পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

EM e 8 মাডিম্যানের এই উত্তরের পর জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল, “বিলাতে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও হত্যাকাও প্রভৃতি কেন কচিৎ ঘটে ?” তাহার উত্তর গবর্ণমেণ্ট পক্ষ হইতে কিছু দেওয়া হইত কি না এবং দেওয়া হইলে কি উত্তর দেওয়া হইত, তাহ ঠিকৃ বলা যায় না, কিন্তু জানিতে কৌতুহল হয়। প্রকৃত উত্তর অবশ্য এই, যে ইংলণ্ডে প্রজাদের স্বাধীনতা ও আত্মকর্তৃত্ব আছে, যে-গবর্ণমেণ্ট তাহাদের মত-অমুসারে চলে না, কালক্রমে ভোটের জোরে তাহারা তাহার উচ্ছেদসাধন করিয়া নূতন গবর্ণমেণ্টের দ্বারা নিজেদের ইচ্ছামুরূপ কাজ করাইতে পারে, সেইজন্য সেখানে বিপ্লববাদের প্রাদুর্ভাব নাই । আমাদের দেশেও আমরা জাতীয় আত্মকর্তৃত্ব লাভ করিতে পারিলে বিপ্লববাদ বিনষ্ট বা ক্ষীণবল হইবে, একথা অনেকেই বলিয়াছেন, কিন্তু তাহাতে গবৰ্ণমেণ্ট কাম দেন নাই । কর্ণেল ক্রফোর্ড র্তাহার বক্তৃতা শেষ করিবার পূৰ্ব্বে বলেন, গবর্ণমেণ্ট সঙ্কট-সময় উপস্থিত হইলেই ক্রমাগত অর্ডিন্যান্সের মতন নিয়মের দ্বারা নিজ হস্তে প্রভূত ক্ষমতা লইয়া কখন বরাবর দেশ শাসন করিতে পরিবেন না । উপদ্রবের প্রকৃত কারণ দূর করিবার জন্য শীঘ্রই গবর্ণ মেণ্টের কোন উপায় অবলম্বন করা কর্তব্য, এবং প্রত্যেকেরই সেই অবস্থা আনয়ন করিবার নিমিত্ত সাহায্য করা উচিত, যাহাতে অর্ডিন্যান্স অচিরে প্রত্যাহৃত হইতে পারে। বিপ্লববাদের মূল কারণ আর্থিক কারণজাত অসন্তোষ । অতএব তিনি (কৰ্ণেল ক্রফোর্ড ) ভারতীয় নেতৃবর্গকে অনুরোধ করেন, যে, তাহারাভারতীয় যুবকদের কৰ্ম্মশক্তিকে এরূপ পথে চালিত করুন যাহাতে দেশের উপকার ও শ্ৰীবৃদ্ধি হইতে পারে। দেশের দারিদ্র্য, বিস্তর শিক্ষিত ও নিরক্ষর লোকদের বেকার অবস্থা,দারিদ্র্য ও অজ্ঞতা-বশতঃ রোগের প্রাদুর্ভাব চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যরক্ষার নিমিত্ত যথেষ্ট বন্দোবস্তের অভাব, অসস্তোষের অন্যতম কারণ তাহাতে সন্দেহ নাই । কিন্তু এইসব কারণ দূর করিতে হইলেও যে, ভারতীয় জনসাধারণের হাতে রাজনৈতিক শক্তি আসার প্রয়োজন, তাহা কর্ণেল ক্রফোর্ড, এবং তাহার জাত-ভাইরা প্রবাসী—ফান্তন, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড স্বীকার করিতেছেন না ও তদনুসারে কাজ করিতেছেন না । বিশ্বভারতীর বৈদেশিক অধ্যাপকগণ বিশ্বভারতীতে শিক্ষা দিবার জন্ত বিদেশ হইতে বিখ্যাত অধ্যাপকগণের আগমন ইতিপূৰ্ব্বেও হইয়াছে। ফ্রান্স হইতে পারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত প্রাচ্যবিদ্যাবিং অধ্যাপক সিলভ্য। লেভি আসিয়া এখানে অধ্যপনা করিয়া গিয়াছেন। চেকোস্লোভাকিয়া হইতে প্রাগবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসিদ্ধ ভারতীয় বিদ্যাবিং অধ্যাপক ভিন্টারলিট্স্ এবং অধ্যাপক লেঙ্গনী তাহার পর এখানে আসিয়া অধ্যাপন করিয়া গিয়াছেন । বর্তমান বাংলা বৎসরে নরওয়ে হইতে ক্রিষ্টিয়ানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসিদ্ধ প্রাচীন-লিপিবৎ ও ভারতীয় প্রত্নতত্ত্বজ্ঞ অধ্যাপক ষ্টেন কোনো এখানে আসিয়া নানা বিষয়ে শিক্ষা দিয়াছেন । প্রধানতঃ তিনি ভারতীয় ধৰ্ম্মবিষয়ক চিস্তার বিকাশ-সম্বন্ধে বক্তৃতা করেন, থরোষ্ঠী লিপিতে লিখিত বৌদ্ধশাস্ত্র ধৰ্ম্মপদের ব্যাপ্য করেন, পুরাতন খোটানীয় ভাষায় বজ্রচ্ছেদিক ও অন্যান্য পুথির পাঠন করেন এবং কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটক-সম্বন্ধে বক্তৃতা করেন । তদ্ভিন্ন তিনি কলিকাতাতেও কয়েকটি বক্তৃতা করিয়াছেন। বিশ্বভারতীর পক্ষ হইতে র্তাহাকে ভট্ট শ্ৰী শৈল কশ্ব এবং তাহার পত্নীকে শ্ৰীমতী সাবিত্রী দেবী নাম দেওয়া হইয়ছে। র্তাহার বক্তৃতায় ও অন্যান্য কথায় ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক চিন্তার শ্রেষ্ঠত্ব-সম্বন্ধে নানা উক্তি বহুবার শ্রত হইয়াছিল । তাহাতে আমাদের গৌরব বোধ হয় বটে ; কিন্তু তাহাতে আমরা যেন মনে না করি, ভারতীয় ধৰ্ম্মমত-সমূহের সবই ভাল, কুসংস্কারগুলিও ভাল। বস্তুতঃ বৈদেশিক স্বধীবর্গ কর্তৃক ভারতীয় চিস্তার প্রশংসা হইতে এইরূপ ধারণা অনেকের মনে বদ্ধমূল হইয়াছে বলিয়াই এবিষয়ে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক। যাহা হউক এই অবাস্তুর মন্তব্য হইতে আমরা আমাদের বক্তব্য-বিষয়ে প্রত্যাগমন করি। আমরা বলিতেছিলাম, যে, বিদেশ হইতে অনেক স্বপণ্ডিত অধ্যাপক এখানে আসিয়া অধ্যাপনা করিয়াছেন।