পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] ধ্বংস-পথের যাত্রী এরা— 8& অজিত একটা ফাকা মাঠের উপর আসিয়া পড়িল । বৃষ্টি তখন ধরিয়া গেছে। পাড়াগায়ের মানুষ, এই ফক্ষা আলো-বাতাসে আসিয়া সে যেন একটুখানি স্থাপ, ছাড়িয়া বঁচিল । মাঠের স্বমুখে পচা পানায়-ভৰ্ত্তি একটা ছোট পুকুর, তাহারই চারিপাশে অনেকখানা জায়গা জুড়িয়া খোলার বস্তি। তাহারই ও-পাশে কয়েকটা নারিকেল গাছের ফাকে-ফাকে আবার সারি-সারি বাড়ী আরম্ভ হইয়াছে। বস্তির চতুঃসীমায় রাস্তার নাম বা নম্বরের কোনও বালাই ছিল না, খাপরার ছোট-ছোট বাড়ীগুলার পাশ দিয়া কর্দমাক্ত সরু একটা পায়ে-চলার পথ সোজা চলিয়া গেছে । পথটায় যেমন কাদা, তেমনি দুর্গন্ধ। বাশের ছাতির বঁটিটা মাটিতে টিপিয়া টিপিয়া অজিত অতি সাবধানে সেই পথ দিয়া চলিতে-চলিতে হঠাৎ একটা বহু পুরাতন ইট-বাহির-করা ভাঙাবাড়ীর উঠানে গিয়া পথ হারাইয়া ফেলিল । পুৰ্ব্বপশ্চিমে লম্বালম্বি একটা দোতলা বাড়ী, স্বমুখে কাঠের রেলিং-দেওয়া একটুখানি বারান্দ, তাও আবার রেলিং ভাঙ্গিয়া স্থানে-স্থানে ঝুলিয়া পড়িয়াছে,—আবার কোথাও বা আস্ত আছে ; কুলি-ধাওড়ার মত উপর-নীচে সারিসারি অনেকগুলি অন্ধকার ঘর। সম্মুখে একটুখানি উঠান বাদ দিয়া তাহারই সমসমান্তরালে ঘরের আর-একটা সারি চলিয়া গেছে কিন্তু তাহার আর দোতলা নাই,— ওপারের ভাঙা বারান্দ হইতে এ-পারের ছাতে আসিবার জন্য মাঝে মাঝে সেতু প্রস্তুত করিয়া দেওয়া হইয়াছে। উঠানের মাঝে দুইটা জলের কল,—এ-ধারে একট, আর ওই ও-ধারে একটা । কিন্তু কল দুইটার চারিদিকে হিন্দুস্থানী, থোট্টা, ভাটিয়া, উড়িয়া, বাঙ্গালী, নানাজাতীয় বিস্তর পুরুষ-রমণী, লোটা, টব, বালতি ইত্যাদি লইয়া আপন-আপন-ভাষায় চেচামেচি করিয়া যেন হাট বসাইয়া দিয়াছে। অজিত একবার এদিক-ওদিক বেশ ভাল করিয়া তাকাইয়া দেখিল,—কোথাও-বা স্তাকৃরার ঠক্‌ঠকানি শুরু হইয়াছে, কোথাও-বা কামার-শালার হাপর চলিতেছে,—একটা লোক লালরঙের একটা গরম লোহ সাড়াসী দিয়া চাপিয়া ধরিয়াছে, দুইদিক হইতে দুইজনা তাহার উপর লোহার হাতুড়ি মারিয়া আগুনের ফিনকি উড়াইতেছে। কোনও ঘরে বা ধোপার ইন্ত্রি চলিতেছে, আর তাহারই একটু দূরে একটা বন্ধ-ঘরের দরজার গায়ে ভাঙা টিনের উপর চা-খড়ি দিয়া লেখা রহিয়াছে,—ষ্টীল ট্রাঙ্ক, বুটজুতা, চট জুতা, স্বট্‌কেস। মিস্ত্রী—স্থখনলাল রুইদাস । মৃতরাং এই প্রকাগু বাড়ীটা কোনও ভদ্রগৃহস্থের পর্দাওয়ালা বাড়ী নয়, এবং তাহার এই অনধিকার প্রবেশ লইয়া যে কোনপ্রকার হাঙ্গামা হইতে পারে না, ইহা ভাবিয়া অজিত কথঞ্চিৎ আশ্বস্ত হুইল বটে, কিন্তু আজ এই প্রথম কলিকাতায় আসিয়া এখনও যে রমেশের উদ্দেশ মিলিল না, কোথায় গেলে যে মিলিবে, —মিলিবে কি মিলিবে না, এই দুশ্চিন্তায় তাহার গায়ে যেন জর আসিল। চলাচলের স্থবিধার জন্য জল-ছপছপে উঠানটার উপর সারি দিয়া ইট পাতিয়া দেওয়া হইয়াছিল, সেই একটা ভাঙা ইটের উপর অতিকষ্ট্রে দুইটা প। রাখিয়া একজন প্রৌঢ় বাঙ্গালী ভদ্রলোক, ঘটি হাতে করিয়া জল লইবার জন্য কলতলার জনতার একপাশে উদ্‌গ্ৰীব হইয়া দাড়াইয়াছিলেন। চেহারা অত্যন্ত কদাকার,—পেটুটা যেমন মোটা গলাট আবার তেমনি সরু, মাথার উপর প্রকাণ্ড একটা টাক, চোখ দুইটা নিতান্ত ছোট, নাকের নীচে বিড়ালের মত খাড়া হইয়া যে কয়েকটি গোফ, উঠিয়াছে, দূর হইতে অনায়াসে সেগুলি গণিতে পারা যায়। অজিত একটুখানি কাছে সরিয়া আসিয়া তাহাকেই জিজ্ঞাসা করিল, বাইরে যাবার পথ কোনদিকে মশাই ? হাতের খটিটা উচু করিয়া তুলিয়া ধরিয়া ভিণি যেন একটুখানি বিরক্ত হইয়াই বলিলেন, চলে’ যা ও এইদিকে সোজ।। ওই ধে ধোপা-বেীএর দোরে গাধাট। দাড়িয়ে রয়েছে, তারই পাশে ফটক্‌ ৷ অজিত চলিয়া ধাইতেছিল, আবার কি ভাবিয়া ফিরিয়া দাড়াইয়া কহিল, পরাণ মণ্ডলের গলিট কোন দিকে গেলে পাবো মশাই ? তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, পরাণ মণ্ডলস্ লেন ? এইটে এইটে,—কেন ? ক’ নম্বর ? অজিত বলিল, পাচের পর দুই, তার পর এফ ।