পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ) । কখনও বা তোলা ফুল লইয়া পথে ছিন্ন-ভিন্ন করিতেকরিতে সে বাড়ী জালিত। ' সেদিন কি জানি কি খেয়ালের বশে সে ফুলগুলি সযত্বে তুলিয়া আনিয়া রকের উপর বসিয়াছিল এবং কাহার যেন আগমন প্রতীক্ষা করিতেছিল। মহেশ্বরী স্বান করিয়া ভিজা কাপড়ে প্রতিদিনের মতন সাজি ভরিয়া ফুল তুলিয়া লইয়া যখন পূজার ঘরের দিকে আসিতেছিলেন, তখন কানাইলাল ঈষৎ বক্র দৃষ্টিতে এক-একবার তাহাকে দেখিতেছিল এবং পরক্ষণে আবার তাহার যত্নলব্ধ সামগ্রীর উপর দৃষ্টি নত করিতেছিল। মহেশ্বরী দূর হইতে তহে দেখিতে দেখিতে আসিতেছিলেন। সদ্যপ্রস্ফুটিত পুপগুলি দেখিয়া আনন্দের বেগে দেবতার চরণে সেইগুলি নিবেদন করিবার জন্য যেন তাহার মন অত্যন্ত ব্যাকুল হইয়া উঠিতেছিল। তিনি নিকটে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাঃ ! বেশ ফুলগুলি ত! কোথায় পেলি ?” কানাই উৎসাহিত হইয়া কহিল, “মিত্তিরদের বাগানে আর চৌধুরীদের পুকুরে ।” মহেশ্বরী বিস্ময়ে চক্ষু-দুটি স্থির করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “পুকুরে ? কি করে তুললি?” “সাতার কেটে ।” “অত বড় পুকুরে সাতার কাটুতে গেলি ? ডুবে গেলে কে দেখত ?” কানাই একটু হাসিয়া কহিল, “ডুবব কেন ? সাতার জানিনে ?” । “কেন তুললি ?” সে দক্ষিণ হস্তের একটি অঙ্গুলি গালের মধ্যে পূরিয়া দিয়া হাতখানা জান্থর উপরে রাখিয়া ফুলগুলির দিকে দৃষ্টি নত করিল। ততক্ষণে তাহার চক্ষু-দুটি অত্যস্ত বিমর্ষ হইয়া পড়িয়াছিল। মহেশ্বরী পুনৰ্ব্বার জিজ্ঞাসা করিলেন, “কোথায় মিত্তিরদের বাগান—আর কোথায় চৌধুরীদের পুকুর, হঠাৎ এতটা করতে কি গরজ পড়ে’ গেল তোর ?” ... • কানাই সেইরূপই বসিয়া রহিল । «Šeš-У e আমি . বামুন-বাগদী (te') মহেশ্বরী ফুলের সাজি লইয়া পূজার ঘরে ঢুকিলেন। এবং বস্ত্র ত্যাগ করিয়া পূজায় বসিলেন। কিন্তু পূজায় মনোনিবেশ করিতে পারিলেন না। রহিয়া-রহিয়া তাহার কেবলই মনে হইতে লাগিল, বালক কেন এমন ভুল জায়গায় নৈবেন্ত সাজাইবার বাসনা করিতেছে ? তিনি মন্ত্র ভুলিয়া গেলেন । দেবতাকে কেবলই জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন, “বলে দেব ! তুমি কাহার দেবতা ? আমার— না জগৎমৃদ্ধ সবারই ? যদি তুমি ভাগাভাগির দেবতা না হও—যদি আমার—তাহার সবারই দেবতা হও, তবে ঐ দরিদ্র বালকের প্রতি-পুপ গ্রহণ করিতে তোমাকে বাধিবে কেন ? আমরা সীমানার চৌহদ্ধি লইয়া মারামারি কাটাকাটি করি ; কিন্তু যিনি অসীম, অনন্ত, যিনি বিশ্বেশ্বর, তাকে আমরা ঈশ্বরজ্ঞানে আকারের বেড়াজালে বন্দী করিতে আমাদের যে-সাহস দেখাই—সে-সাহস কি তুমিই দিয়েছ নাথ ?” সেদিন মন্দিরের মধ্যে এইসকল দ্বন্দ্বগুলির মীমাংসা লইয়া মহেশ্বরীর অনেকটা সময় কাটিল । তার অশ্রুসিক্তচক্ষে যখন তিনি বাহিরে আসিলেন তখন দেখিলেন বালকটি ফুলগুলি লইয়া তখনও পর্য্যস্ত সেইখানে সেইভাবেই বসিয়া রহিয়াছে । তাহার মনে চিন্তা বা ইচ্ছা কোনো-কিছুরই একটা স্থিতিভাব ছিল না। অথচ কি যেন একটা অনির্দিষ্ট ব্যাকুলতার উপর কম্পনের বেগে সে ভাসিয়া-ভাসিয়া চলিতেছিল। মহেশ্বরী কহিলেন, "চুপ করে বসে’ রয়েছিস যে ? নাইতে-খেতে হবে না ?” মহেশ্বরী চলিয়া গেলে বালক তাহার কষ্ট-চয়িত পুষ্পগুলি ছিড়িয়া কুটি-কুটি করিয়া সেইখানে রাখিয়া চলিয়া গেল। তাহার দুই চক্ষু ফাটিয়া জল বাহির হইয়া আসিতেছিল। অভিমানে কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া উঠিতেছিল। কিছুক্ষণ পরে সে বলাইএর সঙ্গে আবার হাসিতেহাসিতে নাচিতে-নাচিতে স্বান করিতে গেল। সে বালক বই ত নয়। ভিতরের অভিমান, অন্তরের দ্বন্দ্ব যতই তাহাকে আকুল করুক, তাহার শিশুস্থলভ হাসি ও আনন্দও ত সমান সত্য ! তাহাকে সে ছাড়ে কি করিয়া ? আহারাদির পর কানাইলালকে লইয়া শয়ন করিলে