওয়া যায়, তাহাদের আখ্যানভাগের মধ্যে বিশেষ বিভিন্নতা থাকিলেও এই বেদাঙ্গ ব্রাহ্মণ-গ্ৰস্থাদির আখ্যায়িকাই যে তাহাদের মূল সে-বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই। শিব-পুরাণের আখ্যায়িকা হইতে আৰ্দ্ৰ নক্ষত্রই যে আমাদের রুদ্র বা ভূতবান তাহা স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায়। কথিত আছে, শিব শর দ্বারা মৃগরূপী ব্ৰহ্মার শিরশেছদ করিলে, সেই শর এখনও আকাশে ষষ্ঠ নক্ষত্রে অবস্থান করিতেছে। অশ্বিনী হইতে গণনায় আৰ্দ্ৰাই ষষ্ঠ নক্ষত্র। মহিম-স্তোত্রেও এক স্থানে বলা হইয়াছে, ব্ৰহ্মা নক্ষত্ৰ-মধ্যে মৃগশিরা-রূপে এবং রুত্রের শর আর্দ্রী-রূপে অবস্থান করিতেছে। মহাভারতের সৌপ্তিক পর্বের ১৮শ অধ্যায়ে কথিত আছে,—“দেবযুগ অতীত হইলে দেবগণ বেদবিধানানুসারে যজ্ঞ করিৰার মানসে হবি প্রভৃতি উপকরণ সামগ্ৰী সমুদায় আহরণ করিলেন। তাহারা যজ্ঞভাগের কল্পনা-সময়ে ভগবান ভূতবানকে বিশেষরূপে বিদিত ছিলেন না বলিয়া তাহার ভাগ নির্দেশ করেন নাই। ভূতপতি স্বীয়ভাগ কল্পনা না হওয়াতে প্রথমেই যজ্ঞ-নাশক শরাসনের স্বষ্টি করিতে অভিলাষ করিলেন । * * * * অনস্তর মহাদেব অতি ভীষণ শর দ্বারা সেই যজ্ঞকে বিদ্ধ করিলেন। যজ্ঞ বাণবিদ্ধ হইয়া মৃগৰূপ ধারণপূর্বক পাবকের সহিত তথা হইতে নিস্ক্রান্ত হইয়া স্বর্গে গমন করিতে লাগিলেন । মহেশ্বরও তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবমান হইলেন ।” [ স্বৰ্গীয় মহাত্মা কালীপ্রসন্ন সিংহের অনুবাদ ] বিষুব-বিন্দু রোহিণী নক্ষত্রে গমন করায় সম্বৎসরাদি গণনার পরিবর্তন ঘটে । ইহাই মহাভারতের যুগ পরিবর্তন। প্রজাপতি রুদ্র কর্তৃক নিহত হইলেও কাজেই দেবযুগ অতীত হইল। মহাভারতের এই আখ্যানেও স্পষ্ট করিয়া বলা হইয়াছে,—যজ্ঞ অর্থাৎ প্রজাপতি বাণবিদ্ধ হইয়া স্বর্গে ( আকাশে ) গমন করিলেন এবং মহেশ্বরও (রুদ্র) তাহার পশ্চাৎ ধাবমান হইলেন। মৃগশিরার পরই আর্দ্রা নক্ষত্র,—উহা ইহার পশ্চাতে অথচ যেন বাণবিদ্ধ করিবার অভিপ্রায়ে ঠিক উপরিভাগে অবস্থিত। অতঃপর বিবিধ পুরাণে শিব কর্তৃক দক্ষযজ্ঞ অংশের বিভিন্ন উপাখ্যান দেখিতে পাওয়া যায়। ঋগ্বেদের তৃতীয় মণ্ডলের ২৭ স্থক্তের ১০ঋকে কথিত হইয়াছে যে, দক্ষ-কন্ত। ইলা বল-সম্পাদিত ও দীপ্তিযুক্ত অগ্নি ধারণ করিয়াছেন। রুদ্র অগ্নির একটি রূপ ; এজন্য মনে হয়, পুরাণে দক্ষকস্তা সতীর সহিত শিবের যে বিবাহের কথা আছে, বেদের এই ঋকৃই তাহার মূল ভিত্তি। দক্ষ একজন প্রজাপতি। মৃগশিরা নক্ষত্রে বিষুব-সংক্রমণ-অনুসারে যখন যজ্ঞের জন্ত সম্বৎসরাদি গণনা করা হইত, তখন এই নক্ষত্রকেই যজ্ঞ পুরুষ বা প্রজাপতি বলা হইত এবং পরে ইহাকেই পুরাণাদিতে প্রজাপতি দক্ষ-নামে অভিহিত করা হইয়াছে। মৃগশিরার আকৃতি মৃগের মস্তকের মতন, এইজন্ত পুরাণে দক্ষের ছাগ মুণ্ড কল্পনা । মৃগশিরা হইতে কাল গণনা অথবা নক্ষত্র গণনা করা হইত, এ-কারণ সাতাশটি নক্ষত্রই দক্ষ-কল্প বলিয়া উল্লিখিত ।