পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 Oo এই চিঠি-পড়াটাই স্বাক্টর স্রোত,—যে পিচ্চে আর ষে পাচ্চে, সেই দু’জনের কথা এতে মিলেচে, সেই মিলনেই রূপের ঢেউ । সেই মিলনের জায়গাটা হচ্চে বিচ্ছেদ । কেননা, দুর-নিকটের ভেদ না ঘটুলে স্রোত বয় না, চিঠি চলে না। স্বষ্টি-উৎসের মুখে কি একটা কাও আছে, সে এক-ধারাকে দুই-ধারায় ভাগ করে । বীজ ছিল নিতান্ত এক, তাকে দ্বিধা করে দিয়ে স্থখানি কচি পাতা বেরোল, তখনি সেই বীজ পেল তার বাণী ; নইলে সে বোবা, নইলে সে কুপণ, আপন ঐশ্বৰ্য্য আপনি ভোগ করতে জানে না । জীব ছিল একা, বিদীর্ণ হয়ে স্ত্রী-পুরুষে সে দুই হয়ে গেল। তখনি তার সেই বিভাগের ফাকের মধ্যে বসল তার ডাক-বিভাগ। ডাকের পর ডাক, তার অন্ত নেই। বিচ্ছেদের এই ফাক একটা বড় সম্পদ, এ নইলে সব চুপ, সব বন্ধ। এই ফাকটার বুকের ভিতর দিয়ে একটা অপেক্ষার ব্যথা, একটা আকাঙ্ক্ষার টান টন্‌টন্‌ করে উঠল,দিতে-চাওয়ার আর পেতে-চাওয়ার উত্তরপ্রত্যুত্তর এ-পারে ও-পারে চালাচালি হতে লাগল। এতেই দ্বলে" উঠল স্থষ্টি-তরঙ্গ, বিচলিত হ’ল ঋতু-পৰ্য্যায় ; কখনো বা গ্রীষ্মের তপস্তা, কখনো বর্ষার প্লাবন, কখনো বা শীতের সঙ্কোচ, কখনো বা বসন্তের দাক্ষিণ্য ! একে যদি মায়া বল ত দোষ নেই, কেননা এই চিঠি-লিখনের অক্ষরে আবছায়া, ভাষায় ইসারা —এর আবির্ভাব-তিরোভাবের পূরে মানে সব সময়ে বোঝা যায় না। যাকে চোখে দেখা যায় না, সেই উত্তাপ কখন আকাশপথ থেকে মাটির আড়ালে চলে যায় ; মনে ভাবি একেবারেই গেল বুৰি । কিছু কাল যায়, একদিন দেখি মাটির পর্দাফীক প্রবাসী—মাঘ, ১৩৩১ [२8न छोश, २ब्र थ७ করে দিয়ে একটি অঙ্কুর উপরের দিকে কোন-এক আরজন্মের চেন-মুখ খুজচে । যে-উত্তাপটা ফেরার হয়েচে বলে’ সেদিন রব উঠল, সেই ত মাটির তলার অন্ধকারে সেধিয়ে কোন ঘুমিয়ে-পড়া বীজের দরজায় বসে বসে’ ঘা দিচ্ছিল। এমুনি করে’ই কত অদৃশু ইসারার উত্তাপ এক হৃদয়ের থেকে আর-এক হৃদয়ের ফাকে ফাকে কোন চোর-কোঠায় গিয়ে ঢোকে, সেখানে কার সঙ্গে কি কানাকানি করে জানিনে, তার পরে কিছুদিন বাদে একটি নবীন বাণী পর্দার বাইরে এসে বলে *এসেচি” । আমার সহযাত্রী বন্ধু আমার ডায়ারি পড়ে' বললেন, “তুমি ধরণীর চিঠি পড়ায় আর মানুষের চিঠি পড়ায় মিশিয়ে দিয়ে একটা যেন কি গোল পাকিয়েচ। কালিদাসের মেঘদূতে বিরহী-বিরহিণীর বেদনাটা বেশ স্পষ্ট বোঝা যাচ্চে। তোমার এই লেখায় কোনখানে রূপক কোনখানে শাদা কথা বোঝা শক্ত হ’য়ে উঠেচে । আমি বল্লুম, কালিদাস যে মেঘদূত কাব্য লিখেচেন সেটাওঁ” বিশ্বের কথা । নইলে তার একপ্রাস্তে নিৰ্ব্বাসিত যক্ষ রামগিরিতে,আর-একপ্রান্তে বিরহিণী কেন অলকাপুরীতে ? স্বৰ্গ-মর্ত্যের এই বিরহই ত সকল স্বষ্টিতে। এই মন্দাক্রাস্তাছন্দেই ত বিশ্বের গান বেজে উঠচে । বিচ্ছেদের ফাকের ভিতর দিয়ে অণু-পরমাণু নিত্যই যে অদৃশ্য চিঠি চালাচালি করে, সেই চিঠিই স্বষ্টির বাণী । স্ত্রী-পুরুষের মাঝখানেও, চোখে-চোখেই হোক, কানে-কানেই হোক, মনে-মনেই হোক, আর কাগজে-পত্রেই হোক, যে চিঠি চলে সেও ঐ বিশ্ব-চিঠিরই একটি বিশেষ রূপ।