পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্য ] • বামুন-বাগদী \లి(?సి আর তাহার চিরদিনের গৃহে তাহার কেন এ লাঞ্ছনা? ' এ-বাড়ীতে কতকগুলি স্থানে তাহার যাতায়াত নিষিদ্ধ, সে এ-যাবৎ এইমাত্র বুঝিয়া আসিতেছিল ; কিন্তু কোন দিন সে ইহার কিছু কারণ অনুসন্ধান করিয়া দেখে নাই। মহেশ্বরী যেরূপ বুঝাইতেন, যেরূপ বলিতেন, সে সেইরূপ বুঝিত ও করিত ; এবং তাহাই তাহার অবশ্বকৰ্ত্তব্য বলিয়াই সে মনে করিত। কিন্তু এই যে কতকগুলি উড়ো লোক আসিয়া বাগদীর পো' ‘ছুসনে ‘যাস্নে করিতেছে ইহারই বা অর্থ কি ? আচ্ছা ! “বাগদীর পো"-টা কি ? বোধ হয় মস্ত গালি হবে। এইরূপ চিন্তা করিতে-করিতে সে যখন দেখিল হাউই, চবুকী তুবড়ী প্রভৃতি নানা বর্ণের বাজি পুড়িয়া বহির্বাটির প্রাঙ্গণটি আলোকিত করিয়াছে, তখন সে আবার ধীরে-ধীরে তথায় আসিয়া দাড়াইল। কিছুক্ষণ সে-সকল দেখিয়া বাজিকরের যে-ঘরে বসিয়া বাজি পূরিতেছিল সে সেইখানে যাইয়া বসিল। তার পর খোলাট পুরিয়া পাতা পড়িল, হুড়-হুড় ছড়-দুড় করিয়া অসংখ্য লোক আসিয়া আহারে বসিয়া গেল, চৰ্ব্ব্য, চোষ্য, লেহ, পেয় ইত্যাদি নানাবিধ স্বরসাল খাদ্যের দ্বারা সকলে উদর পূর্ণ করিল এবং লম্বা-লম্বা ঢেকুর তুলিয়া চলিয়া গেল। কানাইলাল সেই বারুদঘরের এক অন্ধকার কোণে বসিয়া সমস্ত দেখিল । রাত্রি তখন তিনটা । বালকের তখনও পর্য্যস্ত আহার হয় নাই। এত লোক জন আসিল—খাইল— চলিয়া গেল—সে বসিয়া-বসিয়া দেখিল ! তাহার আহারের ইচ্ছাও হইল না—সে-চেষ্টাও সে করিল না! আনন্দ-উৎসবের মাঝখানে সারাদিন ধরিয়া এই অযথা অপমানে তাহার কৃচি মন একেবারে ভাঙিয়া পড়িয়াছিল। মহেশ্বরী প্রথমত বিবাহের কাৰ্য্যে ব্যস্ত ছিলেন। তার পর মেয়েদের আহারের তত্ত্বাবধান করিতেছিলেন। তিনি ভাবিয়াছিলেন,—কানাইলাল কোথাও-না-কোথাও বসিয়া দুটা খাইয়া লইয়াছে। যখন কাজকৰ্ম্ম সকল মিটিয়া গেল, তখন ঘরে আসিয়া দেখিলেন, কানাই আসে নাই। বলাই তাহার ঘরে ঘুমাইতেছে, অন্যান্ত বালকেরাও নিদ্রা যাইতেছে। মহেশ্বরীর মন চঞ্চল হইয়া উঠিল। সারাদিনের ব্যস্ততায় চাপাপড়া নানা আশঙ্কা মাথা জাগাইয়া উঠিল । তিনি তাড়াতাড়ি তখন তাহাকে অনুসন্ধান করিবার জন্য বাহির বাড়ীতে লোক পাঠাইলেন ; এবং একটি আলো লইয়া নিজে অন্দরের সকল স্থান অঙ্গুসন্ধান করিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। কিন্তু সকল অনুসন্ধানই ব্যর্থ হইল । কানাইকে কোথাও খুজিয়া পাওয়া গেল না। স্বখেন্দু সে-ও ংবাদ পাইয়া নিজে বাহির হইয়া অনেক অনুসন্ধান করিলেন—কোথাও পাইলেন না । কৰ্ম্মের বাড়ীতে সারাদিন খাটুনির পর তখন অনেকেই নিদ্রাভিভূত হইয়া পড়িয়াছিল। মহেশ্বরী পাগলিনীর স্থায় ছুটাছুটি করিতে লাগিলেন । বালকের প্রতি সকলেরই ঈর্য্য—কি জানি কাহারও বাক্যে কোন বিপদ ঘটিল না ত ? সকfল হইতে তাহাকে চোখেচোখে রাথিয়া কেন মিথ্যা-কাজের অসময়ে তাহাকে চোখের আড়াল করিলেন । আর কি তাহাকে পাইবেন ? তিনি বলিলেন “স্বখেন ! তুই বাহিরের পুকুরট। একবার দেখে’ আয়, আমি ভিতরেরটা দেখি।” কথাটা বলিতে বুক কঁাপিয়া যাইতেছিল ; কিন্তু সত্য যদি হয়, কেবল কি মুখে উচ্চারণ না করিয়াই অমঙ্গল ঠেকাইয়া রাখিতে পারিবেন ? স্বখেন্দুকে পাঠাইয়া দিয়া মহেশ্বরী অম্বরের পুষ্করিণীটির চারিধার একবার ঘুরিয়া আসিলেন। তাহার পর সিড়ি বাহিয়া পুকুরে নামিলেন। প্রথমতঃ হাটু জল—তার পর কোমর জল—পরে গলা জল—তার পর ডুবের পর ডুব দিতে লাগিলেন। র্তাহার জানা ছিল যে, কানাইলাল সাতার জামিত, হঠাৎ জলে ডুবিবার কোন সম্ভাবনা নাই। কিন্তু অভিমান-ভরে বয়স্ক লোকে যা করে— বালকে কি তা করিতে পারে না ? প্রিয় বস্তুর অভাব হইলে অসম্ভবও অভিসম্ভব-রূপে মনের উপর আধিপত্য বিস্তার করিয়া বসে । ইতিমধ্যে একজন আসিয়া সংবাদ দিল, কানাইলালকে পাওয়া গিয়াছে। মহেশ্বরী তাড়াতাড়ি জল হইতে উঠিয়া