পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] ওপারের আলো \be( হাত রেশমী পাঞ্জাৰী একটা পছন্দ হইল। কাপড়-জামা র্যাকের উপর সাজাইয়া রাখিল । দেরাজের সম্মুখে জানু পাতিয়া বসিয়া নিজের হাতে-ভৈরী ভেলভেটের কোট, আর দোকামে-কেনা শু্যাময়-লেদারের একটা পাংলা চটির কোনটা ভালো হইবে মনে-মনে আলোচনা করিতেছে, এমন সময়ে সমীর হাপাইতে-ইাপাইতে আসিয়া বলিল, “বেশ মানুষ তুমি ! এখনও কাপড়-চোপড়ই পরোনি! সাতটা বেজে গেল যে এতক্ষণ ধরে করুছ কি ? স্বানের আয়োজন চলছে ? আগে আসবে, তার পর ত স্বান করবে ! চটুপটু ওঠে, এক মিনিটে তৈরী হওয়া চাই ।” কমলা কহিল, “আমার আর ষ্টেশনে যাবার দরকার কি ? তোমরা সবাই ত যাচ্ছ। আমি এদিকৃকার সব দেখি,—রান্না-বান্নার কিছু ব্যবস্থা হয়নি।” বহুক্ষণ ধরিয়া সাধ্য-সাধনা অনুনয়-অভিমান করিয়া কিছুতেই যখন সমীর কমলাকে নড়াইতে পারিল না, তখন অগত্য ক্ষুণ্ণমনে তাহাকে উঠিতে হইয় । স্বানাস্তে গরদের শাড়ী পরিয়া কমলা তাহার পূজার ঘরে প্রবেশ করিল। কিন্তু মন তাহার আহ্নিক-অৰ্চনাপুস্তক ফেলিয়া ক্ষণে-ক্ষণে হাওড়া-ষ্টেশনের গাড়ী, লোকজন, কোলাহল, কলরবের মধ্যে ছুটিয়া যাইতেছিল। হৃদয়ের উৎকট চাঞ্চল্য যতই সে দমন করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল, ধমনাতে-ধমনীতে রক্তপ্রবাহ তত্তই ধেন দ্রুত বহিতে লাগিল এবং যতই সময় কাটিতে লাগিল, আরব্ধ কার্য্যে মনঃসংযোগ ততই অসাধ্য হইয়া উঠিল। তৰু সেইখানে বসিয়া-বলিয়া কোলের উপরকার খেলা বইখানির প্রতি সে একদৃষ্টে চাহিয়াই রহিল। আশঙ্কা হইল, কোনো রকমে সেখান হইতে দৃষ্টি বিক্ষিপ্ত হইলেই হয়ত এতদিনকার রুদ্ধ অশ্রী কোনো মতেই বাধা মানিবে না, একমুহূর্তে সমস্ত ধৈৰ্য্য-সহিষ্ণুতা সংযমের বাধ ভাঙিয়া অস্তুর-জোড় হাহাকার গগন বিদীর্ণ করিবে । দরজার সম্মুখে গাড়ী থামিল, তাহার শব্দে চমকিত হইয়া কমলা বাহিরে আসিয়া সিড়ির দিকে চাহিয়া দেখিল অত্যন্ত গভীরমুখে সমীর ধীরে-ধীরে উপরে উঠতেছে। কিছু পশ্চাতে সহিস লেবেল জাট প্রকাও একটা চামড়ার ዓ'ለ÷¢ ট্রাঙ্ক ঘাড়ে করিয়া অতি কষ্টে সিড়ি ভাঙিতেছে । সমীর উপরের দিকে একবার চাহিয়া আবার ঘাড় গুজিয়া উঠিতে লাগিল। সে নিকটে আসিতেই তাহার গম্ভীর মুখের দিকে চাহিয়া হৃদয়ের সমস্ত উৎকণ্ঠ দমন করিয়া কোনো মতে কমলা প্রশ্ন করিল, “তিনি কি এ গাড়ীতে এলেন না ?" সমীর যুদ্ধস্বরে জবাব দিল, “এসেছেন।” পরে রুমাল দিয়া কপালের ঘাম মুছিতে-মুছিতে বলিল, “মেম-সাহেবকে গ্র্যাণ্ড-হোটেলে রাখতে গেলেন। হোটেলের লোকও উপস্থিত ছিল, আমিও বললাম, আমি নিজে ' যাচ্ছি, তুমি বাড়ী যাও। তা সাহেবের মনে ধৰ্বল না।” কমলা প্রথমে চুপ করিয়া গিয়াছিল, শেষে হাসিয়া বলিল “ও ! মেম-সাহেবকে নিয়ে যেতে পারলে না বলে’ দুঃখ হয়েছে ? আহা হা! তা’ এক কাজ করে—” "থামো-থামো। তোমার ত সবই উড়িয়ে দিয়ে বাহাদুরি। রান্না-রান্না করে’ ত ব্যস্ত হচ্ছিলে! সাহেব সেখানেই খাবেন । তিনটের সময় আসচেন, श्राफ़ी পাঠিয়ে দিতে বলেছেন।” "ঐ ঘরে চলে, বসবে।" বলিয়া কমলা নিজেই জালেআগে বাহির হইয়া গেল। চেয়ারে বসিয়া বাহিরের দিকে চাহিয়া কষ্টে যেন আপন মনেই সমীর বলিল, "দাদা একটি খাটি—কি যে হয়ে এসেছে। মুখে এতবড় একb চুরুট গুজে ত নামূল, আর সেইটে দাতে চেপে ধরে । তোমার বাবার সঙ্গে হাওশেক করলে। মাথায় হাটু, মেম সাহেব-বন্ধু সঙ্গে নিয়ে কি আর প্রণাম করা চলে! তিনি ত অবাক সে আমি তার মুখ দেখেই বুঝেছিলাম। শেষে যাবার সময় মেম-সাহেবের হাতের মাঝে হাত দিয়ে প্ল্যাটফরম বেয়ে চলল। আমাদের বলে গেল, লগেজটগেজগুলো দেখে’-শুনে নিতে।” কমলা জানালার গরাদ ধরিয়া পিছন ফিরিয়া দাড়াইয়াছিল । তাহার ভাব দেখিয়া সমীর বুঝিতে পারিল না যে, কোনো কথা তাহার কানে গিয়াছে। সেই মৌন নিম্পদ মূৰ্ত্তির দিকে চাহিয়া-চাহিয়া সমীরের দুই চোখে যেন জল আসিতে লাগিল। বহুক্ষণ নিঃশব্দে বসিয়া রহিল, কমলা ফিরিল না, একটি কথার জবাব দিল না । তেমনি গরাদ ধরিয়া জানালার বাহিরে চাহিয়া চুপ করিয়া