পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] নাশ হুইবে না। বিজ্ঞান ও পদ্ধতি এক নয়। বিজ্ঞান সৰ্ব্বত্র সমান, কিন্তু পদ্ধতি দেশ-কাল-পাত্র-ভেদে পরিবর্তনশীল। বিজ্ঞানের মর্য্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখিয়াও বিভিন্ন সমাজের উপযোগী বিভিন্ন পদ্ধতি গড়িয়া উঠিতে পারে, এবং একই পদ্ধতি পরিবর্তিত হইয়াও আপন সমাজগত বিশেষত্ব ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখিতে পারে । - বিঃপূতের লোক টেবিলে চিনা-মটির বাসন, কাচের গ্লাস ইত্যাদির সাহায্যে রুটি মাংস মদ খায়। আমাদের দেশের লোকের ক্ষমতা ও রুচি অন্তবিধ, তাই ভূমিতে কলাপাতা বা পিভল কাসার বাসনে ভাত ডাল জল খায় । উদ্বেগু এক, কিন্তু পদ্ধতি ভিন্ন ৷ হইতে পারে বিলাতী পদ্ধতি অধিকতর সভ্যজনেচিত। কিন্তু কলাপাতে ভাত ডাল খাইলেও বিজ্ঞানের অবমাননা হয় না । দেশীয় পদ্ধতিরও পরিবর্তন ঘটিয়াছে। আলু কপির ব্যবহার বিলাত হইতে শিখিয়াছি, কিন্তু দেশী প্রথায় রাধি । গ্লাসে জল খাইতে শিথিয়াছি, কিন্তু দেশী রুচি-অনুসারে পিতল-কাসীয় গড়ি । এইরূপ অনেক জিনিষ, অনেক প্রথা একটু বদলাইয়া বা পুরাপুরি লইয়া আপন পদ্ধতির অঙ্গীভূত করিয়াছি। অনেক দুষ্ট প্রথা শিথিয় ভূল করিয়াছি, কিন্তু যদি নিবিচারে ভালে মন্দ সকল বিলাভী প্রথাই বর্জন করিতাম, তবে আরো বেশী ভুল করিতাম । চাক-সংযুক্ত গাড়ী যে একট। বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তের উপর প্রতিষ্ঠিত তাহা পূৰ্ব্বে বলিয়াছি। আমি যদি ধনী হই, আমার দেশের রাস্তা যদি ভালো হয় এবং যদি উপযুক্ত চালকের অভাব না থাকে, তবে আমি মোটরে যাতায়াত করিতে পারি। কিন্তু যদি আমার অবস্থা মন্দ হয়, অথবা পল্লীগ্রামের কাচা অসম পথে যাইতে হয়, অথবা যদি গাড়োয়ান ভিন্ন অন্য চালক না থাকে, তবে আমাকে গরুর গাড়ীই চড়িতে হুইবে । আমি জানি যে, গোযান অপেক্ষা মোটর-যান বহু বিষয়ে উন্নত, এবং মোটবে যত-প্রকার বৈজ্ঞানিক ব্যাপার আছে গোযানে তাহার শতাংশের এক অংশও নাই। তথাপি আমি গরুর গাড়ী নিৰ্ব্বাচন করিয়া বিজ্ঞানের অবমাননা করি নাই । মোটরে যে অসংখ্য বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থার সমবায় আছে তাহ আমার ডাক্তারী ও কবিরাজী ৬৬৩ অবস্থার অমুকুল নয়, অথচ যে সামান্য বৈজ্ঞানিক তথ্যের উপর গরুর গাড়ী নিৰ্ম্মিত তাহাতে আমার কার্য্যোদ্ধার হুইবে । কিন্তু যদি গরুর গাড়ীর শেষ প্রান্তে চাকা বসাই অথবা ছোট-বড় চাকা ব্যবহার করি তাহা হইলে বিজ্ঞানকে বর্জন করা হুইবে । অথবা যদি আমাকে অন্ধকারে দুর্গম পথে যাইতে হয়, এবং কেই গাড়ীর সম্মুখে লণ্ঠন বাধিবার যুক্তি দিলে বলি–গরুর গাড়ীর সামনে কস্মিনকালে কেহ লণ্ঠন বাপে নাই, অতএব আমি এই অনাচার দ্বারা সনাতন গোধানের জাতিনাশ কৰ্বিতে* পারি না,—তবে আমার মৃর্থতাই প্রমাণিত হইবে। পক্ষণস্থরে যদি মোটরের প্রতি আগ্ধ গুক্তির বশে মনে করি বরং বাড়ীতে বসিয়া থাকিব ভাগ ও স্বীকার তথাপি অসভ্য গোযানে চড়িব না, তবে ইয়ত আমার পঙ্গুত্ব প্রাপ্তি হুইবে । যেন মনে না করেন যে আমি কবিরাজী পদ্ধতিকে গরুর গাড়ীর মতন হীন এবং ডাক্তারীকে মোটরের মতন উন্নত বলিতেছি । আয়ুৰ্ব্বেদ-ভাণ্ডারে এমন তথ্য নিশ্চয় আছে ধাহা শিথিলে পাশ্চাত্য চিকিৎসকগণ ধন্ত হইবেন । আমার ঠহাই বক্তব্য যে উদেখা-সিদ্ধি একাধিক পদ্ধতিতে হইতে পারে, এবং অবস্থা-বিশেষে অতি প্রাচীন অথবা অকুন্নত উপায়ও বিজ্ঞের গ্রহণীয়,—যদি অন্ধ সংস্কার না থাকে এবং আবশ্বক- ও সাধ্য-মত পরিবর্তন করিতে দ্বিধা না থাকে। এই পরিবর্তন বা পারিপাশ্বিক অবস্থার সহিত সামঞ্জস্য-স্থাপন-বিষয়ে কেবল যে কবিরাজী পদ্ধতিই উদাসীন তাহা নয়, ডাক্তারীও সমান দোষী । ডাক্তারী পদ্ধতি বিলাত হইতে যথাযথ উঠাইয়া আনিয়া এদেশে স্থাপিত করা হইয়াছে । তাহার মধ্যে যে নিত্যবৰ্দ্ধমান বৈজ্ঞানিক তথ্য আছে, সে-সম্বন্ধে মতদ্বৈধ হইতে পারে না । কিন্তু তাহার ঔষধ কেবল বিলাতে প্রচলিত ঔষধ, তাহার পথ্য বিলাতেরই পথ্য। এদেশে পাওয়া যায় কি না, অকুরুপ বা উংকৃষ্টতর কিছু আছে কি না, তাহ ভাবিবার দরকার হয় না । দেশীয় উপকরণে আস্থা নাই, কারণ তাহার সহিত পরিচয় নাই । ঘাহা আবশ্বক তাহা বিদেশ গুইতে আসিবে চিকিৎসার সমস্ত উপকরণ বিলাতের জ্ঞান বুদ্ধি অভ্যাস ও রুচি অন্তধারী উংকৃষ্ট কেঃ