পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা] . , বামুন-বাদী Ö6:0: حيجيقيa —ওকে সঙ্গে করে নিয়ে দিন-কতক অন্ত কোথাও গিয়ে থাকি ৷” স্বখেন্দু হাসিয়া কহিলেন,"অৰ্থাৎ এই বিয়ের দিন-কট। কি যে বলো তুমি ? তুমি না থাকলে শাস্তির বিয়ে দেবে কে? তার চেয়ে মেয়েটাকে রেখে চলো সবাই আমরা সরে' পড়ি—তা’রা এসে নিয়ে যাক সব হাঙ্গামা চুকে যাবে।” ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া বলিলেন, “তুমি কেন এত ভাবছ ? ও কিছু গোলমাল করবে না ; ওকে একটু বুঝিয়ে-মুঝিয়ে বলে’ দিও—আর একটু চোগে-চোখে রাখলেই হবে ।” স্বথেন্দুর কথায় মহেশ্বরী তৃপ্তি অনুভব করিলেন । তাহার মনে এতক্ষণে একটু সাহস আসিল । আত্মীয়স্বজন যাহারা আসিবেন, তাহদের অপেক্ষা পুত্রের জন্যই র্তার অধিক ভাবনা হইতেছিল। পাছে পুত্ৰ মনে করেন, তাহার জননী গৃহে এই যে একটি উপদ্রব স্থষ্টি করিয়া রাখিয়াছেন ইহার জন্য, আত্মীয়-স্বজনও হয়ত দুই-এক দিনের জন্য আসিয়া শাস্তি পাইবেন না, এই চিস্তাই তাহাকে ক্রমাগত পীড়া দিতেছিল, অথচ প্রকাশ করিয়া তাহা বলিতেও পারিতেছিলেন না । পুত্রের কথায় তাহার সে-আশঙ্কা দূর হইল। অপরে তাহাকে যাহাই ভাবুক না, পুত্র যদি সানন্দে তাহার পক্ষে থাকেন, তবে সকলের চেয়ে বড় দুঃখটা এ-ব্যাপারে তাহাকে পাইতে হইবে না । বিবাহের দিন ঘনাইয়া আসিল । গৃহখানিও ক্রমেক্রমে আত্মীয়-স্বজনে পূর্ণ হইয়া উঠিল । ইহাদের মধ্যে এক পরম নিষ্ঠাবতী রমণী আসিলেন । ইনি সুখে-দুর দূরসম্পৰ্কীয়া পিসী, ইহাকে একটু ছোয়া পড়িলেই সৰ্ব্বনাশ । জল ঘাটিয়া পিসীমার দুইহাতে ও পায়ে হাজ ধরিয়া গিয়াছে ; তবু পুকুরের ঘাটেই ইহার অধিকাংশ সময় কাটিত এবং একছড়া তুলসীর মালার দানাগুলি বৃদ্ধাঙ্গুলির দ্বারা আহত হইয়া—হাতের মধ্যে অমুক্ষণ চক্ৰবৎ ঘুরিত । দিনের মধ্যে কতক্ষণ শনি শুকৃনো কাপড় পরিতেন, বলা শক্ত। পাড়াপ্রতিবেশীর কল্যাণে ক্ৰমে-ক্রমে যখন ইনি কানাইলালের পরিচয় পাইলেন, তখন হইতে সে ইহার বিষ-নয়নে পড়িল । তিনি ঘাটে বসিয়া যখন আহ্নিক করিতেন, কানাই যদি তথন স্নান করিতে সে ঘাটে যাইভ, অম্নি বলিয়া উঠিতেন, “জাত জন্ম সবই মারলে রে—যা রে ছোড়া ও ঘাটে যা ।” বাড়ীতে যতক্ষণ থাকিতেন, তাহার ত্রিসীমানার মধ্যে কানাইলালের যাওয়ার উপায় ছিল না। তিনি যেন সৰ্ব্বদা নিজের চারিধারে একটা অদৃশ্য বেড়া টানিয়া ঘুরিতেন। দেখা হইলেই বলিতেন, “ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয়! মাপ করবেন, এখানে উঠবেন ন—এখানে আসবেন না।” ইত্যাদি । কানাই তাহাকে দেখিলেই সরিয়া যাইত। সে দূরে-দূরে থাকিয়া দেখিতে পাইত, এই উৎসবে তাহার স্থখ ও আনন্দটকু হরণ করিয়া লইবার জন্যই এই রমণীর হিংস্র চক্ষু-দুটি যেন অমৃক্ষণ তাঁহারই সন্ধানে ঘুরিতেছে। শুচিবায়ুগ্ৰস্তার সমস্ত অশুচিতার কেন্দ্ৰ যেন এই বালকই হইয়া উঠিয়াছিল । তাঙ্গকে কোনোপ্রকারে ছাটিয়া ফেলিতে না পারিলে পুরাপুরি শুচিত্তার কলঙ্ক থাকিয়া যাইতেছিল। একদিন মোক্ষদা মহেশ্বরীকে কহিলেন, “বোঁ ! মুখেন ত তেমন ছেলে নয়, তুমি এ-কি খ্ৰীষ্টানী মত ধরেছ ? কোথা থেকে তুমি এসব শিখলে ?” মহেশ্বর জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি খ্ৰীষ্টানী মত?” মোক্ষদ কহিলেন, “বামুন-পণ্ডিতের ঘর, ওমা! একেবারে অবাকৃ করেছ যে ! এক ৰাগী ছোড়াকে নিয়ে ঘরের মধ্যে ঘুরোচ্ছ, এতে কি বিচার থাকে, না আচার থাকে ? এ ধদি তোমার হিন্দুয়ানি হয় তবে খ্ৰীষ্টানি তার কা’কে বলে জানিনে ভাই ।” মহেশ্বরী দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিলেন, “দিদি ! ভিতরে ৪ যে একটা আচার আছে, সেখানে বিশ্ব চরাচর বাধা ।” মোক্ষদা নাসিক কুঞ্চিত করিয়া কহিলেন, “তা হোকৃ বেী। তোমার এতটা বাড়াবাড়ি কিন্তু ভালো নয়। এ যেমন পোড়া দেশ—সহরে জিনিয়ে যাচ্ছ, আমাদের দেশ হ’লে— ।” মহেশ্বরী তাহাকে আর কিছু বলিতে না দিয়াই কহিলেন, “বাড়াবাড়ি আর কি করছি বলে । আমরা কেবল আড়ম্বরই নিয়েই ব্যস্ত, অথচ পূজার খবর রাখিনে ৷”