পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] রচনদ ףפא সেই হিসাবে মৃগব্যাধ (Sirius ) তারাই রুদ্র হওয়া উচিত। বীরভদ্র রুদ্র হইতে উৎপন্ন, এবং সেজন্য বীরভদ্র ও রুদ্র একই,—রুদ্রকে বীরভদ্র বা মৃগব্যাধ নামে অভিহিত করায় বিশেষ কিছু দোষ হয় না । পুরাণে কথিত আছে, শিব মল্লকে গঙ্গা ধারণ করিয়া আছেন ;– এজন্য শিবের এক নাম গঙ্গাধর । আৰ্দ্ৰ নক্ষত্রের ঠিক উপরিভাগে ব্যোম-গঙ্গা ( Milky way ) প্রবাহিত, কিন্তু মৃগব্যাধ তারা এই স্বৰ্গগঙ্গা হইতে অনেক দূরে অবস্থিত। মৃগব্যাধ তারা রুদ্র হইলে তাহার মস্তকে গঙ্গা ধারণ করা সম্ভবপর হয় না। কেবল ইহাই নহে, পুরাণে রুদ্রের যতগুলি নাম আছে, তাহার অধিকাংশ নাম আর্দ্রা-নক্ষত্র-সম্বন্ধে যতটা প্রয়োগ করা যাইতে পারে, লুব্ধক-তারা-সম্বন্ধে ততটা প্রয়োগ করা যাইতে পারে না। রুত্রের এক নাম- চন্দ্রশেখর। ইহার প্রচলিত অর্থ, চন্দ্র যাহার শিখরে অবস্থিত। কিন্তু যদি ইহার এরূপ অর্থ করা যায় যে, যিনি চন্দ্রের শিখরে অবস্থিত, তাহা হইলে দেখা যায়, মৃগশিরার অধিপতি চন্দ্র ; আৰ্দ্ৰ মৃগশিরার ঠিক দক্ষিণ শৃঙ্গের উপরিভাগে অবস্থিত, এজন্য তিনি চন্দ্রশেখর। অপর পক্ষে মৃগব্যাধ-তারার চন্দ্রশেখর নাম-করণের কোনও সঙ্গত কারণ পাওয়া যায় না। রুদ্রের আর-একটি নাম, কৃষবান । বৃষরাশির সন্নিকটে অথচ উপরিভাগে আর্দ্র অবস্থিত,—দেখিলেই মনে হয় যেন, আর্দ্র বৃষের উপর ড়িয়া আছে। মৃগব্যাধ বৃষরাশির বহুদূরে,—মিথুনের প্রায় শেষভাগে অবস্থিত। রুদ্রকে কাল বা মহাকাল লো হইয়া থাকে। যে-সময় মৃগশিরায় বিষুবন থাকিত, স-সময় এই নক্ষত্ৰকে যজ্ঞপুরুষ এবং কাল-পুরুষ-নামে অভিহিত করা হইত। আর্দ্র কাল-পুরুষের দক্ষিণ স্কন্ধু, জন্য তিনি মহাকাল । মৃগব্যাধ তারাকে যদি রুদ্র লা যায়, তাহা হইলে তাহাকে কালপুরুষ-নামে অভিহিত মরা যায় না । আমরা দেখিতে পাই, ভ-চক্রের প্রত্যেক নক্ষত্রের এক-একটি অধিষ্ঠাত্রী দেবতা কল্পনা করা হইয়াছে – যেমন—অশ্বিনীর অশ্বী, ভরণীর যম, কৃত্তিকার অগ্নি, রোহিণীর ব্রহ্মা, মৃগশিরার সোম, আর্ডার রুদ্র, পুনৰ্ব্বস্বর অদিতি, ইত্যাদি ইত্যাদি। এই অধিষ্ঠাত্রী দেবতাগুলির প্রত্যেকটি এক-একটি বৈদিক দেবতা । বেদে নৈসর্গিক ব্যাপারকে দেবতা-জ্ঞানে উপাসনা করা হইত ; স্বতরাং নক্ষত্রগুলির নাম-করণ করিবার জন্য যে এইসকল দেবতাগুলির নাম কল্পিত হইয়াছে, এমন কথা বলা চলে না । বৈদিক ঋষিগণ যে-নক্ষত্রের আকৃতি ও গতিবিধি যে-ভাবে পৰ্য্যবেক্ষণ করিতেন, নৈসর্গিক ব্যাপারের সহিত তুলনা করিয়া তাহাদের সেইরূপ দেবতা-জ্ঞান করিয়াছিলেন ; এবং এইরূপে আটাশটি নক্ষত্রের প্রত্যেকটির এক-একটি দেবত কল্পিত হইয়াছে। বেদে রুদ্রের মূৰ্ত্তি ক্রুর অগ্নিরূপী সুতরাং তিনি একজন সংহারকারী দেবতা । এজন্য বেদাঙ্গ ব্রাহ্মণ ও সংহিতাদি গ্রন্থে বিষুববিন্দুর গতির সম্বন্ধে আখ্যান-রচনা-কালে, প্রজাপতিকে বধ করিবার জন্য আৰ্দ্ৰ নক্ষত্রকেই রুদ্ররূপে পরিকল্পনা করা হইয়াছে। পুরাণাদিতে রুদ্র-সম্বন্ধে যে-সকল আখ্যান রচিত হইয়াছে, তাহার সকলগুলি বেদাঙ্গ সংহিতাদির আখ্যান অবলম্বন করিয়া রচিত হয় নাই । জ্যোতিষ-তত্ত্ব আলোচনা করা পুরাণের উদ্দেশ্য নহে—ধৰ্ম্মোপদেশ দ্বারা লোকশিক্ষা দিবার জন্য পৌরাণিক আখ্যান রচিত। স্বতরাং রুদ্রের পৌরাণিক সকল নামগুলির সহিত বা রুদ্র-সম্বন্ধে সকল আখ্যায়িকার সহিত আৰ্দ্ৰ নক্ষত্রের সম্বন্ধ নির্ণয় করিতে পারা যায় না। পূর্বেই দেখান হইয়াছে যে, পৌরাণিক আখ্যানের কতকগুলি বেদাঙ্গ ব্ৰাহ্মণ সংহিতাদি গ্রন্থ হহতে গৃহীত হইয়াছে। ব্রাহ্মণ গ্রন্থাদির আখ্যান পুরাণ-মধ্যে পরিবত্তিত ও পরিবদ্ধিত হইলেও ইহাদের যতটা অংশ পুরাণ-মধ্যে নিহিত, আমরা পুরাণ-মধ্যে মাত্র ততটাই জ্যোতিষ-তত্ত্ব আশা করিতে পারি।