পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] নিজের চিন্তায় এমুনি-তন্ময় যে তার মুখের ভাবটা তার নজরে আসে নাই। অবশেষে তিনি নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “আঁ, এখনো সে ফিরে আসেনি ?” “মশাই, একটা কথা আপনাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলুম। মাদাম এই কথা আপনাকে জানাতে বলেছিলেন যে, যদি তার আসতে একটু দেরি হয়, আপনি তার জন্যে ভাবিত হবেন না।’ "একটু দেরি! আজকের জন্ত ঘে-সময় নির্দিষ্ট হয়েছিল তার একঘণ্টা পরে! আর এই ভোজটা, এই উৎসবের ভোজটা, এই স্বর্ণ-বিবাহের ভোজটার আয়োজন কিনা একজন ঠিকে দাসীর হাতে দেওয়া হয়েছে, যে রান্নার কোনো ধার ধারে না । তিনি রূঢ়ভাবে মারিয়ানকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আজ ডিনারের জন্য কি-কি রান্না হবে ?” দাসী একটু ধূৰ্ত্তামি করিয়া উত্তর করিল, “মাদাম, এবিষয়ের কোনো কথা আপনাকে বলতে মানা করেছেন— কেননা এটা হচ্চে একটা ‘অবাকৃ-ডিনার আপনাকে তিনি হঠাৎ আশ্চৰ্য্য করে দেবেন।” একটা “অবাকৃ-ডিনার’ ! এই কথায় হাওয়াটা একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেল। তার স্ত্রী অবশ্য কোনো দুল্লভ মুখরোচক খাদ্যসামগ্রী কিনিবার জন্য বাহির হইয়াছেন। হয়ত জিনিষটা বহু দূর হইতে আসিতেছে, হয়ত বৈকালের ট্রেনে আসিয়া পৌঁছিয়াছে, তাই উহা আনিতে বিলম্ব হইতেছে। যাই হোক, তার স্ত্রী বেশ কর্তব্যপরায়ণা। তার ক্রোধ হঠাৎ বিগলিত হইয়া একটা অস্পষ্ট বাস্পৰং ভালোবাসায় পরিণত হইল ; এবং ইহাতে করিয়া তাহার জঠরানলে আর-একটু বেশী আহুতি পড়িল। সিড়ির উপর একটা পদশৰ শোনা গেল, তার পর দরজা খুলিয়া গেল—মাদাম ওয়ালতার প্রবেশ করিলেন। র্তাকে ফ্যাকাশে দেখাইতেছিল, সিড়ির চার-প্রস্ত ধাপ উঠিয়া, তিনি হাপাইয়া পড়িয়াছিলেন। তার হাত খালি ছিল ; অবাকৃ করিবার মতো তিনি কোনো জিনিষ লইয়া আসেন নাই । عيص و فيb বিবাহের স্বর্ণ-বাসর ఆశిసి “এই যে, তুমি এসেছ দেখছি ; এখন প্রায় ৮ টা । এ-সমস্তের মানে কি ?” - “এর আর কোনো মানে নেই। আমার ইচ্ছে হ’ল, আজ ডিনারটা একটু দেরিতে খাওয়া যাবে—এই মাত্র। মঃ-ওয়ালতার রুষ্ট প্রভুর ভাব ধারণ করিয়াছিলেন, র্তার স্ত্রীর এই শান্ত উত্তর সব ওলট-পালটু করিয়া ছিল। দম্পতি নীরবে টেবিলের ধারে আসিয়া বলিলেন। মারিয়ান এক-ডিশ গরম গরম স্থপ লইয়া ঘরে প্রবেশ করিল। “লাউ-র স্বপ! লাউ-র স্বপ ! তুমি ত জানো, লাউ-র স্থপ আমি দু-চক্ষে দেখতে পারিনে ৷” ዃ মাদাম শাস্তভাবে উত্তর করিলেন—এবং এমনভাবে বলিলেন ধে তার প্রত্যুত্তরের আর স্থান রহিল না – “ই, কিন্তু এ-স্বপটা আমার খুব ভালো লাগে, এরকম স্বপ আমি ত্রিশবৎসর খাইনি।” মঃ-ওয়ালতার একেবারে হতভম্ব হইয়া পড়িলেন। তিনি ইা করিয়া অবাকৃভাবে তার স্ত্রীর দিকে চাহিয়া রছিলেন। ইতিমধ্যে, একটা সন্তোষের ভাব মুখে আনিবার চেষ্টা করিয়া মাদাম ঐ স্থপ অতি কষ্টে দুই-চার চামচ গলাধঃকরণ করিয়াছিলেন । “ও—এই দেখ মাছের ডিশ, ” “দ্যাখো, তুমি কি আমাকে নিয়ে মজা করছ? গাইকমাছের হুকুম দিয়েছিলে কেন ?—আবার দেখছি ওতে ওলোন্দাজি ‘সস’ লাগানো হয়েছে! তুমি ত বেশ জানো, আমি কেবল সমুদ্রের মাছ ভালোবাসি।” “কিন্তু আমার মিঠে জলের মাছই ভালো লাগে—অল্প মাছ ভালো লাগে না ।” মাদাম, এই মাছ ভালো লাগে বলিলেন বটে, কিন্তু প্লেটের মাছের টুকরাটা স্পর্শও করিলেন না। স্বপ্ন-জড়িতচক্ষে তিনি শূন্যের পানে চাহিয়া রহিলেন–র্তার সেই ব্যর্থ | অতীতকাল, যাহা তিনি পশ্চাতে ফেলিয়া আসিয়াছেন— যখন তাহার যৌবন, রূপ, স্ফৰ্বি, তার প্রেম, তার শক্তি, সামর্থ্য সমস্তই কাল-গর্ভে তলাইয়া গিয়াছিল। তার পর এই ৫০ বৎসরকাল কেবল দাসত্ব-জীবন যাপন করিতেছেন। তার হৃদয় এখন বিদ্বেযে কালো হইয়া গিয়াছে। তার দৃষ্টি তার স্বামীর উপর নিবন্ধ ; তার স্বামী