পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা. । মহেশ্বৰী হাসিলেন। কহিলেন, “নিজের পুজিপাটা নিজের কাছেই রয়েছে। নিজের ভিতরে শিশুর ছদ্মবেশে ধে-সত্য গুপ্তভাবে থাকে, তা’কে যতটা প্রকাশ করতে পারবে, ততটা বড় হবে ।” মাতার সরস বাক্যগুলি স্বখেন্দু ক্ষণিকের জন্য আপনার অস্থভূতির কাছে জাজল্যমান করিয়া তুলিতে পারিলেন।

  • দ্বাদশ পরিচ্ছেদ বিবাহের পর শাস্তি দুই-তিন-বার শ্বশুরালয়ে যাতায়াত করিয়াছিল। এমন সময় তাহার মধ্যে যেন একটা ভাঙাগড়া পরিবর্তন আরম্ভ হইল । সে হঠাৎ বড় হইয়া উঠিল। শিশু জীবন হইতে নারী জীবনে আসিয়া দাড়াইল । সে এখন আর—কানাই ও বলাইএর সঙ্গে বসিয়া খেলা-ঘরে খেলা করিত না । সময়-সময় তাহাদের লইয়া হাসি-বিদ্রুপ গল্প-গুজব করিত। বাকী সময়টা শরীর লইয়াই থাকিত ; ঝামা দিয়া পায়ের গোড়ালি ঘষিত ; সাবান দিয়া গা ধুইত—মুখ মাজিত ; ঘটি-ঘটি জল দিয়া চুল ভিজাইত— গামছায় মোড়ন দিয়া সিথি কাটিত—পাত কাটিত, ভাঙিত—কাটিত—আবার ভাঙিত, আবার কাটিত ; পায়ে আলতা পরিত—গণ্ডে ছোপ ধরাইত—ওষ্ঠযুগল রঞ্জিত করিত। বিনাইয়া-বিনাইয়া বেণী রচনা করিত— আয়না ধরিত—দেখিত—মিটিমিটি হাসিত । চরণের গতিতে একটা ভঙ্গিমা দিত ; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকিবার জন্য বেশ-ভূষার উপর লক্ষ্য রাখিত—সাবধান হইত। এইসকল বিলাস-প্রসাধনে তাহার বাকী সময়টা ব্যয়িত হইত। এইরূপে শৈশবের গতিবিধি ভাঙিয়া-চুরিয়া তাহাকে জীবনের আর এক বিচিত্র পথে লইয়া চলিয়াছিল। কানাই ও বলাই ই করিয়া বসিয়া-বসিয়৷ এইসকল দেখিত। শাস্তি সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হইয়া উঠিলেও তাহার স্বভাব অত্যন্ত মিষ্ট ছিল । তাহার অনাবিল স্নেহ বালকদিগকে সৰ্ব্বদা ছুইয়.যাইত।

তখন মাঘ মাস। শীতটা এদিকে হালকা চাল চালিয়া মাধের শেষ ভাগেই বেশী জাকিয়া বসিয়াছিল। এই সময় শাস্তিকে আবার শ্বশুরালয় হইতে লইতে আসিল । যেদিন সে যাত্রা করিবে সেদিন কানাইলালের হঠাৎ মনে বামুন-বাগদী &se. পড়িয়া গেল যে, শাস্তি একদিন তাহার নিকট কুল খাইতে চাহিয়াছিল—আনিয়া দেওয়া হয় নাই । সে আজ চলিয়া যাইবে ; কানাইলাল অত্যন্ত বিচলিত হইয়া উঠিল। এবং কাহাকেও কিছু না বলিয়া সে বাড়ীর বাহির হইয়া গেল । প্রথমতঃ সে মিত্র-পাড়ায় যাইয়া দেখিল যে, গাছের কুলে তখনও রং ধরে নাই। তখন সে ঘুরিতে-ঘুরিতে অনেক দূরে মুসলমান-পাড়ায় আসিয়া উপস্থিত হইল। তথায় খোজ করিতে-করিতে একটি গাছে সে বেশ বড়-বড় কুল দেখিতে পাইল । সে সেই গাছ হুইতে অনেকগুলি স্বপন্ন কুল সংগ্ৰহ করিয়া লইয়া প্রত্যাবর্তন করিল। এদিকে প্রথম জোয়ারেই শাস্তিদের নৌকা ছাড়িবে। নদীতে জোয়ার আরম্ভ হইলে মাঝিরা আসিয়া বিরক্ত করিতে লাগিল । কানাইলালের জন্য অনেকক্ষণ পৰ্য্যন্ত অপেক্ষা করিয়াও যখন তাহার দেখা পাওয়া ੱਗ नl, তখন অগত্যা শাস্তিকে যাত্র করাইয়া নৌকায় উঠাইয়া দেওয়া হইল। তাহার কান্নাকাটি দেখিয়া স্বখেন্দু বলাইকেও তাহার সঙ্গে দিলেন। নৌকা ঘাট ত্যাগ করিয়া প্রায় এক মাইল পথ আসিয়াছে এমন সময় বলাই দেখিতে পাইল কানাইলাল নদীর তীর বাহিয়া আসিতেছে। সে চীৎকার করিয়া ডাকিল,— “কানাই-দা !” কানাই সচকিত হইয়া দেখিল, নৌকায় চাপিয স্থসজ্জিত শাস্তি শ্বশুরালয়ে যাত্রা করিয়াছে। বলাইও তাহার সঙ্গে চলিয়াছে। নিমেষের মধ্যে তাহার চক্ষু দুইটি সজল হইয়া উঠিল। সে নৌকার কাছে ছুটিয়া আসিয়া বলিল,—“বলা, নৌকোথান ধরতে বল so নৌকার দ্বারপথে শান্তি হাসিমুখখানা বাড়াইল। কানাইলালের ব্যগ্রতা দেখিয়া সে বলাইকে কহিল, “বল, বল না, নৌকাখানা তীরে লাগাকু।” যে ভদ্রলোকটি শাস্তিকে আনিতে গিয়াছিলেন বলাই তাহাকে তাহাদের নূতন বন্ধুটির অভিপ্রায় জানাইল । তিনি আদেশ করিলে মাঝিরা একস্থানে নৌকাখানি চাপাইয়া নোঙর করিল। তখনও জোয়ারের জল কুল পরিপূর্ণ করে নাই । কানাই চরের কাদায় হাটু পৰ্যন্ত