পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©Ꮼ


محم.

অবেলায় তাঙ্গকে স্নান করিতে হইবে, এই ভাবিয়া সে তাছার দুৰ্দ্ধমনীয় ইচ্ছাটাকে অতিকষ্টে অতিদুঃখে দমন করিয়া নিতান্ত অসঙ্গয়ভাবে ইহার-উহার মুখ চাওয়াচাওয়ি করিতে লাগিল। এমন সময় অজিত উপর হইতে চুটিয়া গিয়া মেয়েটির তাতে ধরিয়া তাহাকে তুলিয়া দিল, কিন্তু মুগের পামে তাকাইতেই তাহার হাতটা কেমন যেন পবৃথর করিয়৷ কাপিয়া উঠিল। দেখিল, সে অতসীর মা। ভাণ্ড ষ্টটের গায়ে লাগিয়া তাহার হাতের কল্পই, হাটু এবং মুখের যেখানে-সেখানে ছড়িয়া গিয়া রক্ত পড়িতেছে, ছেড়া কাপড়খানাও স্থানে-স্থানে ছিড়িয়া গেছে । মেয়েটা সংজ্ঞা হারায় নাই, কাজেই উঠিয়াই সর্বপ্রথমে সে অত্যন্ত লজিত এবং সঙ্কচিত হইয় তাহার ছিন্ন বস্ত্রটাকে কম্পিতহস্তে টানিয়-টানিয়া আরও ভাল করিয়া ছিড়িবার ব্যবস্থা করিতেছিল, এমন সময় বস্তির ভিতর হইতে ’মা’ মা বলিয়া অতসী ছুটিয়া আসিয়া একেবারে স্তম্ভিত হইয়া একবার অজিতের দিকে একবার তাহার মায়েব দিকে ফ্যাল ফ্যাল করিয়া তাকাইতে লাগিল । নিজেই একবার হঁাটিবার চেষ্টা করিতে গিয়া অতসীর ম৷ টলিয়া পড়িয়া যাইতেছিল, অজিত অতি সাবধানে তাহাৰু একথান হাতের উপর ধরিয়া ফেলিয়া বলিল, চলে । তোব ডু। বালতিটা হাতে লইয়া অতসী আগে-আগে চলিতে লাগিল । • বস্তির মাঝখানে সবচেয়ে ছোট একটা খোলার ঘরের মধ্যে পথ দেখাইয়া অতসী তাহাদের লইয়! গেল । বাকীরি-দেওয়া দেওয়ালের গায়ে মাটি লেপিয়া দেওয়া হইয়াছে, চারিদিকে কোথাও আলো-বাতাসের পথ না থাকিলেও মাথার উপরে কয়েকটা ভাঙা খাপরার ছিদ্রপথে ঘবের ভিতর যথেষ্ট আলো প্রবেশ করিতেছিল। স্যাৎসেতে মেঝের এককোণে ছেড়া একটা চাটাইএর উপর চটু ও ছেড়া পাথার যে শয্যাট। বিছানো ছিল, অতসীর মা নিজেই ধীরে ধীরে তাহার উপরে গিয়া শয়ন করিল। ঘরের একধারে কয়েকটা ইাড়ি ও মালসা সারি-সারি সাজানো রহিয়াছে, তাহার পাশেই মাটির একটা উনান এবং প্রয়োজন হয় না বলিয়াই রন্ধনের কয়েকটি অতি প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড সামান্ত সরঞ্জাম তাহার ঠিক মাথার উপরেই একটা দড়ির শিকায় ঝুলিতেছে। স্বমুখের দেওয়ালের গায়ে 'বাঙ্গালী পণ্টন’ এবং সমর-ঋণের’একটা বৃহদাকার ছেড়া ছবি আঠা দিয়া জন্মের মত আঁটিয়া দেওয়া হইয়াছে। বাহিরের অপ্রশস্ত চালার উপর একটা বড় গাই বাধা ছিল । কাদা ও গোবরের উপর অসংখ্য মশা ও মাছি —দুর্গন্ধে সেখানে দাড়ানো যায় না । অজিত জিজ্ঞাসা করিল, ও গাইটা করি ? অতসীর মা অতিকষ্টে উচ্চারণ করিল, ধোপাদের । ৪রাই এ ঘরের ভাড়া দেয় । অজিত আবার বলিল, খুব যন্ত্রণ— মেয়েটি ঘাড় নাড়িয়া বলিল, না । অজিত কিয়ৎক্ষণ থামিয়া এদিক-ওদিক্‌ তাকাইয়। কহিল, তোমার স্বী—অতসীর বাবা কোথায় ? অত্যন্ত স্নান একট। দুঃখের হাসি হাসিয়া অতসীর ম৷ পাশ ফিরিয়া শুইল । কোনও উত্তর দিল না। অতসী বলিয়া উঠিল,হোই কলকাতার সেই নেবুতলায় আছে বাবু। কালীঘাটের মুনিয়ার সাথে আমি একদিন গেছলাম। মেরে তাড়িয়ে দেছল বাবু। আর একদিন যাবে, নয় মা ? বলিয়া সে তাহার মায়ের শিয়রের কাছে ঝুকিয়া পড়িল । অজিত আর কোনও প্রশ্ন করিল না । নিতান্ত অসহায় এই দুই মাতাপুত্রীকে প্রশ্ন করিবার মত আর-কিছু ছিলও না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া সেখান হইতে সে ধীরে ধীরে বাহির হইয়া আসিল । ভাবিল, দলিল নকল করিয়া কাল যদি সে দুইটা টাকা পায়, তাহা হইলে একট টাকা সে ইহাদের দিয়৷ যাইবে । ইম্পিরিয়াল হোষ্টেলে তখন বোধ করি তাহারই সময়ে আলোচনা চলিতেছিল। অজিত ঘরের চৌকাঠ মাড়াইতে ন। মাড়াইতে ম্যানেজার-বাবু বলিয়া উঠিলেন, হা হুঁ-হুঁ-হুঁ! বাইরেই দাড়ান, বাইরেই দাড়ান,—ঘরে ঢুকবেন না মশাই, এটা আপনার হোটেল-খানা নয়, এর একটা রীতিমত প্যাসটিচ আছে। দিন না রমেশ-বাবু, ওঁর গামছা কাপড়টা ছুড়ে । যান গঙ্গাচ্চান করে আসুন,–কি বেশী লেগেছে ?