পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] c বামুন-বাগদী ©¢ፃ এই সময় কানাই আসিয়া কহিল, বড় মা ! বলাই রসগোল্লা খাচ্ছে ।” মহেশ্বরী বলিলেন, "খাবে না ? সাত লঙ্কায় টেটো করে বেড়াবি, সেইখানে দিয়ে আসতে পারলে হয়—নয় ? ঘরে ঢাকা রয়েছে স্বাখগে যা—ছোট মা রেখে এসেছে।” কানাই প্রফুল্লমুখে এক-পায়ে লাফাইতে-লাফাইতে চলিয়া গেল। মোক্ষদার দুৰ্ব্বলতার মধ্যেও মাতৃ-স্নেহের স্বাভাবিক উৎসটি একটু উন্মুখ ও আকুল হইয়া উঠিল। অষ্টম পরিচ্ছেদ মহেশ্বরীর সহিত আলোচনায় মোক্ষদার নারী-হৃদয়ের সার-বস্তুটি এমন সাক্ষাংগোচর হইয়া পড়িল যে, পর দিন দেখা গেল মোক্ষদাকে যে জলখাবার প্রদান করা হইয়াছে, তাহা হইতে তিনি নামমাত্র থাইয়া সমস্তই কানাইলালকে অৰ্পণ করিতেছেন ! মহেশ্বরী চাহিয়াচাহিয়া দেখিলেন, কিন্তু তাহার স্বস্তি হইল না । মোক্ষদা ত একটি নয় ! এই কৰ্ম্ম-কোলাহল-মুখরিত বাড়ীতে কত মোক্ষদারই আবির্ভাব হইয়াছে ! তিনি সকল দিকে চক্ষু রাখিয়া এই অবুঝ শিশুটিকে কিরূপ রক্ষা-কবচের মতো সকলের আঘাত হইতে বাচাইয়া রাখিবেন ? আজ শান্তির বিবাহ ৷ মহেশ্বরী প্রথম-প্রথম বহুক্ষণ কানাইলালকে চোখে-চোখে রাখিয়াছেন । কিন্তু বাড়ীর গৃহিণী তিনি কতক্ষণ আর কেবল কানাইকে লইয়া থাকিবেন, কাজ-কর্মের গুরুভারে ক্ৰমে-ক্রমে তিনি চারিদিকে জড়াইয়া পড়িলেন । শেষকালটায় কোথায় যে কানাই গিয়া পড়িল আর কোথায় যে তিনি রহিলেন ঠিক করা শক্ত হইয়া উঠিল । এতদিন যেসব ঘর অব্যবহার্ষ্যরূপে পড়িয়াছিল, যাহা কানাইবলাই প্রভৃতি শিশুগণ খেলিবার স্থানরূপে ব্যবহার করিত, সেসব ঘর আজ কাজের ছড়াছড়ি পড়িয়া গিয়াছে । খেলা-ঘরের পথ শিশুর ভুলিয়া থাকা শক্ত ; তাই বলাই দিনে দশবার সেইসব ঘরেই ঘুরিতেছিল, কিন্তু কানাইলালের অভ্যন্ত চরণ-দুখানি সেইসকল স্থানে যাইতে আজ প্রতিপদেই বাধা খাইতেছিল। লোকজনে কোথাও লুচি ভাজিতেছে, কোথাও মিষ্টায় প্রস্তুত করিতেছে, কোথাও বা তরকারী-পত্র রন্ধন হইতেছে। যাহারা লুচি ভাজিতেছিল, তাহার কানাইলালকে দেখিলেই ই-ই করিয়া উঠিয়া বলিতেছে, “উঠিস নে—উঠিস নে—এখানে উঠিস্ নে।” যাহার মিষ্টান্ন প্রস্তুত করিতেছিল, তাহারা ব্যস্তসমস্ত হইয়া বলিতেছে, "ঐখানে দাড়া, একখানা জিলিপী দিচ্ছি, নিয়ে চলে যা।" যাহারা তরকারী রাধিতেছিলs তাহারাও বলিতেছে, “সরে যl-সরে যা—যজি নষ্ট করবি নাকি ?” অকস্মাৎ আজ শুভ উৎসবের আনন্দের মধ্যে সে যেন মূৰ্ত্তিমান দুগ্ৰহ হইয়া উঠিয়াছে। সারদিন এইরূপে প্রতিস্থানেই বাধা পাইয়া সে এক-একবার সেই স্থানে যাইয়া শুষ্কমূখে দাড়াইতেছিল, যেখানে তাহার প্রাণটি বিশ্বসংসারের মধ্যে একটি মাত্র জুডাইবার স্থান পাইয়াছিল, মহেশ্বরীর সাম্বনা-লাক্যে প্রাণের সমস্ত ব্যথা ধুইয়া-মুছিয়া বাল্যস্বভাব লইয়া—সে আবার এখানে-সেখানে ধাইয়া দাড়াইতেছিল। : সন্ধ্যার সময় একটি গুহে কতকগুলি যুবতী মিলিয়া মহা কোলাহলের সঙ্গে শাস্তিকে বধূ-বেশে সাজাইতে লাগিয়া গিয়াছিলেন। কেহ ললাটে চন্দনের ফোটা কাটিতেছিলেন, কেহ ওষ্ঠ দুখানি লাল রঙে রঞ্জিত করিয়া জিতেছিলেন, কেহ-কেহ বা চুড়ী আগে থাকিবে, কি ব্রেস্লেট আগে থাকিবে তাহারই বিচার করিতেকরিতে ইয়রাণ হইয়া পড়িতেছিলেন। চারিদিকে ব্যস্ততা ও আনন্দের একটা সাডা পড়িয়া গিয়াছিল । কানাই ব্যতীত আরও অনেকগুলি সঙ্গী বলাইএর জুটিয়াছিল । সে তাহাদের লইয়া যুবতীদের ঘিরিয়া তাহার দিদির এই নববেশ দেখিতেছিল । দিদিকে লষ্টয়া এমন হুলস্থূল করিতে জীবনে সে আর কখনও দেখে নাই। কানাই কিন্তু দ্বারের কাছে চুপটি করিয়া দাড়াইয়াছিল। ঘরে ঢুকিতে তাহার সাংস হইতেছিল না । অথচ দিদিকে দেখার সাধও তাহার বলাইএর অপেক্ষা কিছু কম ছিল না। হঠাৎ একটি যুবতীর নজর তাহার উপর পড়িল