পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ডাক্তারী ও কবিরাজী পরশুরাম আমি চিকিৎসক নছি, তথাপি আমার ন্যায় স্বতরাং অবস্থাবিশেষে ভিন্ন-ভিন্ন লোক আপন বিবেচনা অব্যবসায়ীর চিকিৎসা-সম্বন্ধে আলোচনা করার হেতু ও ক্ষমতা অনুসারে বিভিন্ন চিকিৎসার শরণ লইবে ইহা আছে । আমার এবং আমার উপর র্যাহারা নির্ভর করেন র্তাহাদের মাঝে-মাঝে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, এবং সেক্ট চিকিৎসা কি পদ্ধতিতে করা হইবে তাহা আমাকেই স্থির করিতে হয়। অ্যালোপার্থী, হোমিওপার্থী, কবিরাজী হাকিমী, পেটেণ্ট, স্বস্ত্যয়ন, মাদুলী, আরো কত কি,—এই* সকল নানা পন্থা হইতে একটি বা ততোহধিক আমাকে বাছিয়া লইতে হয়। শুভাকাজী বন্ধুগণের উপদেশে বিশেষ স্ববিধা হয় না, কারণ র্তাহীদের অবস্থা আমারই তুল্য। আর যদি কেহ চিকিৎসক বন্ধু থাকেন, তার মত একেবারেই অগ্রাহ্য, কারণ তিনি আপন পদ্ধতিতে অন্ধবিশ্বাসী । অগত্যা জীবন-মরণসংক্রান্ত এই বিষম দায়িত্ব আমারই উপর পড়ে। শুনিতে পাই চিকিৎসাবিদ্যা একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাপার। বিজ্ঞানের নামে আমরা একটু অভিভূত হইয়া পড়ি। ডাক্তার, কবিরাজ, মাদুলিবিশারদ সকলেই বিজ্ঞানের দোহাই দেন। কাহার শরণাপন্ন হইব ? সাধারণ বৈজ্ঞানিক ব্যাপারে এত গণ্ডগোল নাই । ভূগোলে পড়িয়াছিলাম পৃথিবী গোল। প্রমাণ মনে নাই, মনে থাকিলেও পরীক্ষার প্রবৃত্তি নাই। - সকলেই বলে পৃথিবী গোল, স্বতরাং আমি তাহা বিশ্বাস করি। যদি ভবিষ্যতে পৃথিবী ত্রিকোণ বলিয়া সাব্যস্ত হয়, তবে আমার বা আত্মীয়স্বজনের কিছুমাত্র স্বাস্থ্যহানি হুইবে না। কিন্তু চিকিৎসাতত্ত্ব-সম্বন্ধে লোকে একমত নয়, সেজন্ত সকলেই একটা গতানুগতিক বাধারাস্তায় চলিতে চায় না । সৰ্ব্বাবস্থায় সকল রোগীকে নিরাময় করার ক্ষমতা কোনো পদ্ধতিরই নাই, আবার অনেক রোগ আপনাআপনি সারে, অথচ চিকিৎসার কাকতালীয় খ্যাতি হয় । অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু চিকিৎসানিৰ্ব্বাচনে এত মতভেদ থাকিলেও দেখা যায় যে মাত্র কয়েকটি পদ্ধতির প্রতিই লোকের সমধিক অহরাগ। ব্যক্তিগত জনমত যতট * অব্যবস্থিত, জনমত সমষ্টি তত নয়। ডাক্তারী (অ্যালোপাথ), হোমিওপার্থী ও কবিরাজী বাংলাদেশে যতটা প্রতিপত্তি লাভ করিয়াছে, তাহার তুলনায় অন্যান্য পদ্ধতি বহুপশ্চাতে পড়িয়া আছে । র্যাহার ক্ষমতাপন্ন তাহার নিজের বিশ্বাস-অনুযায়ী সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করিতে পারেন । কিন্তু সকলের সামর্থ্যে তাহা কুলায় না, রাজার বা জনসাধারণের আমুকূল্যের উপর আমাদের অনেককেই নির্ভর করিতে হয়। যে-পদ্ধতি সরকারী সাহায্যে পুষ্ট তাহাই সাধারণের সহজলভ্য। যদি রাজমত বা জনমত বহুপদ্ধতির অনুরাগী হয় তবে অর্থ ও উদ্যমের সংহতি থৰ্ব্ব হয়, জনচিকিৎসার কোনো স্বব্যবস্থিত প্রতিষ্ঠান সঙ্গজে গড়িয়া উঠিত্তে পারে না। স্বতরাং উপযুক্ত পদ্ধতিনিৰ্ব্বাচন যেমন বাঞ্ছনীয়, মতৈক্যও তেমনি বাঞ্ছনীয়। দেশের কৰ্ত্তা ইংরেজ, সেজন্য বিলাতে যে চিকিৎসা পদ্ধতি প্রচলিত আছে, এদেশে তাঙ্গই সরকারী সাহায্যে পুষ্ট হইতেছে । সম্প্রতি কয়েক বৎসর হইতে কবিরাজীর সপক্ষে আন্দোলন চলিতেছে যে এই স্থলভ স্থপ্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা পদ্ধতিকে সাহাধ্য করা সরকারের অবগু কৰ্ত্তব্য । হোমিওপার্থী সম্বন্ধে যদিও জনমত খুব প্রবল, তথাপি তাহার সপক্ষে এমন আন্দোলন নাই। কারণ বোধ হয় এই, যে, হোমিওপার্থী সৰ্ব্বাপেক্ষা অল্পব্যয়-সাপেক্ষ, সেজন্য কাহারো মুখাপেক্ষী নয়। সরকারী সাহায্যের বখর লইয়া যে-দুটি পদ্ধতিতে এখন দ্বন্দ্ব চলিতেছে, অর্থাৎ সাধারণ ডাক্তারী ও কবিরাজী,—আমরা ভাস্কাদের সম্বন্ধেই