পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] “কোথায় গিয়েছিলে ভাই ছোড়দি, আমাদের সঙ্গে আজ খেলা করবে না ?” সান্থনা ভাই-দুটিকে আদর করে ভুলিয়ে নিজের অতিপ্রিয় খেলনার বাক্সটি তাদের খুলে’ দিয়ে বললে “তোরা এই নিয়ে ততক্ষণ খেলা করুন ভাই, আমি জলদি একটা কাজ সেরে আসি।” এই খেলনার বাক্সটিতে হাত দেওয়া শোভন-মোহনের এতদিন নিষেধ ছিল, তাদেরও তাই জানবার ভারি ঔংস্নক্য ছিল, ছোড়দির এই প্রিয় গুপ্ত-ভাণ্ডারে কি আছে। সান্ত্ৰনার যখন মেজাজটা খুব ঠাণ্ড থাকৃত, তখন বড়-জোর বাক্স থেকে এটা-ওটা বা’র করে’ ভায়েদের সে দেখিয়েচে । শোভন-মোহন তাই আজ ভরি আশ্চৰ্য্য হ’য়ে গেল ; ছোড়দির এরকম অনাসক্তির ভাব তা’র কখনো দেখেনি । এক-একবার তাদের ইচ্ছে হচ্ছিল, গিয়ে দেখে, ছোড়দি কি কবৃচে, কিন্তু খোলা বাক্সটাকে ফেলে’ যেতে কিছুতেই তাদের মন সবুছিল না । সাত্বনা একটা শিউলি-পাতায় একটু চন্দন আর একটুকরো কাগজে চারটি ধানদুৰ্ব্বা নিয়ে বৈঠকখানায় গিয়ে দেখলে তা’র বাবা বসে’ খবরের কাগজ পড়চেন,আর তার সামনে টেবিলে একখানা ক্টোচানো “দিশি” কাপড় আর এক চাঙারি খাবার। বীরেন্দ্রনাথ তা’কে দেখে বললেন, “এই ধে সাত্বন, এতে হবে ত?” সে একটু ঘাড় নেড়ে জানালে, হঁ্যা । কাপড় ও খাবার নিয়ে যখন সাস্তুনা ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্চে তপন বীরেন্দ্রনাথ বললেন, “কা’কে ভাই-ফোট দিবি, বলবি নে মা ?” সাস্বনা থমকে দাড়িয়ে বললে, “ওদের বাড়ীর কানাইকে, তুমি কারুকে বোলো না যেন, বাবা।” বীরেন্দ্রনাথ নিৰ্ব্বাকৃ-বিস্ময়ে মেয়ের দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে বললেন, “বেশ ত মা, তা কানইকে দুপুরে এখানে খেতে বললে হয় না ?" সাম্বন শুধু “নাঃ” বলে’ ঘর থেকে চলে গেল। বীরেন্দ্রনাথ চেচিয়ে বললেন, “কাপড় আর চাঙারিটা ভিখুর হাতে দে না সান্থন, সে তোকে পৌছে দিক ৷” সাত্বনা যেতে-যেতে বললে, “দর্কার কি বাবা, আমিই পারব।” সাস্তুনা চলে গেলে বীরেন্দ্রনাথ একটা নিশ্বাস ফেলে’ সাস্তুনা १२१ ভাবলেন, পৃথিবীর সব মেয়েরা যদি তার সাস্তুনের মতন অত দুষ্ট অত অবাধ্য আর অন্ত মমতাময়ী হ’ত ! কানাইদের বাড়ীর দরজ খোল ছিল ; সান্তুনা উঠানে ঢুকতে কানাই তাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল। পাশের বাড়ীর বড়-লোকদের মেয়ের তাদের বাড়ী আসা, সে যে একেবারে অভাবনীয় কাগু ! তাই সে বিস্ময়ে সাস্তুনার দিকে চেয়ে থেকেই “মা” বলে ডাকূলে । কানাইয়ের भr१७ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে সম্বিনাকে দেখে কম বিস্মিত হননি। র্ত্যকে দেগে সাস্থন বললে, “কানাইকে চান করে’ আসতে বলুন ন৷ শীগরির, গামি ওকে ফোট দিয়ে ধাবো।” কিন্তু তিনি কিছু বল্লার আগেই কানাইয়ের দিকে ফিরে সে বললে, “যাও ত ভষ্টি কানাই, একটু জলদি করে চান করে’ এস ত, অঙ্গ ধে ভাই-ফোটা ।” আঞ্জ ভাই-ফোট। শুনে কানাই যেন একটু অবিশ্বাসের সঙ্গেই মাকে জিজ্ঞেস করলে, “স্থা। মা, আজ ভাই-ফোটা ?” র্তার হৃদয়ে তখন দুঃখ ও স্বগের এক অপূৰ্ব্ব আলোড়ন চলছিল ; গল দিয়ে তার স্বর উঠল না, তিনি ঘাড় নেড়ে জানালেন, “হঁ্যা”। কানাইলালের মুখটা কি রকম শুকিয়ে গেল ; সে ভাবছিল আর-একদিনের কথা, সেদিন তা’র দিদি ছিল, তা’র পর আর-একদিনের কথা, যেদিন তা’র দিদিকে একটা বিশ্রী ছোটো খাটিয়ায় করে’ সকলে কোথায় যে নিয়ে গেল ! তা'র চোখ-দুটো ছলছল করে’ এল, বহুকষ্টে সে অশ্রুরোধ করছিল । সাস্তুনা আবার তাড়া দিয়ে বললে, “যাও ভাই কানাই, আর দেরি কোবো না ।” কানাইলালের মা এতক্ষণে একটু সাম্লে উঠেচেন। কানাইলাল চান করতে গেলে, সাস্তুনাকে তিনি ঘরে নিয়ে গেলেন । তাকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বার-বার তা’র মস্তক চুম্বন করতে লাগলেন ; চোখ দিয়ে তার টপটপ করে জল পড়তে লাগল। তার কেমন যেন মনে হচ্ছিল বুকের মধ্যে আবার তার হারানো রাধুকে ফিরে’ পেয়েছেন। শাশুড়ী ও খুড়শাশুড়ী ঘরে ঢুকৃতে র্তার মুহূৰ্ত্তের স্বপ্নজাল ছিন্ন হয়ে গেল। তিনি চোপ মুছে বুদ্ধ-জুটিকে বললেন, “পাশের বাড়ীর সান্থন, কানাইকে ফোট দিতে এসেচে, এর সঙ্গে যে রাধুর বড্ড ভাব ছিল।”