পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] ম্যানেজার-বাবু ঘরে প্রবেশ করিয়াই কহিলেন, আমার গান শুনে মনে-মনে হাস্ছেন নাকি—ইয়ে বাবু ? শুধু হাসি নয়, তাহার এই অপূৰ্ব্ব সঙ্গীত, অজিতের মনে করুণ এবং রুদ্র রসেরও উদ্রেক করিয়া দিয়াছিল, তাই সে কি উত্তর দিরে কিছুই ঠাহর করিতে না পারিয়া তাহার মুখের পানে একবার তাকাইবামাত্র, তাহাকে সে অপ্রিয় সত্য উচ্চারণের কুণ্ঠ হইতে অব্যাহতি দিয়া ম্যানেজার-বাপু বলিয়া উঠিলেন, বুঝছেন না মশাই, একসঙ্গে দুই কাজই হয়ে গেল। গান গাওয়াকে গান গাওয়াও গুল, আর ওই বেজাত ব্যাটা বিধৰ্ম্মী চামারটাকে শুনিয়ে দেওয়াও হ’ল । সে কি আর বুঝতে পারেনি ভাবছেন ? ঠি-কু টের পেয়েছে । টিন পিটোতে পিটোতে ধে-রকম কটুমটু করে সে আমার মুথের পানে একথান। চাউনি শুনিলে, ভাবলুম, আসে বুঝি ব্যাট হাতুড়ি নিয়েই ভেড়ে ! --সাধে কি আর তাড়াতাড়ি উপরে এসে গানপান। পূরে দিলুম, মশাই ? কই, আস্থক্ ত দেখি এইখানে,— একবার মজ বুঝিয়ে দিই তা হ’লে । এ আমার নিজস্ব ঋরিবৃঢিকুসন (jurisdiction) বাবা, –দশটি বছরের লীজ, lease ). এই বলিয়া তিনি র্তাহার লালরঙের ময়লা-পড়া ংব ড়ো-খেবড়ো দাতের দুইটি পাটি বাহির করিয়া হাসিতে মুরু করিলেন এবং সঙ্গে-সঙ্গে তাহার দুই চোয়াল বাহিয়া পানের কস গড়াইয়া পড়িতে লাগিল । কিন্তু তাহার এই সারগর্ত কথাগুলি বুঝিবার পক্ষে অজিত যে এখনও নিতান্ত ছেলেমামুষ, তাহার সেই অসাধারণ গষ্ঠীর মুখখান দেখিয়াই সে-কথাটা বুঝিতে ঠাঙ্গার অধিক বিলম্ব হইল না ; কাজেই অরসিক এই নাবালকটার সহিত বৃথ। বাক্যব্যয় না করিয়া তৎক্ষণাং তিনি তাহার মাদুরের উপর গিয়া উপবেশন করিলেন এবং iধত্বরক্ষিত একটি ফাক দিয়াশালাইএর বাক্স হইতে কিঞ্চিৎ স্ত গ্রহণ করিয়া গম্ভীরভাবে কছিলেন, ঘুমিয়ে-টুমিয়ে যাই ৪ খাবার সময় আমায় উঠিয়ে দিয়ে ঘেণ্ড । —আমি এক্ষুণি চললাম। বলিয়। অজিত উঠিয়। তাহার জুতা-জোড়াটি পায়ে দিতে লাগিল । —আবার আসছ ত ? রাত্রের খাবার— —আজ্ঞে ই, আসব। বলিয়া সে বাহির হইয়া গেল । ཤ་ ধ্বংস-পথের যাত্রী এরা— 8S বারান্দাট। পায়ের ভরে পর থর করিয়া কঁাপিতেছিল । অতি সাবধানে বারীন্দ। পার হইয়া সিড়িতে নামিবার পূৰ্ব্বে অজিত একবার পিছন ফিরিয়া তাকাইতেই ম্যানেজার-বাবুর সহিত তাহার চোখোচোথি হইয়৷ গেল ; তিনি তখন দরজার চৌকাঠের বাহিরে মুখ বাড়াইধ। এদিকৃ-ওদিকৃ নীচে স্থখনলাল মিস্ত্রির হাতুড়ি ও টিনের আওয়াজ তখনও থামে নাই এবং বোধ করি বা সেই কারণেই তিনি তাহার সেই জানালাহীন অন্ধকার ঘরের একমাত্র দরজাটিও তাড়াতাড়ি বন্ধ করিয়া দিয়া ভিতর গুইতে সশব্দে খিল তাটিয়া দিলেন । তাকাইতেছিলেন । পথে-পথে ঘুরিয়া বেড়ানো ছাড়া অজিতের ধাইবার স্থান কোথাও ছিল না, তাই সে পথে ঘুরিবার সঙ্কল্প লইয়াই বাহির হইল । রৌদ্রের তেজে ছোট রাস্তার কাদ! তখন কতক শুকাইয়াছে, কতক বা শুকায় নাই, আজিকার প্রভাতে যে বর্ষা নামিয়াছিল, বড় রাস্তাগুল। দেখিলে সে-কথা বুঝিবার উপায় নাই। এম্নি একটা বড় রাস্ত ধরিয়াই অজিত পথ চলিতেছিল। দুই দিকের প্রকাও বাড়ীগুলার পাশ দিয়া চলিতে-চলিতে তাহার নিজের অবস্থার কথা সে ধেন ক্ষণেকের জন্য বিশ্বত হইয়া গেল। দু’চার দিনের মধ্যেই একটা ধা হোকু-কিছু চাকুরির চেষ্টা দেখিয়া কিছু অর্থের সংস্থান করিতে না পারিলে যে, তাঙ্গকে এইসব বড় বাড়ীর ছায়ার নীচে পডিয়াই অনাহারে মরিতে হইবে, সে-কথা তাঙ্গার মনে হইল না। কিয়দ্ধর গিয়া দেখিল, পপের পাশেই লোহার রেলিং দিয়া ঘেরা একটা প্রকাও পার্কের ভিতর অসংখ্য ভিক্ষুক জড় ইষ্টয়াছে । জিজ্ঞাসা করিয়া জানিল, কোন একজন বড়লোকের নাকি মৃত্যু হইয়াছে এবং আজ র্তাহার শ্রাদ্ধের দিনে এইসব কাঙালীদের নাকি ভোজন করানো হইবে। একটা গাছের ছায়ার তলায় রেলিং ধরিয়া অজিত তাহাই দেখিতে লাগিল । পার্কের একট। দরজা খুলিয়া দেওয়া হইয়াছে, কত লোক আসিতেছে, এখনও যে কত