পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] তা’র মন সত্যি প্রবোধ মনত না, তাই মাঝেমাঝে দেখা যেভ-ষে সাত্বনা তা'র মেজদির বন্ধু হাসিদিদির বাড়ী গিয়ে খুব মন দিয়ে সেলাই শিখতে স্বরু করেচে কিন্তু দু-এক দিনেই সে ইপিয়ে উঠ ত আর ভাব ত—বাবা রে! ঐ রাধারাণীটা কী যেন, রোজ-রোজ কেবলই সেলাই করতে যে কি ক'রে ওর ভালো লাগে ! হাসিও এটা বেশ জানত, যে সাক্ষ্মনার সেলাই শেখা দুতিন-দিনের বেশী নয়। শেষ অবধি সাত্বনাকে অন্তত মনে মনেও রাধারাণীর কাছে হা'র মানতে হ’ত। এতে কিন্তু রাধারণীর প্রতি তা’র প্রদ্ধা-ভালোবাসা বেড়েই উঠত। সাত্বনার ভারি ইচ্ছে কবুত যে, রাধারাণীর সঙ্গে খেলা করে ; কিন্তু তা’র উপর যে কড়া হুকুম ছিল ছোটো লোকদের ছেলে-মেয়ের সঙ্গে মিশতে পাবে না। জানলা থেকে গল্প করলেই তা’র মা আর দিদিরা কত অসন্তুষ্ট, কত বিরক্ত হন । একবার সে রাধারাণীদের বাড়ী গিয়েছিল বলে’ কয়েকদিন ধরে কী বকুনিটাই না তা’কে খেতে হয়েছিল ; সভ্য হবার ভদ্র হবার কত উপদেশ আর নীতিবাক্যই না তা’কে শুনতে হয়েছিল ! এর পর রাধারাণীকেই বা কি করে’ সে তাদের বাড়ীতে আসতে বলে ? তাই তা’র মনের ইচ্ছে মনের মধ্যেই বন্দী ब्रट्टेल । ভাই-ফোটার দিন সত্বনাদের বাড়ীতে খুব ঘট। হ’ত। ভাই-ফোটার কয়েক দিন আগে থেকেই চারটি বোনে ব্যস্ত হ’য়ে পড়ত এবার শোভন-মোহনকে কে কি দেবে তাই নিয়ে ; কত জল্পনা-কল্পনা করেও কিছুতেই যেন তাদের ঠিক্‌ হ’ত না,কি জাম-কাপড় সব দেওয়া হবে, ফোট দিয়ে কি খাওয়ানো হবে, আর দুপুরে আর রাতেই বা কি খাওয়ানো হবে । তা’র দিদিদের দেখাদেখি, ভাই-ফোটার দিন কিছু-একটা রোধে ভায়েদের খাওয়াবে বলে’ কয়েক বছর ধরে’সাত্বনা আবার ধরে আস্চে ; কিন্তু ছোটো বলে’ তা’র দিদির তা"কে আগুনের কাছে যেতে দিত না । এতে তা’র ভারি রাগ হ’ত,—সে কি চির কালই সেই ছোটোটি থাকবে নাকি ? তাই গেল-বছর তা’র বড়দির পাশে বসে’ছপান কাটুলেট ভেজে দু-ভাইকে খাইয়ে সে আহলাদে নেচে উঠেছিল। এ-সময়টিতে প্রতি সাম্বন ԳՀ(t বছর এই ভাইবোন-কটির মধ্যে যে নিবিড় স্নেহ ও প্রীতির প্রকাশ পেত তাতে সকলের চেয়ে মেতে উঠত ওই দুষ্ট অবাধ্য মেয়ে সাত্বনা ; সে এমন কি মনে-মনে প্রতিজ্ঞ করে ফেলত ষে এবার থেকে আর কিছুতেই শোভনমোহনের সঙ্গে ঝগড়া করবে না। অবশ্য এ-প্রতিজ্ঞ বেশী দিন রক্ষা হ’ত না, কারণ ঝগড়াকে বাদ দিলে সাত্বনার মতন মেয়ের জীবন নেহাৎ ভ্যাপস ও আলুনি হয়ে পড়ে। খুব খানিকট ঝগড়া করে আড়ি করে’ কথা বন্ধ করার পর আবার নতুন করে যে ভাব হয়, স্ট্রে কত স্বন্দর কত মিষ্টি ! o প্রতিবছর ভাই-ফোটার দিন সান্থন দেখে এসেচে রাধারাণীও তা’র ভাইটিকে সকালে চান করিয়ে দিয়ে, একখানি নতুন কাপড় পরিয়ে, তার কপালে ফোট দিয়ে যত্ন করে জল-খাবার খাওয়াচ্চে ; আবার দুপুরেও ভাইটিকে নিজে হাতে খাইয়ে দিচ্চে। এই দরিদ্র পরিবারটিও অাজকের দিনে যথাসাধ্য আহারাদির আয়োজন কবুত । সাত্বনার কাছে অবশ্য তা অত্যন্ত সামান্তই ঠেকৃত। প্রথমপ্রথম এমন কি সে একটু অব্যকৃৎ হ’ত। রাধারাণীর স্নেহমমতা যেন এদিন হাজার গুণ বেড়ে উঠত ; ভাইটিকে সারাদিন কাছে-কাছে রেখে, সাজিয়ে-গুজিয়ে, আদর করে’, একেবারে ব্যতিব্যস্ত করে তুলত। ইস্কুলের প্রাইজ পাওয়া পুতুল খেলনা প্রভৃতি তার অতি প্রিয় জিনিস-গুলিও সে আপন হ’তে আঞ্জ ভাইটিকে দিয়ে দিত। কানাইলালের কাছেও তাই এদিনটা ছিল একটা বিশেষ আনন্দ ও উৎসবের দিন । মানুষের জীবন-যাত্র তা’র আকস্মিক বিপদ-আপদের কোনো হিসাবই রাখে না, সে হঠাৎ একদিন চমকে উঠে’ দেখে, কত বড় একটা দুদিনের মধ্যে সে এসে পড়েচে । তাই সেবার ভাদ্র মাসে যখন রাধারাণী ছুদিনের জরে বাপ-মা ও ভাইটির মায়া কাটিয়ে চলে’ গেল, তখন হরিচরণের সংসারটি কি-রকম যে মূঢ় হতবুদ্ধি হ’য়ে গিয়েছিল, তা বলা যায় না। কয়েক দিনের জন্তে যেন তাদের চেতনা লুপ্ত হয়েছিল ; একটা নিদারুণ শোকের ছায়াতে সমস্ত বাড়ীটি আচ্ছন্ন হ’য়ে গেল, মাঝেমাঝে শুধু এই দুঃসহ নীরবতা ভেদ করে মথিত মাতৃ