পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

బ్రి(శ్రీ মহেশ্বরীর এ শ্লেষ-বাক্য যেন তাহারই উপর নিক্ষিপ্ত হইল, মোক্ষদা এইরূপ মনে করিলেন। তাহার ছৰ্ব্বল চক্ষু দুটি জলন্ত বহ্নির স্থায় জলিয়া উঠিল । তিনি কর্কশকণ্ঠে কহিলেন, “এখন শেষকালটায় একটু ভগবানের নাম নিই, তাও বুঝি কারও চোখে সইছে না। তোমার মতন জাত খোয়াতে পারলে বুঝি ভালো হ’ত ?” মহেশ্বরীর ইচ্ছা নয় যে, বাড়ীতে আহবান করিয়া অনিয়া তাহাদের সহিত একটা মন-কষাকষি করেন । কিন্তু কথাটা এইখানে চাপা পড়িয়া গেলেও মোক্ষদার মনের আগুন জলিয়াই থাকিবে বিবেচনা করিয়া তিনি বলিলেন, “জা’ত খুইয়েছি তোমায় কে বললে? আচার-ব্যবহার নিয়েই জাত স্বষ্টি হয়েছে । সে হিসাবে বাগদী একটা নীচ জাতি স্বীকার করি ; কিন্তু তাই বলে একটা মানুষের বাগীর ঘরে জন্ম হয়েছে বলেই তার উপর সর্বদা বিষদৃষ্টি রাখতে হবে, আর একটা ব্রাহ্মণের ছেলের আচারব্যবহার যদি অত্যন্ত হীনও হয় তবে তার উপর স্ব দৃষ্টি দিতে হবে—এরই বা কি মানে আছে ?” মোক্ষদা ক্রফুটি করিয়া কহিলেন, “তা হ’লে মুচি, মেথর সবই তোমার জা’তে তুলে নেও ! সবাই বামুন হ’য়ে যাবে, আর কোনো বালাই থাকৃবে না।” মঙ্গেশ্বরী ব্যথিত হইয়া কহিলেন, “আমার কথা ত বুঝে" দেখবে না, সে কথা আমি বলিনি। ছোড়াটার ত্রিসংসারে কেউ নেই, সে বাগদীর ছেলে, মনে-মনে এই ধাৰণাট। সকলের বড় করে রেখে কি আমবা তাকে একটু আশ্রয়৪ দেবো মা ? সেও ভগবানের জীব, আমরা না রাখলে দাড়াবে কোথায় ? মোক্ষদা বলিলেন “তা দাও । একঠাই পড়ে থাকতে দিলেই গড়ে উঠবে। কিন্তু কোলে পিঠে করে নিয়ে বেড়ানোর ত কোনো দরকার দেখিনে । “খুবই দরকার । তা’র যে বয়েস, তাতে তা’র যা দরকার, সব পূরণ করতে না পারলে, তা’কে আশ্রয় দেওয়া বলে না ।” মোক্ষদা তীব্ৰ কটাক্ষ করিয়া কছিলেন, “আড়াই বৎসর বয়েস থেকে যখন পালন করেছ, তখন ত তা’র মাতৃস্তন্তেরও দরকার ছিল ! প্রবাসী –পৌষ, ১৩৩১ • [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড মহেশ্বরী সহজভাবেই কহিলেন, “হা, তা সে .পেয়েছেও । আমরা যে মায়ের জাতি, এখানে সস্তান নিয়ে জাতি বিচার হয় না।” মোক্ষদার মনে হইতেছিল, আগে জানিতে পারিলে তিনি এমন মেচ্ছের বাড়ীতে আদিতেন না। তিনি সেকথা মুখে প্রকাশ করিয়াই বলিলেন, “আগে ত ভাই সব-কথা জানতে পাইনি—” মহেশ্বরী বলিলেন, “জানলে বুঝি এ-বাড়ীতে পা দিতে না ? আচ্ছা দিদি ! তুমি ত এই কয়েকদিন এসেছ, আমি তা’কে নিয়ে চলছি-ফিবৃছি তাও দেখছ, কিন্তু আমার জাতির গায়ে কোন আঁচড় পড়তে দেখেছ ? বিষ্ঠা গায়ে লাগলেও নেয়ে ধুয়ে শুদ্ধ হওয়া যায় ; আর জগতের যাতে কল্যাণ, এমন একটা আত্মার সংস্রবে গেলে কি শুদ্ধ হবার কোন পথই নেই ?” মহেশ্বরীর অনাচার-কদাচার মোক্ষদা কোনদিনই দেখিতে পান নাই। কানাইলালের যে-সব ঘরে যাইতে বাধিত, সে-সব ঘরে তাহাব যাইতে নিষেধ ছিল । মোক্ষদা দেখিতেন এই সহৃদয়া রমণী আপনার নিষ্ঠাটুকু সম্পূর্ণ বজায় রাখিয়া ছেলেটিকে কেমন বুকের মধ্যে করিয়া রাখিয়াছেন । দিনের মধ্যে জুশো-বার স্বান করিতেছেন—বস্ত্র ত্যাগ কৰিতেছেন, একটুও ক্লাস্তি বা বিরক্তি নাই। মোক্ষদা বলিলেন, “তেমন কিছু দেখিনি । কিন্তু ধন্থ সাধ্য তোমার । আড়াই বছর থেকে দশ বছরে এনে ফেলেছ, আমরা হ’লে পেরে উঠতাম না। সেজন্যে ত বলিনে ; আদৎ কথা হচ্ছে এতে তোমারও কষ্ট হয়—লোকেও ভালো দেখে না।” মোক্ষদা অনেকটা প্রকৃতিস্থ হইয়াছেন দেখিয়া মহেশ্বরী আনন্দিত হইলেন । বলিলেন, “আমার কষ্ট কিছুই নেই। কিন্তু ঐ ত আমাদের দোষ ! লোকে মন্দ বললে আর রক্ষে আছে ? লোকে মন দেখবে ভেবে যারা সৎকাজ করতে নিরস্ত হয়, তা’রা দেখতে পায় না যে, তাদের শুধু নিরস্ত হওয়া হয়নি, দলে মিশে পড়ে’ তা’রাও মন্দটা গ্রহণ করে’ বসেছে—আর সৎ যেটা—সেটা হারিয়ে ফেলেছে।”