পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হ’ত । . কিন্তু আপনার যখন আমাকে এখানে দণ্ডায়মান হ’য়ে সভাপতির কার্ষ্য নির্বাহ করতে হুকুম করেছেন,তখন সেটা আমাকে শিরোধাৰ্য্য করতেই হবে, এবং সে-কাজ যাতে স্বসম্পন্ন হয়, যথাসাধ্য তার চেষ্টাও করব। আমার একটা দাবী অবশ্য আছে, সেটা এই –গত মানুষ-গুস্তির রিপোর্টু অনুসারে যে-কয়টা জেলায় বাঙালী কমে গিয়েছে, তার মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষা বেশী কমেছে বাকুড়ায় । শতকরা ১৭ জন কমেছে আমার জন্মস্থান বাকুড়ায়, বীরভূম তার নীচেই আসন পেয়েছে ; কারণ, এখানে শতকরা ৯ জন কমেছে। স্বতরাং বাংলাদেশের ক্ষয়িষ্ণুতম জেলার একজন লোককে তৎপরবর্তী জেলার কার্ষ্য-নিৰ্ব্বাহের শ্রেষ্ঠ আসনে আপনারা বসা’তে স্থির করেছেন, আপনাদের দিকৃ থেকে এটা একটুও অন্যায় হয়নি। একটা চলিত কথা আছে—“এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায় দেখ”। উন্নতির দিকে কিছু করতে পারিনি, অবনতির দিকে পেরেছি, সেহিসাবে আমার দাবী অবশু আছে স্বীকার করি। এবিষয়ে বেশী না বলে কাজের কথা বলতে চেষ্টা করব। অবগু আজকার এই সভাতে আপনারা আশা করবেন না, যাকে উচ্চ রাজনীতি বলে, তা আলোচনা করব । জাতি-সংগঠনের কথা—ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, ভারতবর্ষ বা বাংলাদেশের কথা হচ্ছে না, এখানে আমরা একটি ছোট জেলার কথা বলব। স্বতরাং এ-জেলার কৰ্ম্মনীতিসম্বন্ধে কিছু বলব। সঙ্গে-সঙ্গে আমাদের এই ব্যাপার ভালো করে’ বুঝবার জন্য যদি ২১টি অবাস্তুর কথা আসে, চিন্তা করলে দেখবেন তা অবাস্তর নয় । আমার মনে হয়, খুব একটি বড় দেশের কিংবা খুব ছোট জেলার, যেখানকারই উন্নতি করবার চেষ্টা করি না কেন, তার প্রথম দরকার মানুষকে জাগানো । মানুষ যদি অসাড় হ’য়ে থাকে, প্রগতিশীল চিন্তা যদি তাদের না থাকে, তা হ’লে উন্নতির সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়। আপনারা সকলেই জানেন—বাংলাতে একটি কথা আছে—“অন্ধ জাগে, (কিন্তু অন্ধের ) কিবা রাত্র কিবা দিন ।” অন্ধ দিনের ৰেলায় দেখতে পায় না, রাত্রেও পায় না। আমরা যদি সংজ্ঞাহীন অচেতন হয়ে থাকি, তা হ’লে উন্নতি হ’তে পারে না। স্বতরাং প্রথম কথা আমাদের নিজে জাগতে বীরভূম-জেলী-সম্মিলনীর সভাপতির বক্তৃতা ●9@ হবে, তার পর ভাইবোনদের জাগাতে হবে, বলতে হবে তোমরা জাগে,বোঝে,দেখ তোমাদের কি অবস্থা হয়েছে। এই যে জাগা ও জাগানোর কথা, এ আমাদের পক্ষে নূতন নয়,—বিশেষ করে আমার মতে যারা খবরেরকাগজের ব্যবসা করে, তাদের-একথা বলতে হয়, বহুকাল থেকে বলেও আসছি। আমি নিজে জাগতে পেরেছি কি না বলতে পারি না, কিন্তু এই জাগার কথাটি বহুদিন থেকে বলে আসছি। সেটা প্রথম দরকার, সন্দেহ নাই। জেন্তু নিজেদের দুরবস্থা বুঝতে হবে, তার পর চিস্ত করে*সেঅবস্থা দূর করে যাতে উন্নতি লাভ হ’তে পারে, তা’র উপায় নিৰ্দ্ধারণ করতে হবে এবং সে উপায়-অম্বুসারে কাজ করতে সকলকে প্রবৃত্ত করাতে হবে । কিন্তু এই যে বলছি—জেগে উপায় নির্ধারণ করব, চেষ্টা করব, পরিশ্রম করব, এতে গোড়াতেই এই সন্দেহ হতে পারে, যে, যেসকল জাতির দুরবস্থা-দুর্দশা হয়েছে, তাদের মনে যদি নিরাশ বদ্ধমূল হ’য়ে থাকে, সহজে সেটা যেতে চায় না । সেইজন্য আমাদের মনে এই বিশ্বাস জাগানো দরকার— চেষ্টা কবুলে ফল হবেই, বিশ্বের মঙ্গল ঐ ভাবেই হ’য়ে আসছে। এর.দৃষ্টান্ত দেওয়ার দরকার নাই, আমরা দেখি— মাটিতে যদি বীজ বপন করা যায়, সার ও জল দেওয়া যায়, ফল ফলে । সব কাজেই এইরকম। সুতরাং আমরা সকলে দলবদ্ধ হ’য়ে যদি এই জেলার উন্নতির চেষ্টা করি—তার ফল ফলবে সন্দেহ নাই। উন্নতির চেষ্টার মূল, জগতের মঙ্গল-নিয়ন্তার উপর গভীর বিশ্বাস। এই যে বলেছি—চেষ্টা করতে হবে, এক-একা চেষ্টা করলে হবে না, সমবেত-ভাবে চেষ্টা করতে হবে। সেজন্য পরস্পরের উপর বিশ্বাস থাকা দরকার, পরস্পরকে ভালোবাস, শ্রদ্ধ করা দরকার। যাদের দুর্দশ হয়েছে—পরিবার, গ্রাম, প্রদেশ, দেশ, সাম্রাজ্য যেখানেই দেখবেন দুৰ্গতি হয়েছে, ছৰ্দ্দশা হয়েছে—তাদের মধ্যেই,সেখানেই দেখবেন মাছুষের পরস্পরের মধ্যে রয়েছে অবিশ্বাস, পরঐকাতরতা। আমরা অষ্ঠের ভালো দেখতে পারি না। দুৰ্গতির এই কারণ আমাদের মন ও হৃদয় থেকে সম্পূর্ণরূপে দূর করতে হবে, তা না হ’লে দলবদ্ধ হ’তে পারব না এবং সমবেত চেষ্টা করতে সমর্থ হব না ।