পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা] উহাদের আবিষ্কৃত তথ্য ইংরেজী ভায়ার সাহায্যেপ্রচারিত হইতেছে। কাজেই তাহাদের দ্বারা বাংলা সাহিত্য প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হইতেছে না । দর্শন-বিষয়ে ঐযুক্ত দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক প্রবন্ধ লিখিয়াছেন, দর্শনের বিভিন্ন বিষয় লইয়া অনেক প্রবন্ধ মাসিক পত্রিকাদিতেও দেখিতে পাওয়া যায়, কিন্তু তদনুপাতে গ্রন্থ রচনা এখনও খুব বেশী इहेब्रा खेळ नैाहे । বিজ্ঞান এবং দর্শনাদি বিষয়ে প্রবন্ধ বা পুস্তক রচনার পক্ষে একটা বিশেষ অন্তরায় পরিভাষার অভাব। পরিভাষার অভাবে বিজ্ঞান ও দর্শনাদি আলোচনা কখনও স্বসম্পূর্ণ হইতে পারে না। অধ্যাপক যোগেশচন্দ্র রায় এ-বিষয়ে অনেক শক্তি ব্যয় করিয়াছিলেন । কিন্তু বর্তমানে আর কোনো আন্দোলন দেখা যায় না । পরিভাষা গঠনসম্বন্ধে এখন মনোযোগ দেওয়ার সময় হইয়াছে বলিয়া মনে হয়। আমার মনে হয় সাহিত্য-পরিষদ এবিষয়ে উদ্যোগী হইয়া কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি লইয়া একটি সমিতি গঠন করিয়া এই কাৰ্য্যে মনোনিবেশ করিলে যথোপযুক্ত কাজ হইতে পারে। যে সাহিত্য যতই পুষ্ট হউক না কেন, অনুবাদ-সাহিত্যে তাহার দরকার নাই এমন কথা বলা যায় না, কারণ বিশ্বজগতের খবর না লইয়া কোনো সাহিত্য সৰ্ব্বাঙ্গসম্পূর্ণ হইতে পারে না। এই অনুবাদ-সাহিত্য থাকার দরুনই আমরা ইংরেজী ভাষার সাহায্যে সমস্ত ইউরোপীয় সাহিত্যের, এমন-কি সমস্ত বিশ্ব-জগতের খবর পাইতেছি । যে-কোনো জাতির সাহিত্য তাহার জাতীয় জীবনের অনুপাতেই গড়িয়া উঠে, কাজেই ইয়োরোপের তুলনায় আমাদের জাতীয় সাহিত্যের দৈন্ত অবশ্যম্ভাবী। প্রবীণ ঐতিহাসিক শ্ৰীযুক্ত যদুনাথ সরকার এক স্থলে বলিয়াছেন—“ভারতীয় দেশীয় ভাষায় সাহিত্য অনেক স্থলে এখনও মধ্য-যুগের ইয়োরোপকে অতিক্রম করিতে পারে নাই।” আমাদের বাংলা ভাষায় এই অল্পবাদ সাহিত্যের অভাবও অতি শোচনীয়। বাংলা সাহিত্যের এই অভাব কতক-পরিমাণে দূর করিবার অভিপ্ৰায়ে ঐযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অধ্যাপক যদুনাথ সরকার “বিশ্ব-বিদ্যা-সংগ্রঙ্গ” సె 3-8 বঙ্গ ভাষার দৈন্য ৭৩৭ করিবার জন্ত এক সমিতি গঠন করিয়া কার্ষ্যে অগ্রসর হইয়াছিলেন । ৯ কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে বাংলা দেশের এত বড় দুই জন কৃতী পুরুষের চেষ্টাও সফল হইল না ; খবর লইয়া জানিলাম যে, বর্তমানে এই সমিতির আর অস্তিত্ব নাই । ইংরেজী ভাষাতে ইয়োরোপের সমস্ত দেশের কাব্য, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান সমস্তই অনুদিত হইয়াছে এবং হইতেছে। এমন-কি চীন, জাপান, তিব্বত, আরব, পারস্য এবং ভারতের সাহিত্য এবং দর্শনের অক্সবাদও কিছু-কিছু হইতেছে । আর আমাদের এমনই দুর্ভাগ্য, যে ইংরেজী ভাষারও অতি সামান্য কয়েকখানা মাত্র গ্রন্থের অনুবাদ এপর্য্যস্ত বাংলা ভাষায় বাহির হইয়াছে। আমাদিগকে ইংরেজী ভাষার মধ্য দিয়াই হউক বা মূল গ্রন্থ হইতেই হউক ইয়োরোপ ও আমেরিকার সমস্ত কাব্য, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞানের অনুবাদ করিয়া বাংলা সাহিত্যের অভাব পূরণ করিতে হইবে । অধ্যাপক যদুনাথ সরকার প্রকৃতই বলিয়াছেন—“ভারতকে বিশেষ চেষ্টায় অল্প সময়ের মধ্যে দীর্ঘকালের ক্ষতিপূরণ করিতে হইবে, নচেৎ বর্তমান যুগের কঠোর জীবন-সংগ্রামে নব্যতমজ্ঞানের পথ্যে বঞ্চিত ভারতীয় জনসাধারণ মুমুধুতা প্রাপ্ত হুইবে ।” বাংলা দেশের বিজ্ঞতম স্বধীগণের মৌলিক গবেষণাপ্রস্থত অমূল্য জ্ঞান-সম্পদ ইংরেজী ভাষাতেই প্রচারিত হইতেছে ; যথা ডাক্তার জগদীশচন্দ্র বস্ব, প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখ বৈজ্ঞানিকগণের বৈজ্ঞানিক গবেষণাসমূহ, ডাক্তার প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের হিন্দু-রসায়নের ইতিহাস,অধ্যাপক যদুনাথ সরকারের ঔরঙ্গজেব, শিবাজী এবং মহারাষ্ট্র ও মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাস ইত্যাদি । এইসকল গ্রন্থ ইংরেজী ভাষায় রচিত হইবার আবশ্যকতা আছে, কিন্তু বাংলা ভাষায়ও এইসকল গ্রন্থের অনুবাদ অবশ্যকরণীয়। বাংলা সাহিত্যের যখন এমন অবস্থা হইবে যে, বিদেশীয়ের ংলার জ্ঞান-সম্পদ লাভ করিবার জন্য উদ্‌গ্ৰীব হইয়া উপায়াস্তুর না দেখিয়া বাংলা সাহিত্য হইতে অনুবাদ করিয়া নিজ-নিজ সাহিত্য পুষ্ট করিতে বাধ্য হইবেন, তখন

  • প্রবাসী, শ্রাবণ, ১৩২৪ ।