পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা] • ‘ o নাস্তিক ©8ፃ ' এবার সেটা আস্ত অন্ধকারের রূপ ধরে । আলোর যদি স্বষ্টিকৰ্ত্তা থাকে, তবে অন্ধকারের আর একটা স্বষ্টিকৰ্ত্তার কি প্রয়োজন আছে ? জালোর অভাবেই যদি অন্ধকার হয়, অন্ধকার কি তবে স্বপ্রকাশ স্বয়স্থ ?.. স্বটির পূৰ্ব্বের জিনিস ? লোকনাথ আবার ধীরে-ধীরে ঘরের মধ্যে ঢুকতেন, আবার তত্বসমাসের পুথিখানা উঠিয়ে নিয়ে প্রদীপের শিখা আঙ্গুল দিয়ে উজ্জ্বল করে তুলতেন। সেদিন তিনি পড়ছিলেন না, সারাদিন কেবল চুপ করে আকাশের দিকে চেয়ে-চেয়ে কি ভাবছিলেন। যে-রহস্ত ভেদ কবৃবার জন্তে র্তার মন সৰ্ব্বদাই আকুল, সে-রহস্য ভেদ করবার আশা ক্রমেই যেন দূরে চলে যাচ্চে, সবদিকেই অন্ধকার, কোনো দিক থেকে কোনো আলোক আসবার চিহ্ন দেখা যায় না । ( & ) কয়েক বৎসর পূৰ্ব্বে তার মনে হ’ত কোনো-কোনো আত্মস্থ ঋষি কোন প্রাচীন যুগে তাদের জীবনের কোনো এক শুভ মুহূৰ্ত্তে এ জীবন-রহস্তের সন্ধান বোধ হয় পেয়েছিলেন। ভবিষ্যৎ বংশধরগণের জন্ত তাই তারা আশ্বাস-বাণী লিপিবদ্ধ করে রেখে গিয়েছিলেন-পেয়েছি--পেয়েছি--- তার মনে হ’ল প্রথম যেদিন তিনি উপনিষদের এক জীর্ণ পুথির পাতায় এ-কথার সন্ধান পেয়েছিলেন, তখন তার বয়স এখনকার চেয়ে ২০ বৎসর কম। সে এক বর্ষার রাত্রিকাল, স্তন্ধ নিশীথ রাত্রে, নির্জন মাঠ বেয়ে সেদিন অশান্ত বাধা-বন্ধহীন বাতাস হু হু করে’ ঝড়ের বেগে বয়ে যাচ্ছিল, স্তিমিত-প্রদীপ কুটীরে এক বসে পুথির মধ্যে তার সন্ধান পেয়ে ক্ষণিকের জন্য লোক নাথের সমস্ত শরীর সপপুষ্ঠের মতন শিউরে উঠেছিল--পুথি বন্ধ করে’ ঘরের বাইরে°চেয়ে তার মনে হয়েছিল গাছপালা, দুৰ্ব্ব, নদীজল, সব যেন তারই মতন শিউরে’-শিউরে উঠচে । এখন তার সে-কথা মনে পড়ে’ হাসি পেলে । অল্প বয়সের সেই কঁচি, ভাবপ্রবণ মনের দিকে নীচু-চোখে চেয়ে দেখে তার বর্তমান সময়ের প্রবীণ মন সকৌতুকস্নেহে রঞ্জিত হ’য়ে উঠল। মানুষের মন নিদিষ্ট গওঁী অতিক্রম করে অগ্রসর হতে পারে ন+যে বলে,— জেনেছি, সে ভও, নয় সে আত্মপ্রতারক, মুখ"। কি বুঝতে হবে, সে-সম্বন্ধে তার কিছু ধারণাই নেই। হঠাৎ তার অন্যমনস্ক দৃষ্টি দূরের নীলশৈলসান্থলগ্ন প্রথম বসন্তের নবপুষ্পিত রক্তপলাশের বনে আবদ্ধ হয়ে পড়ল। অনেকদিন আগের কথা । ২১ বৎসরের । —কিছু না মায়া, লক্ষ্মীটি, আমি, এই ধরে সাত বছরের মধ্যেই আসব-পড়া শেষ হ’তে কি আর এর বেশী নেবে ? সাতবচ্ছরই হোকৃ। তোমায় ফেলে’ এর বেশী কি আর থাকতে পারব ? বুঝলে ? ১৭ বৎসরের মায়া— ( সলজ্জ হাসিয়া ) সাতবচ্ছর••• এত কম সময়। এ আর এমন বেশী কি ! লোকনাথ—( গাঢ়স্বরে ) সেই কথাই ত বলুচি, মায়া--- সাতবছর কি আর বেশী আমাদের পক্ষে ? (মায়ার মুখে নির্ভরতার দৃষ্টিতে চাহিয়া) নয় কি, মায়া ? মায়া—( মুখে হাসি টিপিয়া ) নাঃ...তা আর বেশী কৈ ? মোটে সাত বছর-এবেলা-ওবেলা--(প্ৰগলভ উচ্চহাস্ত )। লোকনাথ—( অপ্রতিভ-মুখে ) না শোনে, মায়া--- আমি বলুচি---না-আমার বলবার কথা... ধে-মায়ার অভয়-ভরা স্নিগ্ধ-দৃষ্টি সেদিন তাকে প্রবাসের পথে সখীর মতন আগু বাড়িয়ে দিয়ে চোখের জলে নিজেকে নিজে হারিয়ে ফেলেছিল, আজ লোকনাথের প্রবীণ হৃদয়ে কোথায় সে মায়ার স্থান তা আমরা জানিনে, তবে এটুকু বোধ হয় ঠিক যে সে সময়ের মনোভাব এখন আর লোকনাথের ছিল না। জীবনের তুচ্ছ জিনিসে তার কোন আসক্তি ছিল না । মঠে থাকৃতেই লোকনাথের মন অন্তরকম হ’য়ে উঠেছিল, তিনি মায়ার কথা ভুললেন, জীবনের স্বথকে মনে-মনে ঘৃণা করতে শিখলেন। তার জীবনে শুধু অমুসন্ধিৎস্ব ঋষিদার্শনিকদের যাতায়াত স্বরু হ’ল ;–সে এক অন্ত জগৎ, মনের সমস্ত আকাশটা জুড়ে সেখানে শুধু এক বিরাট রহস্যময় দার্শনিক প্রশ্ন-কে তুচ্ছ মায়া ? মূখে ই শুধু এত সামান্ত জিনিসে এত বেশী আনন্দ পায় তখন লোকনাথ—