পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজপথ ঐ উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ( అ } গোলদিঘি হইতে স্বন্ধের যখন, গৃহে ফিরিল তখন রান্ত্রি নয়টা বাজিয়া গিয়াছে। সাঁড়িতে উঠিতে-উঠিতে তাহার দৃষ্টি পড়িল অদূরে রন্ধনগৃহে । দেখিল নিবিষ্টভাবে পাক-পাত্রের দিকে চাহিয়৷ উনানের সম্মুখে একটা নীচু টুলের উপর মাধবী বসিয়া আছে। আর উপরে না গিয়া স্বশ্বের তথা হইতে নীচে নামিয়া গেল, এবং ধীরপদক্ষেপে রন্ধনশালার দ্বারে আসিয়া দাড়াইল । চুল্লী-গহ্বর হইতে প্রক্ষিপ্ত অগ্নিপ্রভায় মাধবীর মুখের এক অংশ আরক্ত হইয়ু উঠিয়াছিল। আলো-ছায়ার কঠিন এবং কোমল রেখায় অঙ্কিত হইয়া তাহার মৌনমধুর মুখমণ্ডলে এমন অপরূপ একটা ব্যঞ্জনা ফুটিয়া উঠিয়াছিল যেমনটি ইঙ্গর পূৰ্ব্বে আর কখনও দেখিয়াছে বলিয়া স্বরেশ্বরের মনে পড়িল না । আজ দ্বিপ্রহরে মাধবী যখন তাহাকে নূতন-কাট। স্থত, নব-প্রস্তুত বস্ত্রাদি এবং তাহার হিসাবপত্র দেখাইতেছিল তখন সমস্ত দেখিতে-দেখিতে এবং শুনিতে শুনিতে র্তাহার এবং চরকাঘর সংক্রান্ত এমন-কোনো ব্যাপারই স্বরেশ্বর খুজিয়া পায় নাই যাহা তাহার অনুপস্থিতির জল্প ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে বলিয়া মনে করা যাইতে পারে। মাধবীর অনন্যসাধারণ কর্তব্যনিষ্ঠা এবং কার্ধ্যক্ষমতার কথা জানা থাকিলেওঁ সতের-আঠার বৎসরের একটি মেয়ে দুইটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কাৰ্য্য কলাপ অপরের সাহায্য-ব্যতিরেকে ঠিক এরূপ স্বচার-ভাবে নিৰ্ব্বাহর করিতে পা,ে তাহা প্রত্যক্ষ দেখিয়া বিস্ময়ে তাহার চিত্ত ভরিয়া গিয়াছিল! বারম্বার সে মনে-মনে প্রশ্ন করিয়াছিল, এত শক্তি মাধবী কোথা হইতে পাষ্ঠল ! এখন মাধবার এই স্তব্ধগভীর আকৃতি নিরীক্ষণ করিয়া স্বরেশ্বর তাঁহাখ সে-প্রশ্নের উত্তর লাভ কfরল ; দেখিল ধরিত্রীর গর্ভে প্রচ্ছন্ন আiয়র মতন মাধবীর ভিতরে سیاسی-هها ষে-শক্তি আছে তাহা তাহার বাহিরের মূৰ্ত্তি দেখিয়া সৰ সময়ে বুঝা যায় না । “ভাতের হাড়ি নিয়ে অত কি ভাবছিল মাধবী ?” আকস্মিক শৰে ঈষৎ চমকিত হইয়া মাধবী স্বরেখরের প্রতি চাহিয়া দেখিয়া একটু হাসিল । তাহার পর স্বিতমুখে বলিল, “ভাবছিলাম আরও দেরি করে ভূমি এলে ভাত ঠাও হয়ে গেলে তখন কি করব। বাপ রে । তোমাদের কথা আর শেষ হয় না! এতক্ষণ কি এড় কথা হচ্ছিল বলে দেখি ?” ক্রকুঞ্চিত করিয়া স্বরেশ্বর বলিল, “কি বিপদ! বাংলা অভিধানে কথা কি এতই অল্প আছে, যে দু-তিন ילי কথা কওয়া যায় না ?” 制 একটা কথা সহসা মনে পড়িয়া মাধবীর মুখ হাস্যে রঞ্জিত হইয়া উঠিল। বলিল, “দু-তিন ঘণ্টা কেন ? দু-তিন দিন ধরেও কওয়া যায়, যদি সেটা অভিধানে কোনো উষ্ম বর্ণ দিয়ে আরম্ভ কোনো কথা হয়। তাই হচ্ছিল না কি দাদা ?” রহস্যটা হঠাৎ ধরিতে নাপারিয়াহরেশ্বর সবিস্ময়ে বলিল, “কোনো উন্মবর্ণদিয়ে আরম্ভকোন কথা রে ? তাহার পরই বুঝিতে পারিয়া বলিয়া উঠিল, “ও ! তা হ’লে তুই বুৰি এতক্ষণ প-বর্গের কোনো কথা নিয়ে তন্ময় হ’য়ে ছিলি ?” প-বর্গেব অক্ষরগুলি মনে-মনে তাড়াতাড়ি আওড়াইয়া লইয়া ব্যগ্রভাবে মাধবী বলিল, “না দাদা ! এখনো ভাতের হাড়ি উনোন থেকে নামেনি, এখন যা-ত কথা ও-রকম করে” বোলো না!” মাধবীর দুর্ভাবনায় পুলকিত হইয়া স্বরেশ্বর হামিতেহাসিতে বলিল, “প-বর্গের যে কথা উচ্চারণ করলে ভাতের ইড়ি ফেটে যায়, আমি যে সেই বিপিন বোসের কথাই বলতে চাই, তা তুষ্ট ভাবছিস কেন মাধবী ? সে কথাটা ছাড়া প-বর্গে আর অন্য কথা কি নেই ?”