পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ra" ৪র্থ সংখ্যা ! মরুপারে ঘোরতর কার্ধ্যপটুতার পাথরের দ্বর্গে আটক পড়েছিলুম। সেদিন খুব স্পষ্ট বুঝেছিলুম জমিয়ে তোলবার মত এত বড় মিথ্যে ব্যাপার জগতে আর কিছুই মেই। এই জমাবার জমাদারটা বিশ্বের চিরচঞ্চলতাকে বাধা দেবার স্পৰ্ব করে ; কিন্তু কিছুই থাকবে না, আজ বাদে কাল সব সাফ হয়ে যাবে। ষে-স্রোতের ঘূর্ণিপাকে এক এক জায়গায় এইসৱ বস্তুর পিওগুলোকে স্ত,পাকার করে দিয়ে গেছে, সেই স্রোতেরই অবিরত বেগে ঠেলে ঠেলে সমস্ত ভাসিয়ে নীল সমুদ্রে নিয়ে যাবে—পৃথিবীর বক্ষ স্বস্থ হবে। পৃথিবীতে স্বটির যে লীলা-শক্তি আছে সে যে নিলোভ, সে নিরাসক্ত, সে অকুপণ,—সে কিছু জমতে দেয় না ; কেননা জমার জঙ্কালে তার স্বাক্টর পথ আটকায়,— সে ৰে নিতানূতনের নিরস্তর প্রকাশের জন্তে তার অবকাশকে নিৰ্ম্মল করে রেখে দিতে চায়। লোভী মাহব কোথা থেকে জঞ্জাল জড় করে” সেইগুলোকে আগলে রাখবার জন্তে নিগড়কদ্ধ লক্ষ লক্ষ দাসকে দিয়ে প্রকাও সব ভাণ্ডার তৈরি করে তুলচে । সেই ধ্বংস-শাপগ্ৰস্ত ভাণ্ডারের কারাগারে জড়বস্তুপুঞ্জের অন্ধকারে বাস বেঁধে সঞ্চয়-গর্বের ঔদ্ধত্যে মহাকালকে কৃপণটা বিন্দ্রপ করচে,— এ বিস্ক্রপ মহাকাল কখনোই সইবে না। আকাশের উপর দিয়ে যেমন ধূলা-নিবিড় আঁধি ক্ষণকালের জন্তে স্বৰ্য্যকে পরাভূত করে দিয়ে তার পরে নিজের দৌরাত্মোর কোনো চিহ্ন না রেখে চলে যায়, এসব তেমনি করেই শৃঙ্কের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কিছুকালের জন্তে আমি এই বন্ধ-উদগারের অন্ধ-যন্ত্রের মুখে এই বৰগঞ্চত্বের অন্ধভাণ্ডারে বন্ধ হয়ে আতিথ্যহীন সন্দেহের বিষবাম্প্রে শ্বাসরুদ্ধপ্রায় অবস্থায় কাটিয়েছিলুম। তখন আমি এই ঘন দেয়ালের বাইরের রাস্তা থেকে চির পখিকের পায়ের শব্দ শুনতে পেতুম । সেই শব্দের ছন্দই ষে জামার রক্তের মধ্যে বাজে, আমার ধ্যানের মধ্যে ধ্বনিত হয়। আমি সেদিন স্পষ্ট বুঝেছিলুম, আমি ঐ পথিকের সহচর । -.م আমেরিকার বন্তগ্রাস থেকে ৰেরিয়ে এসেই “শিশু পুশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি 88? ভোলানাথ” লিখতে বলেছিলুম। বন্দী যেমন র্যাক পেলেই ছুটে আসে সমূত্রের ধারে হাওয়া খেতে, তেমনি করে’। দেয়ালের মধ্যে কিছুকাল সম্পূর্ণ আটুক পড়লে তবেই মানুষ স্পষ্ট করে আবিষ্কার করে, তার চিত্তের জন্তে এত বড় আকাশেরই ফাকাটা দরকার। প্রবীণের কেল্লার মধ্যে আটকা পড়ে সেদিন আমি তেমনি করেই আবিষ্কার করেছিলুম, অন্তরের মধ্যে এ শিশু আছে তারই খেলার ক্ষেত্র লোকে-লোকান্তরে বিস্তৃত। এইজন্তে কল্পনায় সেই শিশুলীলার মধ্যে ডুব দিলুম, সেই শিশুলীলার তরঙ্গে স।তার কাটলুম, মনটাকে স্নিগ্ধ করবার জন্তে, নিৰ্ম্মল করবার জন্তে, মুক্ত করবার জন্তে । এ কথাটার এতক্ষণ ধরে’ আলোচনা করচি এইজন্তে যে, যে-লীলা-লোকে জীবনযাত্রা স্বরু করেছিলুম, ষে লীলাক্ষেত্রে জীবনের প্রথম অংশ অনেকটা কেটে গেল, সেইখানেই জীবনটার উপসংহার করবার উদ্বেগে কিছুকাল থেকেই মনের মধ্যে একটা মন-কেমন-করার হাওয়া বইচে । একদা পদ্মার ধারে আকাশের পারে সংসারের পথে যারা আমার সঙ্গী ছিল, তারা বলচে সেদিনকার পালা সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যায়নি, বিদায়ের গোধূলি-বেলায় সেই আৰম্ভের কথাগুলো সাঙ্গ করে” যেতে হবে । সেইজন্তেই সকালবেলাকার মল্লিকা সন্ধ্যাবেলাকার রজনী-গন্ধা হয়ে তার গন্ধের দূত পাঠাচ্চে। বলচে, তোমার খ্যাতি তোমাকে নাটামুক, তোমার কীৰ্ত্তি তোমাকে না বাখুক, তোমার গান তোমাকে পথের পথিক করে’ তোমাকে শেষ যাত্রায় রওনা করে দিক। প্রথম বয়সের বাতায়নে বসে’ তুমি তোমার দূরের বধুর উত্তরায়ের মুগন্ধি হাওয়া পেয়েছিলে। শেষ বয়সের পথে বেরিয়ে গোধূলি-রাগের রাঙা আলোতে তোমার সেই দূরের বধুর সন্ধানে নিৰ্ভয়ে চলে’ যাও । লোকের ডাকাডাকি শুনো না । স্বর ষেদিক্‌ থেকে আসচে সেই দিকে কান পাতো—অীর সেই দিকেই ডানা মেলে দাও সাগরপারের লীলা-লোকের আকাশপথে । যাবার বেলায় কবুল করে ষাও যে, তুমি কোনো কাজের নও, তুমি অস্থায়ীদের দলে ।