পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૯૧૨ গরুকে দিয়ে নিজে উপোস করে রইল, আর খুব ভক্তিভাবে মহাদেবের পূজো করলে। সেদিন রাজা বৌটিকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কোন দেৰতাকে এমন ভক্তিভাবে পূজে করো, তোমায় দেবতার নাম কি, তিনি থাকেন কোথায় ?” বৌটি তখন তার শ্বশুরকে বললে, “আমার দেবতা এখান থেকে অনেক দূরে থাকেন, তার কাছে যাওয়া কঠিন। পথগুলি সব কাটায় বিছানো, চারিদিকে সাপ বাঘ সব ঘোরাঘুরি করছে, তারই মধ্যে আমার দেবতার भझिङ्का ** শ্রাবণ মাসের তৃতীয় সোমবারে বৌটি ভোরে উঠে, ফুল-বেলপাত চাল-স্বপারি পূজোর নৈবেদ্য জোগাড় করে’ মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা হ’ল, তখন রাজা এবং তার আরও কয়েকজন আত্মীয় বললেন, “তুমি আমাদিগকে তোমার দেবতার কাছে নিয়ে চলো ।” এই বলে তারাও বৌটির সঙ্গে চললেন,কিন্তুরাজপ্রাসাদ থেকে মন্দির খুব দূরে ছিল। বৌটির দুঃখ সঙ্ক করবার অভ্যাস আছে। সে এর আগে আরও দুবার মন্দিরে গিয়েছে, তবুও যেতে-যেতে তার পা ফুলে পাথরের মতন ভারী হয়ে গেল। কিন্তু রাজা আর তার সঙ্গীরা একেবারে মারা যাবার অবস্থায় পড়লেন ; তাদের সর্বাঙ্গ কাটা ফুটে একেবারে সজারুর পিঠের মতন হ’য়ে গেল ; প ফুলে কলাগাছের মতন হ’য়ে গেল,তাদের আর চলবার ক্ষমতা রইল না। তখন তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি কবৃতে লাগলেন, “ছোটবোঁ কি করে’ এমন গহন বনজঙ্গল পার হয়ে পূজো করতে যায়, সে কি মাহব না ?” তাদের অবস্থা দেখে ছোটবোঁটির মনে বড় কষ্ট হ’ল ; সে তখন সেখানে একটি মন্দির তৈরি করবার জন্তে মহাদেবকে প্রাণুপণ্ডোকৃতে লাগল। মহাদেব তার প্রার্থনা শুনলেন । নাগকস্তা আর অঙ্গরাদের নিয়ে সহসা একটা মন্দির সেখানে তৈরি করলেন ; মন্দিরটা আগাগোড়া সোনায় মোড়া ; তার থামগুলো সব মণিমুক্তাখচিত, আর ভিতরে সব ফটিকের ঝাড় ঝুলছে। দেখতে-দেখতে মন্দিরের মধ্যস্থলে সহসা এক স্তম্ভ উঠল, তার উপর মহাদেব প্তার নিজমূৰ্ত্তিতে আবিভূত হয়ে ভক্তের প্রার্থনা পূর্ণ করলেন, রাজা আর তার সঙ্গীদের দেখা দিয়ে মুহূর্ভের পরে অদৃপ্ত হ’য়ে গেলেন। রাজা আর র্তার সঙ্গীরা বিস্ময়ে নিৰ্ব্বাক হ’য়ে রইল, কিন্তু ছোট বৌটি মহাদেবের সম্মুখে সাষ্টাঙ্গে প্ৰণিপাত করে চীৎকার করে বললে, “হে মহাদেব, দয়া করে আমার প্রার্থনা শোনো, আমার শ্বশুরশাশুড়ী যায়ের আমাকে এখন যেমন