পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

k নাস্তিক S80. ৩য় সংখ্যা । দেখতেন, যশোলাভ বিষয়েও তিনি হয়ে উঠলেন সম্পূর্ণ উদাসীন। একবার মঠের.আচার্য্যের কাছে মগধ থেকে পত্র এল—মঠের অভিশদের মধ্যে আচার্ষ্য র্যাকে উপযুক্ত মনে করবেন, তাকে হস্তীর পৃষ্ঠে করে সসন্মানে রাজধানীতে নিয়ে আসা হবে, রাজসভার সুরিপদতিলক মহাচাৰ্য্য জীবনসুরির সম্প্রতি দেহাঙ্কর ঘটেচে । আচাৰ্য্য একমাত্র লোকনাথকেই এ-পদের উপযুক্ত বলে’ ভেবেছিলেন, কিন্তু লোকনাথ কিছুতেই মগধে যেতে রাজি না হওয়ায় তার এক সতীর্থ মগধে প্রেরিত হলেন। এর কিছুকাল পরেই লোকনাথ মঠ পরিত্যাগ কবুলেন এবং এক-বৎসরের মধ্যেই পুণ্যভঞ্জার নির্জনতীরভূমি আশ্রয় কবুলেন। ( R ) সেই থেকে আজ ত্রিশ বৎসর তিনি এ নির্জন মাঠের মধ্যে এ কুটারখানিতে এক বাস কবৃচেন । জৈনধৰ্ম্মমণ্ডলীর পক্ষ থেকে প্রতিবৎসর নিৰ্দ্দিষ্টপরিমাণ ভঙুল ও দু’খানা বহিৰ্ব্বাস তাকে দেওয়া হ’ত। মাঠের ধারের বুনো কাপাসের তুলা থেকে তিনি অন্য পরিধেয় নিজের হাতে প্রস্তুত করে নিতেন। প্রথম-প্রথম দু’একজন ছাত্রকে নিয়ে তিনি অধ্যাপনা করেছিলেন, কিন্তু তার পাণ্ডিত্য, থ্যাতি ও উন্নতচরিত্রের আকর্ষণে শিক্ষাথীর যখন ভিড় বাড়বার উপক্রম হ’ল, অধ্যাপনা তিনি তখন একেবারেই বন্ধ করে দিলেন। পুণ্যভদ্রার দুই তীরের নির্জন মাঠ তখন স্থানে-স্থানে বনে ভরা ছিল । অনেক স্থানে এইসব বন উপর-পাহাড়ের শাল ও দেবদারু গাছের বীজের চারা, কোনোও কোনো স্থানে নানা-রকমের কাটাগাছ ৪ বনজ লতার ঝোপ । দক্ষিণের পাহাড় একটু অপরিসর উপত্যকায় দ্বিধা-বিভক্ত, পুণ্য-ভদ্রার একটা ক্ষণ স্রোতশাখা এর মাঝখান বেয়ে পাহাড়ের ওপরে বেরিয়ে গিয়েচে, তার গৈরিক জলধারার উপর সব সময়ই দুই তীরের পত্রপ্তাম শিশু দেবদারু-শ্রেণীর কালো ছায় । এখানে ছিল লোকনাথের কুটার। লোকনাথের ছোট কুটীঃখানি হস্তলিখিত পুথির একটা ভাণ্ডারবিশেষ ছিল। কাঠের ত্রিপট্ট শক্ত করে مپk ===8% বেত দিয়ে বেঁধে লোকনাথ এক-রকম পুস্তকাধার প্রস্তুত করেছিলেন এবং বৃহৎ-বৃহৎ তালপত্র ও ভূৰ্জপত্রের পুথিকে স্থান দেবার জন্তে তিনি ত্রিপট্রের মাঝখানে অনেকখানি করে ফাক রেখেছিলেন । এই ত্রিপট্রটি পুথিতে ভরা থাকৃত; ষড়দর্শন, উপনিষদ, বেদ, স্মৃতি, পুরাণ, আশ্বলায়ন ও আপস্তম্বাদি স্বত্র, পাণিনি ও অন্যান্য বৈয়াকরণিকদের গ্রন্থ, সংহিতা ও নানা-কোষকারদের পুথি, প্রাচীন জ্যোতিৰ্ব্বিদিগের কিছু-কিছু পুথি, ইত্যাদি। তা-ছাড়া আরও নানাপ্রকার পুথি ঘরের মেজেতে এমন যদৃচ্ছাক্রমে ছড়ানো পড়ে থাকৃত, ষে,* ফুটরের মধ্যে পা রাখবার স্থান পাওয়া দুষ্কর। প্রতিদিন প্রাতঃকালে স্বান করে’ই লোকনাথ কুটীরের সাম্নের প্রাচীন নিম-গাছটার ছায়ায় গিয়ে বসতেন এবং একমনে পড়তেন । এক-একদিন অবসর গ্রীষ্ম-অপরায় ঈষত্তপ্ত বাতাসের সঙ্গে সদ্য-ফোট নিমফুলের পরাগ মাখিয়ে এক অপূৰ্ব্ব লোকের স্বষ্টি কবুত, সেখানে শুক্লকেশ আধ্যভট্ট শিষ্য শকটায়ুনকে নীলপূন্তে খড়ি একে গ্রহনক্ষেত্রের সংস্থান উপদেশ করতেন, বুনো পার্থীর অশ্রান্ত কাকলীর মধ্যে যাস্ক ভাষাতত্ত্ব আলোচনায় ব্যস্ত থাকৃতেন, দুৰ্ব্বোধ্য জ্যামিতিক সমস্তার সাম্নে পড়ে সেখানে কুঞ্চিত-ললাট পরাশর তার অন্তমনস্ক দৃষ্টি অত্যন্ত একমনে সম্মুখস্থ বন্ধাকন্তুপের দিকে আবদ্ধ করে বাখতেন-চমক ভেঙে উঠে লোকনাথের কাছে এটাও একটা কম সমস্তার বিষয় হ’য়ে উঠত না যে,কেন তিনি এতক্ষণ মনে-মনে ভাষাতত্ত্বআলোচনাকারী ঘাস্কের মুখকে সম্মুখস্থ নদীজলে সস্তরণকারী বন্য হংসের মুখের মতণ কল্পনা করছিলেন। রাত্রে আকাশের নক্ষত্রগুলোর দিকে চেয়ে-চেয়ে লোকনাথ ভাবতেন, ওগুলো কি ? প্রাচীন জ্যোতিৰ্ব্বিগণের পুথি এখানে তাকে বড় সাহায্য কবুত না। অবশেষে তিনি নিজে ভেবে-ভেবে স্থির করলেন নক্ষত্রসমূহ একপ্রকার বৃহৎ স্ফটিক পিও । পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জল্পে এগুলো আকাশে আছে, চন্দ্রকে তিনি নক্ষত্রদের অপেক্ষা বৃহত্তর স্ফটিক পিও বলে ভেবেছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার স্বহস্তলিখিত একখানি পুথিতে দেখা যায়, তিনি