পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা] রান্নাঘর হইতে বাহির হইয়া আসিল, এবং হাসিতে হাসিতে কহিল, “মা’র অসাধ্য কাজ নেই!” ছেলেটি গৌরবর্ণ ও দিব্য মোটা-সোটা । মহেশ্বরীর পারিপাট্যে তাহাকে আরও স্বন্দর দেখাইতেছিল। মহেশ্বরী পুত্রবধূকে সম্বোধন করিয়া সহাস্যমুখে কহিলেন, "ছেলেটি কিন্তু তোকে দিলাম।” শৈলবালার পুত্র-কন্যা বলাই এবং শান্তি তথায় দাড়াইয়াছিল । তিনি মৃদু-মৃদু হাসিতে-হাসিতে কহিলেন, “কি রে, কথা বলছিস্নে যে তোর ? আড়ি কর্বি না ত ?” বলাই এই ছেলেটির সমবয়সী হইবে ; শান্তি দুই বৎসরের বড়। শাস্তি খুন্সী হইয় কহিল, “বেশ হবে। বলাইটে বড় কুঁদুলে। আমি এক ওর সঙ্গে পেরে উঠিনে। ওকে আমার দলে নেবো । আমাকে দিদি বলে ডাকৃবে ত ?” মহেশ্বরী কহিলেন, “শুধু দিদি হ’তে চাস, দিদির মত যত্ন-আত্তি করতে হবে যে ।” শান্তি গিল্পীর মত মুখ নাড়িয়া কহিল, “বলাইকে ত সাড়ে পিঠে করে’ নিয়ে সারা লঙ্ক বেড়াই—ওকে আর পারব না ?” মহেশ্বরী বালিকার মুখ চুম্বন করিলেন। তার পর মহেশ্বরী তাহাকে বারান্দায় পিড়ি পাতিয়া বসাইয়া স্বহস্তে অন্ন-ব্যঞ্জন মাখিয়া-জুগিয়া খাওয়াইয়। দিলেন । পুত্রবধূকে বলিলেন, “এর একটা নাম রাখতে হবে ত ? কি রাখা যায় বল দিকি ?” শৈলবালা ভাবিয়া-ভাবিয়া কহিল, রাখলে মন্দ হয় না।” মহেশ্বরী নামটি পছন্দ করিলেন, এবং বলিলেন, "এতদিন বলাই ছিল, এখন তোমার কানাই-বলাই দুইই झ्'ल ।” বাড়ীতে ঝি-দাসীর অভাব ছিল না, তবু খাওয়া শেষ হইলে মহেশ্বরী নিজেই তাহার মুখ-হাত ধুইয়া দিলেন ; এবং বলাইএর এক-প্রস্থ জাম-কাপড় লইয়া তাহাকে পরাইয়া দিলেন । এইসব কাজ শেষ হইলে তিনি তাহাকে সঙ্গে লইয়া দ্বিতীয় মহলের একটি কক্ষে গেলেন । গৃহটি ক্ষুদ্র হইলেও আলোক-বাতাস বেশ “কানাইলাল বামুন-বাগদী o ছিল । তিনি সেখানে খাটের উপর বিছানা করিলেন এবং বাতাস করিয়া ছেলেটিকে ঘুম পাড়াইলেন । ছেলে ঘুমাইলে স্নান করিবার জন্য একখানি গামছ। কাধে লইয়া, তিনি মথেন্দুর গৃহদ্বারে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। মৃগেন্দু তখন নিদ্রার আয়োজন করিতেছিলেন । কিন্তু মহেশ্বরীর দেহে ক্লান্তি নাই, তিনি ডাকিলেন, “ও স্বখেন ! ঘুমোলি নাকি ? এদিকে একবার আয় ত! দেখে যা !” স্বপেন্দু তাড়াতাড়ি চোখ মুছিয়া খাট হইতে নামিয়া আসিয়া ব্যস্ত হইয় জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি মা, কি হয়েছে ?” মহেশ্বরী তখন কিছু না বলিয়া পুত্রকে সঙ্গে লইয়া কানাইলাল থে-ঘরে ঘুমাইতেছিল, তথায় আসিলেন ; এবং তাহাকে দেখাইয়া বললেন, “দ্যাগ দেখি, রূপে ঘর আলো করেছে ।” স্বথেন্দু পুলকিত হইয়া কহিলেন, “মা ! তুমি সবই পারে, পেটে তেমন ছেলে ধবৃতে পারোনি—এই যা দুঃখ ।” মহেশ্বরী হাসিয়া কহিলেন, “ধশ গাইতে-গাইতেই যে তার পিছনে মস্ত একটা অপধশ জুড়ে দিলি ।” সুখেন্দু জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন মা ?” মহেশ্বরী বলিলেন, “উপযুক্ত ছেলেই যদি ঘরে আনতে না পারি, তবে যে আমাদের কিছুই পার হ’ল না। যাক উপযুক্ত হোসনি, সেটা মনে ধারণ থাকাও ভালো। ত৷ শুনেছিস্ ? ছেলেটি কিন্তু শৈলকে দিয়েছি।” স্বথেন্দু কহিলেন, “বেশ ত ! গামছা কাধে করে স্বান করতে চলেছ বোধ হয় ! স্বানের সংখ্যাট আগেও নিতান্ত কম ছিল না, এর পর খুবই বেড়ে যাবে দেখছি। অস্বগ-বিমুখ করে’ না বসে৷ ” “অন্থখ ইয়—চিকিৎসা আমার ভাবনা কি : করাবি । ছেলে রয়েছে মহেশ্বরী হাসিতে-হাসিতে চলিয়া গেলেন । তৃতীয় পরিচ্ছেদ মহেশ্বরীর ক্রোড়ে কানাইলাল দিন-দিন বাড়িতে লাগিল। পাড়াপ্রতিবাসীরা মহেশ্বরীর গুণে একান্ত