পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] ছিল, তখন বলাই আমার কাজ ছিল, বুঝিয়ে বলার ধার ধাতুম না। কেননা তখন তেপান্তর মাঠের মাঝখানটাতে আমার ঘোড়া ছুটচে, যারা না বুঝে কিছুতেই চাড়ে না, তারা আমার ঠিকানা পায়নি। আজ পনেরো-ষোলো, বিশ-পচিশ, আশি-পচাশি প্রভৃতি নানা-বয়সের প্রাচীন লোকের ঠেসাঠেলি ভিডের মধ্যে এসে পড়েচি । ওদের বোঝাব কি করে', এই দুর্ভাবনা এগন ভুলে থাকাই শক্ত। মুস্কিল এই যে, পৃথিবীতে ছভিক্ষ আছে, মশা আছে, পুলিশ আছে, স্বরাজ, পররাজ, স্বৈরাজ, নৈরাজের ভাবনা আছে, এরই মধ্যে ঐ গা-খোলা ছেলেট দিনের শেষ প্রহরের বেকার বেলাতে ছাদের উপরে ঘুরে বেড়ায় । আকাশের আলিঙ্গনে-বাধা ঐ ভোলা-মন ছেলেটিতে একটি নিত্য-কালের কথা আছে, সে আমি শুনেচি, কিন্তু সে আমি ভাষায় কেমন করে’ স্পষ্ট করে’ তুলব ? আজ মনে হচ্চে, ঐ ছেলেটার কথা আমারি খুব ভিতরের কথা, গোলেমালে অনেক-কাল তার দিকে চোখ পড়েনি। বারো বছরের সেই নিত্য-ভোলা ইস্কুল পালানো লক্ষ্মীছাড়াটা গাম্ভীর্য্যের নিবিড় ছায়ায় কোথায় লুকিয়ে লুকিয়ে খেলা করছিল । এখন ভাবনা ধরিয়ে দিলে, আমার আসল পরিচয় কোন দিকৃটায় ? সেই আরম্ভবেলাকার সাতাশের দিকে, না, শেষ বেলাকার । দায়িত্বের বোঝা মাথায় করে ষাটের আরম্ভে একবার আমেরিকায় গিয়েছিলুম। তখন যুরোপের যুদ্ধ সবে শেষ হয়েচে, কিন্তু তারি নেশায় তখনে আমেরিকার চোখ যে-রকম রক্তবর্ণ যুরোপেরও এমন নয়। তার উপর তখন ইংরেজ নানা উপায়ে আমেরিকার শ্রবণেন্দ্রিয়ের পথ জুড়ে' নিজের ভেপুট বাজাচ্চে । ডিমক্রাসির গুণ এই যে, নিজে ভাববার না আছে তার উদ্যম, না আছে তার শক্তি ৷ ষে চতুর লোক কানে মন্ত্র দেবার ব্যবসা আয়ত্ত করেচে, সে নিজের ভাবনা তাকে ভাবায়। ठेिक ७शनकांब्र शयन्न छांनिटन, उशन हैशrब्रख यां८शब्रिकांब्र বিপুলকায় ডিমক্রাসিকে কানে ধরে নিজের ভাবনা ভাবাচ্ছিল। সেই কানে-মন্ত্র দেবার যন্ত্রটা আমার বিরুদ্ধে তার চাকা চালিয়ে দিলে। ভয় ছিল পাছে আমি পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি 896: ইংরেজের অপযশ ফুটাই। তার আগেই জালিয়ানওয়ালাবাগের ব্যাপার ঘটেছিল । যাই হোক যে কয়ট মাস আমেরিকায় কাটিয়েছি, হাওয়ার মধ্যে যেন একটা বিরোধের ঠেলা ছিল। ভাবুক যেখানেই আছে সেখানেই মামুষের আপনার দেশ, কোনো দেশে সেই ভাবুকতার স্রোতে যখন কম্‌তি পড়ে তখন পদে পদে পাকের বাধায় বিদেশী পথিককে মানি দেয় । যেদিন ভাবুকতার ঔদার্য্য থেকে রিক্ত আমেরিকাকে, দেখলুম সেদিন দেখি সে ভয়ঙ্কর ধনী, ভয়ঙ্কর কেজে, সিদ্ধির নেশায় তার দুই চক্ষু রক্তবর্ণ। তারি পাশে দাড়িয়ে নিজের দিকে চেয়ে দেখি আমি নিতান্ত কাচা, জন্ম-গরীব, একেবারে অস্থিতে-মজ্জাতে বে-হিসাবী । এও বুঝলুম, এ-জগতে কঁাচা মানুষের খুব একট পাকা জায়গা আছে, চিরকেলে জায়গা । ষাট বছরে পৌছে হঠাৎ দেখলুম সেই জায়গাটা দূরে ফেলে এসেচি। যতই বুঝতে পারি ততই দেখতে পাই, পাকা দেয়ালগুলোই মায়া, পাথরের কেল্লাস্ট কয়েদখানা । মন কাদচে, মরবার আগে গা-খোলা ছেলের জগতে আরেকবার শেষ ছেলে-খেলা খেলে নিতে, দায়িত্ববিহীন খেলা । আর কিশোর বয়সে যারা আমাকে কাদিয়েছিল, হাসিয়েছিল, আমার কাছ থেকে আমার গান লুঠ করে” নিয়ে ছড়িয়ে ফেলেছিল, আমার মনের কৃতজ্ঞতা তাদের দিকে ছুটুল। তা’রা মস্ত বড় কিছুই নয় ; তা’র দেখা দিয়েচে কেউ বা বনের ছায়ায়,কেউ বা নদীর ধারে,কেউ বা ঘরের কোণে, কেউ বা পথের বঁাকে । তারা স্থায়ী কীৰ্ত্তি রাখবার দল নয়, ক্ষমতার ক্ষয় বুদ্ধি নিয়ে তাদের ভাবনাই নেই ; তারা চলতে চলতে দুটো কথা বলেচে, সব কথা বলবার সময় পায়নি , তারা কালস্রোতের মাঝখানে বাধ বধিবার চেষ্টা করেনি, তারি ঢেউয়ের উপর নৃত্য করে’ চলে’ গেছে, তারি কলস্বরে স্বর মিলিয়ে ; হেসে চলে’ গেছে, তারি অালোর ঝিলিমিলির মত। তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললুম, “আমার জীবনে যাতে সত্যিকার ফসল ফলিয়েচে সেই আলোর, সেই উত্তাপের দূত তোমরাই । প্রণাম তোমাদের । তোমাদের অনেকেই এসেছিল ক্ষণকালের জন্ত, আধো স্বপ্ন আধো জাগার