পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ8 বাণিজ্যের অধিকার—এইসকলের পরিবর্তে বাণিজ্য-শুল্ক রাজার প্রাপ্য বলিয়া বিবেচিত হইত। পূৰ্ব্ব অবস্থায় ইংলণ্ডে এই শুল্ক রাজস্ব-বৃদ্ধির উপায় ও বাণিজ্যের পরওয়ানার মূল্যস্বরূপ বলিয়া মনে করা হইত ; ইহার সহিত দেশীয় শিল্পের সংরক্ষণ বা জাতীয় কোন ভাব জড়িত ছিল না । ১২শ হইতে ১৫শ শতাব্দী পৰ্য্যন্ত ইংলণ্ডের শিল্পবাণিজ্য প্রধানতঃ স্থানীয় নগর-বণিক-সমিতি-কর্তৃক পরিচালিত হইত, এইসকল সমিতি পরে কয়েকজনের একচেটিয়া অধিকার হইয়া দাড়ায় ও সাধারণের ধনবৃদ্ধি না করিয়া বিশেষ কয়েকজনের লাভের উপায় হয়। প্রথম অবস্থায় এইসকল সমিতি ইংলণ্ডের শিল্প-বাণিজ্যের যথেষ্ট উন্নতি সাধন করিয়াছিল। তৃতীয় হেনরীর রাজত্বকালে এক নূতন প্রথা অবলম্বিত হয়। ইংলণ্ডের কয়েকটি সহরকে বেচা-কেনা করিবার একচেটিয়া অধিকার দেওয়া & 1 &### Too Staple Town oil হইত। এই প্রথার ফলে বাণিজ্য-শুস্ক আদায়ের অনেক সুবিধা হয়। ইংলণ্ডের বাহিরেও কয়েকটি নগরকে এইরূপ অধিকার দেওয়া হয়। প্রতিদ্বন্দ্বিভার ফলে এই প্রথা উঠিয়া যায়ু । প্রথম এডোয়ার্ডের রাজত্ব-কালে ( ১২৭৫ খৃঃ অঃ ) ইংলণ্ডে পশম, চামড়া ও ধাতুর উপর বহিঃশুল্ক ( Export duty ) স্থাপিত হয় । তৃতীয় এডোয়ার্ডের রাজত্ব-কাল হইতে দেশীয় শিল্প-সংরক্ষণের জন্য আন্তঃশুল্ক ( Import duty ) স্থাপন আরম্ভ হয়। কাচা মাল যাহাতে বিদেশে রপ্তানি না হয়, তাহার জন্য বহিঃশুল্ক ক্রমশ: বৰ্দ্ধিত হইতে থাকে। চতুর্থ এডোয়ার্ড, বিদেশী তৈয়ারী মাল আমদানি একেবারে বন্ধ করিয়া দেন। টিউডরদের রাজত্ব-কালে অন্তঃশুল্কের হার আরও বৰ্দ্ধিত হয় এবং র্কাচ মাল বিদেশে রপ্তানি করা দণ্ডনীয় অপরাধ বলিয়া স্থিরীকৃত হয়। এলিজঃবেথের রাজত্বকালে কোন ব্যক্তি দ্বিতীয় বার পশম রপ্তানি অপরাধে ধৃত হইলে প্রাণদণ্ডে দণ্ডনীয় বলিয়া গণ্য হইত। এইসময়ে কাচা মালের রপ্তানি ও তৈয়ারী মালের আমদানি বন্ধ করা, দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড বলিয়া বাণিজ্য-নীতিরূপে গৃহীত হয়। বাণিজ্য-নীতির সহিত জাতীয় উন্নতির ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধও এই সময়ে বিশেষরূপে স্বীকৃত হয়। এলিজাবেথের রাজত্ব-কালে ইংরেজের জাতীয় জীবনে জোয়ার আসে । শিল্পে, সাহিত্যে, রাজনীতিতে ইংলণ্ডকে সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ করাই সমগ্র জাতির চেষ্টা হয়। আমেরিকার আবিষ্কার ও উত্তমাশ-পথে ভারতে আগমনের পথের সন্ধান ইংরেজ বণিক্‌কে বাণিজ্য-অভিযানে যাত্রা করিবার জন্য চঞ্চল করিয়া তুলে। রাজশক্তি ও প্রজাশক্তি এক-যোগে ইংলণ্ডের শ্ৰীবৃদ্ধি সাধনে প্রবৃত্ত হয়। বিদেশে বাণিজ্য করিবার জন্ত এই সময় নানা বণিকূ-সমিতি গঠিত হয়। বিশেষ বণিক-সমিতিকে বিশেষ স্থানে একচেটিয়া বাণিজ্য করিবার রাজকীয় অধিকার দেওয়া হয়। রুশিয়া কোম্পানী, বাল্‌টিক কোম্পানী, গিনি কোম্পানী, ( লেভাণ্ট কোম্পানী, ও আমাদের দুরদৃষ্টের মূল ইষ্ট-ইণ্ডিয়া কোম্পানী ( ১৬০০ খ্ৰীঃ অঃ ) এই সময়ে গঠিত হয়। এলিজাবেথের রাজত্ব-কালে ইংলণ্ডের জাতীয় জীবনে ধে-তরঙ্গ উঠে, তাহার আঘাত বহুদূরে নানাদেশে পৌছায়। জাতীয় প্রাণ-শক্তির উচ্ছ্বাস ইংলণ্ডের ক্ষুদ্র গণ্ডী ভাঙ্গিয়া অকুল সমুদ্রে ঝাপ দিয়াছিল । ইংলণ্ডের বণিককুল লক্ষ্মীর ঝাপির সন্ধানে দিকে-দিকে ছুটিয়া ছিল । লক্ষ্মীর ঝাপি তাহারা পাইয়াছিল—ধে উপায়ে পাইয়াছিল, তাহা অধিকাংশ স্থলেই ধৰ্ম্মসঙ্গত হয় নাই । ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে ইংলণ্ডে যে বাণিজ্য-নীতি প্রচলিত ছিল তাহাকে সাধারণত মার্কেস্টাইল থিওরি বলে। এই নীতির মূল মতগুলি এই---(১) দেশের সমস্ত সোনা-রূপা দেশে রাখা ও অন্যান্য দেশ হইতে উহ। আমদানি করা, (২) তৈয়ারী মাল রপ্তানি করা, (৩) আমদানি যথাসম্ভব কম করা। এই নীতি-অমুসারে তৈয়ারী মালের রপ্তানি বৃদ্ধি করিবার জন্য ইংরেজ বণিকৃকে পড় তা দামের চেয়ে কম দামে তৈয়ারী মাল বিদেশে বিক্রয় করিতে বলা হইত ও ক্ষতিপূরণ ও লাভের টাকা রাজসৰ্বকার হইতে দেওয়া হইত। আমদানি বন্ধ করিবার জন্য অন্তঃশুল্কের হার বহু-পরিমাণে বুদ্ধি করা হয় ।