পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] তবে ? আমি দেখলুম, রূপ। সে কথাটার অর্থ কি ? রূপ ছাড়া আর কোনোই অর্থ নেই। রূপ শুধু বলে “এই দেখ, আমি হয়ে উঠেচি।” যদি আমার মন সায় দিয়ে বলে, “তাই ত বটে, তুমি হয়েচ, তুমি জাছ।” আর এই বলেই যদি সে চুপ করে যায়, তা হলেই সে রূপ দেখলে হয়ে ওঠাকেই চরম বলে জানলে। কিন্তু সজনে ফুল যখন অরূপ সমূত্রে রূপের ঢেউ তুলে দিয়ে বলে, “এই দেখ আমি আছি", তখন তার কথাটা না বুঝে, আমি যদি গোয়ারের মত বলে বসি, “কেন আছ ?” তার মুখ থেকে যদি অত্যন্ত মিথ্যে জবাব আদায় করে নিই, যদি তাকে দিয়ে বলাই, “তুমি থাবে বলেই আছি” তা হ’লে রূপের চরম রহস্তটা দেখা হ’ল না। একটি ছোট্ট মেয়ে কোথা থেকে আমার যাত্রাপথে জুটে গেছে। তার বয়স আড়াই বছর । তার মধ্যে প্রাণের আনন্দ টলমল করে ওঠে, কত মধুর প্রলাপে, কত মন-ভোলানো ভঙ্গীতে— আমার মন বলে, “মস্ত একটা পাওনা আমি পেলুম।" কি যে পেলুম তাকে হিসাবের অঙ্কে ছকে নেবার জো নেই। আর কিছু নয়, একটি বিশেষ হয়ে-ওঠাকেই আমি চরম করে দেখলুম। ঐ ছোট্ট মেয়ের হয়ে-৪ঠাই আমার পরম লাভ । ও আমার ঘর ঝাট দেয় না, রান্না করে না, তাতে ওর ঐ হয়ে-ওঠার হিসাধটাতে কিছুই কম পড়চে না । বৈজ্ঞানিক এর হয়ত একটা মোট কৈফিয়ৎ দেবে, বলবে, "জীবজগতে বংশরক্ষাটাই সবচেয়ে বড় দরকার,—ছোট মেয়েকে স্বন্দর না লাগলে সেই দরকারটাতে বাধা পড়ে ।” মোটা কৈফিয়ৎটাকে আমি সম্পূর্ণ অগ্রাহ করিনে, কিন্তু তার উপরেও একটা স্বল্প তত্ব আছে যার কোনো কৈফিয়ৎ নেই। একটা ফলের ডালি দেখলে মন খুসি হয়ে ওঠে, আর মাছের ঝোলের পাত্র দেখলে যারা নিরামিষাশী নয় তাদের মন খুসি হতে পারে ; আহারের প্রয়োজনটা উভয়তই আছে ; স্বতরাং খুসির একটা মোটা কৈফিয়ৎ উভয়তই পাওয়া ৰায় । তৎসত্ত্বেও ফলের ডালিতে এমন একটি বিশেষ খুলি আছে যা কোনো কৈফিয়ৎ তলবই করে না । সেইখানে ঐ একটি মাত্র কথা, ফলগুলি বলচে, “আমি আছি,”—আর আমার মম বলে, সেইটেই আমার লাভ । আমার জীবনযাত্রার পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি 8లిసె এই আড়াই বছরের ক্ষুদ্রতম সহচরীটিও মানবের বংশরক্ষার কৈফিয়ৎ দাখিল করেও এমন কিছু বাকি রাখে যেটা বিশ্বের মর্থকুহর হতে উখিত ওঙ্কার ধ্বনিরই স্বর। বিশ্ব বলচে, ওঁ ; বলচে, ই ; বলচে, অল্পমহং ভোঃ, এই যে আমি —ঐ মেয়েটিও সেই ওঁ, সেই ই, সেই এই-যে-আমি । সত্তাকে সত্তা বলেই যেখানে মানি, সেখানে তার মধ্যে আমি সেই-খুসিকেই দেখি ষে খুলি আমার নিজের মধ্যে চরমরূপে রয়েচে । দাসের মধ্যে সেই খুলিকে দেখিনে বলেই দাসত্ব এত ভয়ঙ্কর মিথেন্থ আর মিথ্যে বলেই এত ভয়ঙ্কর তার পীড়া । স্বষ্টির মূলে এই লীলা, নিরস্তুর এই রূপের প্রকাশ। সেই প্রকাশের অহৈতুক আনন্দে যখন যোগ দিতে পারি তখন স্বটির মূল আনন্দে গিয়ে মন পৌছয়। সেই মূল আনন্দ আপনাতেই আপনি পৰ্য্যাপ্ত, কারো কাছে তার কোনো জবাবদিহী নেই। ছোট ছেলে ধূলোমাটি কাটিকুটাে নিয়ে সারাবেল বসে’ বসে একটা কিছু গড়চে । বৈজ্ঞানিকের মোট কৈফিয়ৎ হচ্চে এই যে, গড়বার শক্তি তার জীবনযাত্রার সহায়, সেই শক্তির চালনা চাই। এ কৈফিয়ৎ স্বীকার করে নিলুম ; তবুও কথাটার মূলের দিকে অনেকখানি বাকি থাকে । গোড়াকার কথা হচ্চে এই যে, তার স্বষ্টিকৰ্ত্ত মন বলে “হোক", "Lot there be”— সেই বাণীকে বহন করে ধূলোমাটি কুটােকাটি সকলেই বলে’ ওঠে, “এই দেখ হয়েচে ।” এই হওয়ার অনেকখানিষ্ট আছে শিশুর কল্পনায়, সামনে যখন তার একটা ঢিবি, তখন কল্পনা বলচে, “এই ত আমার রূপকথার রাজপুত্রের কেল্লা।" তার ঐ ধূলোর শুপের ইসারার ভিতর দিয়ে শিশু সেই কেল্লার সত্ত মনে স্পষ্ট অনুভব করচে। এই অনুভূতিতেই তার আনন্দ ৷ গড়বার শক্তিকে প্রকাশ করচি বলে’ আনন্দ নয়, কেননা সে শক্তি এ ক্ষেত্রে বিশেষ প্রকাশ পাচ্চে না । একটি রূপ-বিশেষকে চিত্তে স্পষ্ট দেখতে পাচ্চি বলে’ আনন্দ । সেই রূপটাকে শেষ লক্ষ্য করে দেখাই হচ্চে স্বটিকে দেখা, তার আনন্দই স্বটির মূল আনন্দ । গান জিনিষটা নিছক স্বষ্টিলীলা। ইন্দ্ৰধনু যেমন বৃষ্টি