পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ! প্রকাশ করার ক্ষমতা সকলের সমান থাকে তা নয়। এইথানেই কবিত্বের বৈশিষ্ট্য। কবিত্ব বস্তুটি জগতে স্থলভ নয়—বিরল। একথা সব সভ্যতার শিল্প সম্বন্ধেই খাটে। গানের উদাহরণ হিসেবে বোধ হয় বিদেশী সঙ্গীতের দুএকটা দৃষ্টান্ত দেওয়া মন্দ নয়, যেমন ধরুন ইংরেজী ধৰ্ম্মসঙ্গীতের ক্ষেত্রে। এ ভাণ্ডার প্রায় অফুরন্তু বললেই চলে। কিন্তু হ’লে, হবে কি, যীশু-সম্বন্ধে ইংরাজ ভক্তির অধিকাংশ গানই যেমন একঘেয়ে, তেমনি কবিত্বলেগইন । এ-কথা যে অত্যুক্তি নয়, তা যে-কোনো ইংরাজী hymnbook এর গানগুলির উপর একবার চোখ বুলিয়ে গেলেই প্রতীয়মান হবে । এ-শ্রেণীর গানের অধিকাংশই কবিত্বের ধার দিয়েওঁ যায় না এবং কৃত ও অরুত পাপরাশির গুরুভাবে নিম্প্রভ ও অবসন্ন যেমন – The mistakes of my life have been many And my spirit is sick with sin. অথবা আর-একটা গানে আছে IIow helpless and hopeless we sinners had been এরূপ গানের মধ্যে আর-কিছুর অভাব বোঝা যাক বা না যাকৃ একটা জিনিষের অভাব কাব্যপিপাস্কর কাছে —এৰু মুহূর্তেই ধরা পড়ে, যার নাম কবিত্ব। পক্ষান্তরে Abido with no নামক প্রসিদ্ধ গানটির মধ্যে কবিত্বের অস্তিত্ব-সম্বন্ধে বোধ হয় কোনো কাব্যোমোদীরই সংশয় থাকবে না :–

  • Abide with me fast falls the even-tide,

The darkness deepens, Lord ' with me abide. Heaven's morning breaks and earth's vain shadows fled In life, in death, O Lord l abide with me. যুরোপে কৰ্ত্তব্যবোধ ও সামাজিকতার খাতিরে কত ধৰ্ম্মসঙ্গীতই না শুনতে হয়েছে। কিন্তু এরূপ দু’চারটি কবিত্বময় গান ছাড়া অধিকাংশ গানেই মনটা সাড়া দেয়नि । এখানেই শিল্পের মহিমা। প্রকৃত শিল্পের মধ্যে মানুষের বাণী বা অনুভূতি যেভাবে আত্মপ্রকাশ করে, মহামহোপাধ্যায় আচার্য্যের খুব গম্ভীর-বদনে দীর্ঘশ্মশ্র সঞ্চালন সর ভয়াবহ তর্জনী-হেলনের মধ্যেও সে অনুভূতি বা অতুলপ্রসাদও র্তাহার সঙ্গীত ৫৭৯ বাণীর প্রকাশ মেলে না। আমি অবশ্য এ-ক্ষেত্রে ভক্ত বা ঈশ্বর-প্রেমিকের কথা বলছিনে। তাদের কাছে গানের মধ্যে মুক্তি, জীবনের নশ্বরতা, হরিনামামৃত প্রভৃতির উপাদান একটু অশ্রজলের ও হাঁহতাশের মশলার সঙ্গেসঙ্গে থাকলেই যথেষ্ট। উচ্ছসিত হতে র্তারা थाब्र-किकूद्र অপেক্ষ রাখেন না। যেমন কথামৃতে দেখতে পাট পরমহংসদেব দাশুরায়ের ছিল বারি কক্ষে, ক্রমে এল বক্ষে জীবনে জীবন - কেমনে হয় মা রক্ষে আছি তোর আপিক্ষে দে মা মুক্তি তিক্ষে কটাক্ষেতে করি পার গান শুনে অশ্রুবর্ষণ করতেন। কিন্তু আমরা—অর্থাৎ অভক্ত জন-সম্ভবতঃ এ-গানের অন্তনিহিত আধ্যাত্মিকতায় রোমাঞ্চিত কলেবর হয়ে উঠব না। এর কারণ কেবল এইমাত্র যে পরমহংসদেব গানের মধ্যে খুঁজতেন কেবল—ঈশ্বরের নাম গান, ঐহিক, অনিত্যতা, বৈরাগোর গুণগান ইত্যাদি, ও আমরা খুজি—মনোজ্ঞ কবিত্ব, সহৃদয় ভাব ও মনোহর প্রকাশভঙ্গী। তাই আমরা ড্যাং ড্যাং ড্যাং ড্যাঙবা ডিঙে চালায় আবার সে কোনজন কবীর বলে শোন শোন শোন ভাব গুরুর শ্ৰীচরণ— গানটি শুনলে ত্রগুরুর শ্ৰীচরণ ধ্যান করার প্রয়োজনীয়তাসম্বন্ধে সহসা খুব সচেতন হয়ে উঠতে পারিনে। কিন্তু যখন শিল্পী চণ্ডীদাসের অনুপম আত্মসমর্পণের কবিত্বময় বাণী পড়ি যে কলঙ্ক বলিয়া ডাকে সব লোকে তাহাতে নাহিক দুখ তোমার লাগিয়া কলঙ্কের হার গলায় পরিতে স্বথ তখন চির বিরহীর অন্তগূঢ় ব্যথার মধ্যেও আত্মদানের সার্থকতার করুণ মধুর রসে আপ্নত না হয়েই পারিনে। অথবা যখন স্বভাবকবি রামপ্রসাদের কলকণ্ঠে শুনি, “মন তুমি কুষি কাজ জানো না, এমন মানব-জমি রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা”, তখন মানবজীবনের কত রঙীন কামনায় অপূর্ণতা, গোপন আশাভঙ্গের বেদন বা নিহিত আকাঙ্ক্ষার ব্যর্থতাই না আমাদের হৃদয়কে বিষাদাশ্রতে প্লাবিত করে দিয়ে যায়।