পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WX&be প্রবাসী—পৌষ, ১৩৩১ [२8न छांश,२ग्न थ७ তিনি খনূখনে গলায় বলিয়া উঠিলেন, “মনো-দি, ঐ দেখ, বেল্পিকটা ঠিক সময় এসে হাজির হয়েছে। বাগদীর পো! দয়া করে একটু এদিকে-ওদিকে যাও, এখন ক'নে যাত্রা করে বেরুবে ।” আর-একটি যুবতী বলিলেন, “কত দিকে কত আমোদ পড়ে’ রয়েছে, সেখানে যেতে মন ওঠে না ; এখানে এসে নাগাল নিয়েছ কেন ?” মোক্ষদা তথায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলিলেন, “কেল তোর ছেলেটির পিছু অমন লেগেছিস ? আহা ! এক-সঙ্গে চলে-ফেরে—ওঠে-বসে–দেখবে না ?” অল্পবয়সের কঠোর সমালোচনার . কাল তিনি অনেক দিন কাটাইয়া উঠিয়াছেন ; তাই এই বালকের প্রতি একবার স্নেহদ্বষ্টি পড়িয় যাওয়াতে র্তাহার আচারনিষ্ঠাও তাইকে আগের মতন কঠিন বিচারক করিয়া তুলিতে পারিতেছিল না। প্রথম যুবতী ডেম্‌নি জোর-গলাতেই কহিলেন, “কি যে বলে পিসি ! জীবনের আজ একট। প্রধান যাত্ৰা ! স্নেচ্ছের মুখ দেখে ঘর থেকে বেরুবে ?” ইতিমধ্যে আর একটি যুবতী উঠিয়া বালকের নিকটে গিয়া তর্জন-গর্জন আরম্ভ করিয়াছিলেন, “যা ছোড়া— যা এখান থেকে বলছি। ফেব্ৰু যদি এখানে আস্বি কান টেনে লাল করে দেবো ।” আড়াই বছরের কানাইলাল ধেদিন বাড়ীতে আসে, সেই দিন হইতে শান্তি তাহাকে ভালোবাসে । আজ ইহাদের নিষ্ঠুরতা শাস্তির প্রাণে বড় লাগিয়াছিল। এইসব যুবতীদের সহিত তাহার ঝগড়া করিতে ইচ্ছা হইতেছিল। সে আত্মসম্বরণ করিতে না পারিয়া বলিয়। ফেলিল, “থাকু না-আছে দাড়িয়ে—হয়েছে কি ?” প্রথম যুবতী বিস্ফারিত-নেত্রে শান্তির দিকে চাহিয়৷ ধম্‌কাইয়া কহিলেন, “নে, তুই চুপ কর । বিয়ের ক’নে, তোর কথায় কাজ কি ?” শান্তি তবু চুপ করিতে পারিল Ri I কানাইলালের বিষন্ন মুখখানি দেখিয়া তাহার চক্ষে জলধারা গড়াইতে লাগিল । সে কহিল, “সকলে mমন করে’ লেগেছে ! বলা ! বড়মা মরেছে শকি f” মোক্ষদাকে সম্বোধন করিয়া যুবতীর কহিলেন, “দেখ পিসি ! চোখের জল ফেলে কি অকল্যাণ করছে।”

  • মোক্ষদা বলিলেন, "আহা! জুড়ি যে ! আমন করে বলছিস্—কাদবে না ? কানাই! বাবা ! তুমি যাও, লক্ষ্মী অামার, বাজি-পোড়ানো দেখগে । না গেলে ত ছাড়বে না !”

দিদির বিবাহ-সভার যাত্রা তাহার দেখা হইল না । কানাইলালের চক্ষুদুটি দিয়া অবিশ্রান্ত জল গড়াইতে লাগিল । সে আস্তে-আস্তে সিড়ি বাহিয়া নীচে নামিয়া গেল । তাহার এই কালে মুখখানি কোথায় যাইয়া লুকাইবে, সে তাহা ভাবিয়া পাইতেছিল না । বিশ্বে এত লোক থাকিতে সে-ই কি করিয়া তাহার দিদির অকল্যাণের কারণ হইল ? সে ধীরে-ধীরে সভাশোভনের স্থানে আসিয়া দাড়াইল । যেখানে শ্বেত, পীত, নীল, লোহিত কত-রকমের আধারে কতকত উজ্জল আলোক সকল জলিতেছিল ; তাহার চক্ষে সে-জ্যোতি: অত্যন্ত স্নান বোধ হইতে লাগিল । ঢোল, কাশী ও সানাইএর মঙ্গলবাদ্য তাহার প্রাণে বেদনার স্বরে ঝঙ্কার তুলিতেছিল। সে সেখানে দাড়াইতে ন৷ পারিয়া পুকুরের ঘাটে সোপানের উপর আসিয়া বসিল । সে-গৃহের সকলেই যখন উৎসবের আনন্দে মাতিয়া উঠিয়াছে, তখন একটি দশম বর্ষীয় বালক শুধু হৃদয়ভরা নিগ্রহ লইয়া কি জানি কাহাকে তাহার প্রাণের বেদনা নিবেদন করিতে নির্জন বাপীতীরে আসিয়। বসিল । বালকের মন—চিন্তার কোন শৃঙ্খলা নাই—কোন কিছু সাজাইয়া-গোছাইয়া ভাবিবারও ক্ষমতা নাই— কেবল কতকগুলি গোলমেলে চিস্ত মনে উঠিয় তাহাকে একেবারে বিভ্রান্ত করিয়া তুলিল। সে কেবলই ভাবিতেছিল,—আরও কত ছেলে-মেয়ে খেলিতেছে— বেড়াইতেছে—সৰ্ব্বত্র যাইতেছে-আসিতেছে, কাহাকেও কেহ কিছু বলে না, তাহাকে কেন সকলে এমন ‘দূর’ ‘ছাই’ করিতেছে ? ইহাদের চেয়ে সে কি তাহার আরো নিজের, আরো আপন নয় ? ইহারা আজ একদিন আসিয়া এত আনন্দ লুটিয়া লইতেছে ;