ঘৃণা করে, তেমূনি প্রবাসী—মাঘ, ১৩৩১ [ २8* छागं, २ब्र थe যেন ভালোবাসে "ছোট বেীর এই প্রার্থনা শুনে রাজার মন গলে গেল, তিনি ছোটবোঁকে ডেকে আদর করে কথা কইলেন ; নিজের গলার হার, আংটি খুলে নিয়ে বেীকে দিয়ে দিলেন। তার পর মাথার পাগড়ী খুলে মন্দিরের একটা পেরেকে রেখে হ্রদের তীরে বেড়াতে গেলেন। সেখানে যে এমন স্বন্দর হ্রদ ছিল, তা আগে আর কারও চোখে পড়েনি। রাঙ্গ আর তার সঙ্গীর ত বেড়াতেবেড়াতে কিছুদূর চলে গিয়েছেন, এমন সময় মন্দিরটি · অদুগু হয়ে গেল। রাজা বেড়ানো শেষ করে তার পাগড়ী নিতে এসে দেখেন, এমন চমৎকার সোনার মন্দিরটি কোথায় অদৃগু হয়ে গেছে। রাজা বৌটিকে কারণ জিজ্ঞেস করলেন, কিন্তু বৌটি কিছু না বলে’ আরও গভীর বনে প্রবেশ করতে লাগল, রাজা আর তার সঙ্গীরা বিস্মিত হ’য়ে অতিকষ্টে বৌটির অনুসরণ করতে লাগলেন। সেখানে পৌছে তারা একটি পরিষ্কার ছোট মন্দির দেখতে পেলেন। রাজা দেখলেন তার পাগড়ীটা এই মন্দিরের একটা পেরেকে ঝুলছে, আর সেই চমৎকার মন্দিরে বৌটি যে ফুলৰেলপাতা দিয়ে মহাদেধের পূজো করেছিল তাও এখানে রয়েছে । এসব দেগে’ রাজার আর বিস্ময়ের অস্ত রইল না। তিনি তখন বললেন,"বেীমা, এসব কি ? আমি ত কিছু বুঝতে পারছিনে, তুমি আমায় সব খুলে’ বলে ।” তখন বৌটি বললে, “এই আমার মন্দির, এখানে এসেই আমি পূজো করতাম, আপনারী কিছুদূর এসেই পথশ্রমে এত কাতর হয়ে পড়লেন যে তা দেখে আমার মনে বড় দুঃখ হ’ল, আমি মহাদেবকে ভক্তির সহিত ডেকে বললাম, এখনি যেন তিনি একটি মন্দির তৈরি করে দেন । অগতির গতি মহাদেব আমার প্রার্থনা শুনেছেন, তাই তিনি আপনাদের দেখা দিয়ে অদৃপ্ত হ’য়ে গেছেন।” ছোট বৌয়ের এই কথা শুনে রাজার মন আনন্দে পূর্ণ হয়ে গেল। ছোট বে ত সামান্ত মেয়ে নয়, স্বয়ং মহাদেব তার প্রার্থনা শুনেছেন, তা’কে দেখা দিয়েছেন, একথা ভেবে তার মন শ্রদ্ধায় পূর্ণ হ’য়ে গেল। তিনি ছোট বেীকে নেবার জন্তে রাজপ্রাসাদ থেকে চমৎকার এক পালকী আনালেন। সোনার পালকী, তাতে মণিমুক্তোর ঝালর। তার পর ঐ পালকী করে বেীকে নিয়ে রাজপ্রাসাদে ফিরে’ এলেন। ছোট বেীর তখন খুব সম্মান হ’ল, রাজা তা’কে খুব স্নেহ করতে লাগলেন। তাতে অন্ত বেীদের মনে ভারি হিংসে হ’ল, কিন্তু ছোট বে। এতে কিছু মনে করত না । মহাদেবের .সে তখন সকলের আদরিণী হ’মে দিন কাটাতে লাগল । - ৯১নং আপার সাকুলার রোড প্রবাসী প্রেস হইতে ঐ অবিনাশচন্দ্র সরকার দ্বারা মুজিত ও প্রকাশিত।