পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এবাসী—মাঘ, ১৩৩১ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড আর রৌজের জাছ, আকাশের ছটে খামখেয়ালি মেজাজ দিয়ে গড় তোরণ, একটি অপূর্ব মুহূৰ্ত্ত-কাল সেই তোরণের নীচে দিয়ে জয়যাত্রা করবে। হয়ে গেল এই খেলা, মুহূৰ্ত্তটি তার রঙীন উত্তরীয় উড়িয়ে দিয়ে চলে গেল,--তার বেশী আর কিছু নয়। মেজাজের এই রঙীন খেলাই হচ্চে গীতিকাব্য। ঐ ইন্দ্ৰধন্থর কবিটিকে পাকড়াও করে যদি জিজ্ঞাসা করা যেত, “এটার মানে কি হ’ল,” সাফ জবাব পাওয়া যেত, “কিছুই না।” “তবে ?” “আমার খুলি।” রূপেতেই খুলি,—স্বষ্টির সব প্রশ্নের এই হ’ল শেষ উত্তর। এই খুসির খেলাঘরে রূপের খেলা দেখে আমাদের মন ছুটি পায় বস্তুর মোহ থেকে, একেবারে পৌছয় আনন্দে, এমন কিছুতে যার ভার নেই, যার মাপ নেই, যা अनिक्र्दछनौम्न । - সেদিন সমূত্রের মাঝে পশ্চিম আকাশে "ধূমজ্যোতিঃসলিলমরুতে’’ গড় স্বৰ্য্যাস্তের একখানি রূপস্থষ্টি দেখলুম। আমার যে পাকাবুদ্ধি সোনার খনির মুনফা গোনে, সে বোকার মত চুপ করে রইল, আর আমার যে-কাচ-মনটা বললে, “দেখেচি,” সে স্পষ্ট বুঝতে পারলে সোনার খনির মুনফাটাই মরীচিকা, আর যার আবির্ভাবকে ক্ষণকালের জন্যে ঐ চিহ্নহীন সমূত্রে, নামহীন আকাশে দেখা গেল তারই মধ্যে চিরকালের অফুরান ঐশ্বৰ্ষা, সেই হচ্চে অরূপের মহাপ্রাঙ্গণেরূপের নিত্যলীলা। ’ স্বষ্টির অন্তরতম এই অহৈতুক লীলার রসটিকে যখন মন পেতে চায় তখনি বাদশাহী বেকারের মত সে গান লিখতে বসে। চারখানি পাপড়ি নিয়ে একটি ছোট জুইফুলের মত একটুখানি গান যখন সম্পূর্ণ হয়ে ওঠে, তখন সেই মহাখেলাঘরের মেজের উপরেই তার জন্যে জায়গা করা হয় যেখানে যুগ যুগ ধরে’ গ্রহনক্ষত্রের খেলা হচ্চে। সেখানে যুগ আর মুহূৰ্ত্ত একই, সেখানে স্বৰ্য্য আর সুর্য্যমণি ফুলে অভেদাত্মা, সেখানে সাঝসকালে মেঘে মেঘে যে রাগরাগিণী, আমার গানের সঙ্গে তার অস্তরের মিল আছে । আজ পনেরো-ষোলো বছর ধরে কৰ্ত্তবাবুদ্ধি আমাকে নানা ভাষন নানা ব্যস্ততার মধ্যে জোরে টেনে নিয়ে ফেলে আমার কাছ থেকে কবে কাজ আদায় করে নিচ্চে । - রাখে। এখানকার সকল কাজই মোটা কৈফিয়তের অপেক্ষা খোচা দিয়ে দিয়ে কেবলি জিজ্ঞাসা করে, “ফল হবে কি ?” সেইজন্তে যার ফরমাস কৈফিয়তের সীমানা পেরিয়ে আপন বেদরকারী পাওনা দাবী করে, ভিতরে ভিতরে সে আমাকে কেবলি প্রশ্ন করতে থাকে, “তুমি কবি, চির-ছুটির পরোয়ানা নিয়ে পৃথিবীতে এসেচ, তার করলে কি ? কাজের ভিড়ের টানাটানিতে পড়ে’ , একেবারেই জাত খুইয়ে বোসে না।” নিশ্চয় ওরই এই তাগিদেই আমাকে গান লেখায়, হটগোলের মধ্যেও নিজের পরিচয়টা বজায় রাখবার জঙ্কে, লোকরঞ্জনের জন্যে নয়। কৰ্ত্তব্যবৃদ্ধি তার কীৰ্ত্তি ফেঁদে গম্ভীরকণ্ঠে বলে, “পৃথিবীতে আমি সবচেয়ে গুরুতর”—তাই আমার ভিতরকার বিধিদত্ত ছুটির খেয়াল বাশি বাজিয়ে বলে, "পৃথিবীতে আমিই সবচেয়ে লঘুতম।” লঘু নয় ত কি ! সেইজন্তে সব জায়গাতেই হাওয়ায় হাওয়ায় তার পাখা চলে, তার রঙ-বেরঙের পাখা। ইমারতের মোট ভিং ফেদে সময়ের সদ্ব্যয় করা তার জাত-ব্যবসা নয় , সে লক্ষ্মীছাড়া ঘুরে বেড়ায় ফাকির পথে, ঘে-পথে রঙের ঝরনা, রসের ধারা ঝরে ঝরে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়চে বিপুল একটা বাজেখরচের মত। আমার কেজো পরিচয়টার প্রতি ঈর্ষা করে” অবজ্ঞা করে আমার অকেজো পরিচয়টা আমাকে যখন-তখন গান লিখিয়ে লিখিয়ে নিজের দলিল ঠিক করে রাখচে । যখন বিরুদ্ধপক্ষে মাতব্বর সাক্ষী এসে জোটে, তখনি নিজের দাবীর দালল খুব বড় করে তুলতে হয়। যতদিন ধরে’ এক পক্ষে আমার কাজের রোকড় খুব মোটা হয়ে উঠচে ততদিন ধরেই অন্তপক্ষে আমার ছুটির নর্থীও অসম্ভব-রকম ভারী হয়ে উঠল । এই যে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলচে, এটা আমার অস্তরের খাস-কামরায় । আমি আসলে কোন পক্ষের সেইটের বিচার নিয়ে আমারই কাছে নালিব । তার পরে কথাটা এই যে, ঐ "শিশু ভোলানাথ”-এর কবিতাগুলো খামক কেন লিখতে বসেছিলুম ? সেও লোকরঞ্জনের জন্তে নয়—নিতান্ত নিজের গরজে । পূর্বেই বলেচি, কিছুকাল আমেরিকার প্রৌঢ়তার