পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা] রাজপথ ఆశ్బిలి বিমানবিহারী কথাটা বলিয়াছিল, স্বরম। কিন্তু কথাটায় কোথা দিয়া কি যোগ করিয়া হঠাৎ বলিয়া বসিল, “তবে ত মাধবীর জন্তে করুছ ?” পাণ্ড-মুখে বিমানবিহারী বলিল, “কেন ?” বিমানবিহারীর প্রশ্নে ও ভাবে স্বরম বুঝিতে পারিল যে কথাটা বলিয়া সে ভুল করিয়াছে। কিন্তু অতখানি বলিয়া" ফেলিয়া বাকিটুকু না বলিলে যাহা বলিয়াছে তাহার দূষণীয়তা আরও বদ্ধিত করা হইবে এই আশঙ্কায় সে বলিল,“স্বরেশ্বর ত তোমার শনিগ্ৰহ!” . প্রবলভাবে মাথা নাড়া দিয়া বিমান বলিয়া উঠিল, “না, না বৌদিদি ! মুরেশ্বর শনি-গ্ৰহ কেন হবে। গ্রহ যদি সে হয় তা হ’লে সে গ্রহরাজ আদিত্য !” ঈষৎ অপ্রতিভ হইয়া স্বরমা বলিল, “কিন্তু, শনি হ’লেই মন্দ হয় না, তা জানো ঠাকুর-পো ? শনি যদি মিত্র হয়, তা হ’লে কোথায় লাগে তোমার গ্রহরাজ আদিত্য ।” বিমানবিহারী সহাস্যমুখে বলিল, “তা জানি! দুইলোক মুকবি হ'লে যা হয়, তাই!” এমনসময়ে একজন ভূত্য আসিয়া সংবাদ দিল যে একটি ভদ্রলোক বিমানবিহারীর দর্শন ভিক্ষ করিতেছে । "কে ভদ্রলোক ? নাম জিজ্ঞাসা করেছিল ?” - "জাজে হ্যা, নাম বললেন স্বরেশ্বর।” “কুরেশ্বর ” বিমানবিহার লাফাইয়া উঠিল, তাহার পর আর বাক্যব্যয় না করিয়া বহির্বাট অভিমুখে ধাবিত হইল । স্বরম মনে-মনে বলিল “শনিগ্ৰহ হ’লেও ভালো ছিল। এ যেন একেবারে ধূমকেতু।” স্বরেশ্বর দাড়াইয়া মৃদু-মৃদ্ধ হাস্ত করিতেছিল। বিমানবিহারী দুই বাহু দিয়া সবলে তাহাকে বক্ষে চাপিয়া ধরিল। “না ব’লে.কয়ে হঠাৎ এ রকম এসে পড়লে স্বরেশ্বর ! মনে-মনে অনেক ফন্দি ছিল, তুমি সব নষ্ট করে দিলে!” সহাস্যমুখে-স্বরেশ্বর বলিল, “কি করব বলে সরকারের অতিথশালার এমুনি নিয়ম যে, নিজের ইচ্ছায় সেখান থেকে বেরোবারও উপায় নেই, নিজের ইচ্ছায় সেখানে থাকবারও উপায় নেই। আজ সকালে যখন বললে তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হ’ল, তখন দেখলাম বাড়ী আসী ভিন্ন আর উপায়ান্তর নেই।” “তা বেরিয়েও যদি সেখান থেকে একটা খবর-টবর পাঠাতে তা হ’লে আমরা অন্ততঃ গেদ্বাফুলের কয়েক ছড়ী মালা আর একখানা ট্যাক্সি নিয়ে হাজির হতাম না: তোমার কাছে সব বিষয়েই ঠকৃতে হ’ল ! জেলে গিয়েও তুমি আমাকে ঠকিয়ে ছিলে, জেল থেকে বেরিয়েও তুমি আমাকে ঠকালে "বলিয়া বিমানবিহারী হাসিতে লাগিল। স্বরেশ্বর মাথ নাড়িয়া বলিল, “এ-কথা আমি একেবারে অস্বীকার করি ! জেল থেকে বেরিয়ে দেখছি তুমিই আমাকে সব বিষয়ে ঠকিয়েছ!” বিমানবিহারী সবিস্ময়ে বলিল, “এমন দুঃসাধ্য কাজ আমি কিছু করেছি বলে মনে পড়ছে না ত!” “জেল থেকে বেরিয়ে প্রথমেই মনে হ’ল যে বাড়ী ছাড়া হ’য়ে বাড়ীতে যে অভাবের স্বষ্টি করেছি বাড়ী গিয়ে সেটা পূরণ করি। বাড়ী এসে দেখি আমার ফাকটি তুমি এমন ক’রে পূর্ণ করেছ যে কতকটা অনাবশুক বস্তুর মতন নিজেকে মনে হ’ল ! পুরাতনের চেয়ে নূতন অধিকারীর কথাই বেশী-বেশী সকলের মুখে শুনতে লাগলাম। তার পর তোমার এই নতুন বেশ, নতুন গতি! এ আমাকে একেবারে বিমূঢ় ক’রে দিয়েছে। সাক্ষাতে আমার সঙ্গে’ প্রত্যহ বিসম্বাদ ক’রে আমার অসাক্ষাতে তুমি যে এমন ক’রে তোমার স্বরূপটি গ্রহণ করবে তা কে জানত বলে । এত বড় দ্বন্দ্ব আর দুৰ্য্যোগের মধ্য দিয়ে তোমার রাজপথে প্রবেশ, এ একেবারে অতুলনীয় ! মাধবীর ত দৃঢ় বিশ্বাস বিরাটু একটা-কিছু তোমার দ্বারা সম্পন্ন হবার অপেক্ষায় আছে!” এই কথা শুনিয়া বিমানবিহারীর মুখ আরক্ত হইয় উঠিল ; সে বলিল, “সক্ষম ব্যক্তিরা অপরের অক্ষমতাকে ক্ষমতার আবরণ ব'লে অনেক সময় ভুল করে।" তাহার পর হাসিতে-হাসিতে বলিল, “আমার বোধ হয় চাকুরি না ছাড়াই আমার উচিত ছিল । চাকৃরি ছেড়ে আমি যেরকম লোক ঠকাতে আরম্ভ করেছি, চাকৃরি কবৃতে-করতে এমন বোধ হয় কখনো করিনি!”