পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] দস্তুপটি বিকশিত করিয়া পেট নাচাইয়া হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিলেন । বাহিরের অন্ধকারের দিকে অজিত একদৃষ্টে তাকাইয়া ছিল। নীচে ‘রামলীলা’র রিহাবুস্তাল তখন বন্ধ হইয়াছে। স্তাক্রার,হাতুড়ির সঙ্গে-সঙ্গে স্বমুখে খোলার বস্তির একটা ঘর হইতে একটানা একটা কাশির শব্দ শুনিতে পাওয়া যাইতেছিল। লোকটা হয়ত যক্ষ্মার রোগী, —কাশিতে কাশিতে শ্বাস ভলাইয়া গিয়া মাঝে-মাঝে যেন তার দম আটকাইবার উপক্রম হইতেছে। 嶄 豪 舉 পরদিন সকালে উঠানের কলে যাহারা জল লইতে আসিল, ম্যানেজার, প্রোফেসার, পঞ্চানন, ইত্যাদি সকলেই তাঙ্গাদের নিষেধ করিল বটে, किड़ প্রাণ-ধারণের জন্য অত্যাবশ্যক এই পানীয়ের জন্য যাহারা আসিয়াছে, সামান্য দু’টা মুখের কথায় তাহাদের এত বড় প্রয়োজনের মুথে বাধ বাধিয়া দেওয়; বড় সহজ নয়,—অক্ষম এবং নিরুপায় যাহারা, সক্ষমের দুয়ারে একটুখানি করুণার দাবি যে তাহাদের আছে, বোধ করি এই সহজ এবং সত্য কথাটা তাহারা জানিত বলিয়াই হঠিয়া গেল না। এদিকে ম্যানেজারের খোচানির চোটে এবং তাহাদের আদেশ-অমান্তের ঔদ্ধত্যে প্রোফেসারের ঝোক, পর্দায়-পর্দায় চড়িতে আরম্ভ করিল । শাস্ত-শিষ্ট এই অকেজো বাংলা ভাষাটা পরিত্যাগ করিয়া প্রথমে সে জোরালো হিন্দুস্থানী, পরে রোখালো ইংরেজী ভাষা পৰ্য্যন্ত প্রয়োগ করিয়া দেখিল, কিন্তু কিছুতেই যখন কিছু হইল না, তখন গত রাত্রের ব্যবস্থাটা প্রয়োগ করাই যে এখানে যুক্তিসঙ্গত, এবং বৈকালে আপিস হইতে ফিরিয়া যে তাহাই করিতে হুইবে, এই লইয়া অদূরে দণ্ডায়মান পঞ্চানন-কুস্তিগীরের সঙ্গে সকলেরই একবার চোখ-টেপাটিাপ হুইয়া গেল । আহারাদির পর সকলে আপিস চলিয়া গেলে, ম্যানেজার-বাবু গঙ্গাস্নানে বাহির হইলেন। সকলের ছোয়া সেই চৌবাচ্চার জলেই অজিত স্নান করিয়াছিল,—এই ধ্বংস-পথের যাত্রী এরা— (t、○ অবসরে আহারের নিমিত্ত সে নীচের রান্নাঘরে নামিয়া আসিল । ঘরট দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে সাত-আট হাতের বেশী নয় ; মেঝেটা ছাড়া কড়িকাঠ হইতে আরম্ভ করিয়া নীচের চৌকাঠ পর্য্যস্ত আগাগোড়াকালী ও ঝুলের একটা পুরু আস্তরণ পড়িয়াছে,—দেওয়ালের একধারে উনানের উপর একটা টিন চড়াইয়া হোষ্টেলের নাক-কাটা খোড়া ঝি, তার ময়ূল কাপড় সিদ্ধ করিতেছিল, তাহারই পায়ের কাছে ভাত,ডাল, তরকারীর উপর মাছি ভন ভন করিতেছে । অজিত দরজায় আসিয়া দাড়াইল । ঘরের ভিতর কয়েকট এটে থালা পড়িয়ছিল । ঝি তাড়াতাড়ি খোড়াইতে গোড়াইতে বাসন-কয়টা তুলিয়া লইয়া নোংরা দুৰ্গন্ধপূর্ণ ন্যাভাটা মেঝের উপর একপোচ বুলাইয়া দিয়া নাকিস্বরে ডাকিল, ঠাকুর । অঁ ঠাকুর বাবুকে ভাত দিয়ে র্যাওঁ— কোনও একটা বিশেষ স্থান হইতে ছুটিয়া বাহিরে আসিয়া ঘটিটা কলতলায় নামাইয়া রাখিয়া পাচক-ব্রাহ্মণ অজিতের ভাত বাড়িতে বসিল । কোমরে-জড়ানো কালো রঙের যজ্ঞোপবীতটা না দেখিলে কাহার সাধ্য তাহাকে ব্রাহ্মণ বলিয়া চেনে । অজিত থাইতে বসিয়াছে, কিয়ংক্ষণ পরে উনানের নিকট হইতে ঝি চীৎকার করিয়া উঠিল, ধর ত’ রে বজাত মেয়েকে । আঁসছে মানি জার-বাবু । বেরো বলছি – ভাতের গ্রাসটা মুখে দিতে যাইবে, এমন সময় এই অস্বাভাবিক কণ্ঠস্বরে অজিত চমকিয় শিহরিয়া উঠিল । মুখ তুলিয়া বলিল, অঁ, অঁ, কি, কি, কি বলছ বি ? ওঁই দেখুন না বঁধু । বলিয়া বস্তির দিকে খোলা জানালাটার দিকে ঝি অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া দিয়া আবার বলিল, সকালে ভাতের ফেন ধরে” নে গেছে এক হাড়ি, - আঁবার এয়েছে ভাত চাইর্তে অজিত তাকাইয়া দেখিল, জানালার বাহিরে নর্দামাটার পাশে মাটির একটি মালসা হাতে মইয় একটি মেয়ে অত্যন্ত সকরুণ-নয়নে তাহারই দিকে তাকাইয়া আছে । অজিত দেখিবামাত্র চিনিল, এ সেই অতসী,—গতকল্য কাঙ্গালী ভোজন দেখিতে গিয়া যাহার প্রাণরক্ষা করিয়াছে।