পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] কেমন সঙ্কুচিত হইয়া পড়িল । সে মাথা ইেট করিয়া একটু বিষণ্ণ-মুখে প্রত্যাবর্তন করিল। ক্রমে ধীরে-ধীরে কয়েকটি দ্বার অতিক্রম করিয়া একটি স্ববিস্তৃত ঘরে আসিয়া হাজির হইল। সেখানে ফরাসের উপর বলিতেও তাহার মনে একটু দ্বিধা জন্মিল। অলঙ্ঘ্য গিরির মতন ক্ষে-ব্যবধানটা তাহার ও ভদ্র সমাজের মাঝখানে দাড়াইয়া আছে, কেমন করিয়া সে-বাধাকে অমান্ত করিয়া সে অনধিকার প্রবেশের চেষ্টা করিতে পারে । ফরাসের পাশ হইতে সরিয়া আসিয়া সে তাহারই নিকটবর্তী একখানি বেঞ্চের উপর উপবেশন করিল। নৃপতিদের গৃহের মেয়ের কৌতুহলী হইয়া শাস্তির সঙ্গের বালকটির পরিচয় জিজ্ঞাসা করিলেন। নৃপতি সংক্ষেপে তাহার পরিচয় দিলে বালককে দেখিবার অভিপ্রায়ে মেয়েরা তাহাকে একবার আনিবার জন্ত নৃপতিকে পাঠাইলেন। নৃপতি তাহাকে সঙ্গে করিয়া লইয়া বারান্দার নীচে উঠানে গিয়া দাড়াইলেন। কানাইলাল বর-পাত্রের মতন কিছুক্ষণ সেইখানে দাড়াইয়া থাকিতে বাধ্য হইল। সে দেখিল, কতকগুলি ব্যগ্র চক্ষু তাহার মোজা-দুইটি লইয়া যেন হাসাহাসি করিতেছে। তা ছাড়া ফুসফাস্— গা টেপাটিপি, চক্ষুর ভঙ্গিমা, কত কি চলিতেছে। কানাইলালের শুভ্র কপোলদেশ লজ্জায় রক্তবর্ণ হইয়া উঠিল। সে ভাবিতে লাগিল,—বোধ হয় বলাই-এর কাপড়-চোপড় তাহার গায়ে তেমন মানায় নাই, কোনোটা ছোটে কোনোট বড় হইয়াছে, নতুবা ইহার হাসাহাসি করিবে কেন ? কিন্তু মোজা জোড়া ত পায়ে ঠিকই হইয়াছে। এটার প্রতি ইহার এত তীক্ষু দৃষ্টি দিতেছে কেন ? এই অনিন্যস্থদের শুভ্ৰ হৃদয়টি উপলক্ষ্য করিয়া রমণীরা মুখে যে সকৌতুক দুষ্ট হাসির ফুৰ্ত্তি ফুটাইয়া তুলিতেছিলেন তাহাতে কানাইলালের চক্ষে তাহাকে যেন জগৎসংসার হইতে দূরে সরাইয়া দিতেছিল। নৃপতি কহিলেন,— “কানাই, তুমি যাও—এখন সেইখানে গিয়ে বোলো ।” কানাই সেখানে সেই বেঞ্চের উপর আসিয়া বসিয়া তাহার পায়ের মোজ-দুইটি আগে তাড়াতাড়ি খুলিয়া পকেটে পুরিল । তার পর উঠিয়া দাড়াইয়া তাহার অঙ্গের জাম-কাপড়ের দিকে চাহিয়া-চাহিয়া দেখিল ; কোনোটিই বামুন-বাগদী ፃፃ» ত ছোটো বড় অশোভন হয় নাই ! সে আবার উপবেশন করিল ! সে বুঝিতে পারিল না যে, কোন কাটাটি তাহার অঙ্গের কোন স্থানে ফুটিয়া ভদ্র সমাজে প্রচলিত এসব বেশ-ভুষাও তাহার পক্ষে কাটার বস্ত করিয়া তুলিয়াছে ! কিছুক্ষণ পরে একটি ভূত্য আসিয়া তাহাকে স্বানের জন্ত হাতের তেলোয় খানিকট তৈল ঢালিয়া দিয়া গেল । একটু বাদে বলাইও স্বগন্ধি তৈলে অঙ্গ আমোদিত করিয়া তথায় আসিয়া উপস্থিত হইল। কানাইলাল সরিষার তৈলটুকু মাথায় দিয়া বলাইএর সঙ্গে-সঙ্গে স্নান করিতে গেল। উভয় ভ্রাতা স্নান করিয়া আসিলে বলাই অনায়াসে সহজভাবেই বাড়ীর মধ্যে ঢুকিল। কানাই বাহিরের ঘরে ভিজা কাপড়ে দাড়াইয়া থাকিয়া শীতে কাপিতে লাগিল। যখন বস্ত্র পাঠাইবার আর কোনো সম্ভাবনাই দেখা গেল না তখন সে অঙ্গনে নামিয়া পরিহিত বস্ত্রের অৰ্দ্ধাংশ মাটির উপর বিছাইয়: দিয়া রৌদ্রে শুকাইতে লাগিল। বলাই সিক্ত বস্ত্র ত্যাগ করিয়া শুভ্ৰ নূতন বস্ত্র পরিয়া আসিয়া বলাইকে তদবস্থ দেখিয়া যেন কিছু কুষ্ঠিত হইযা পড়িল কহিল,— e "ওকি কানাই দা, কাপড় পাওনি । দাড়াও, দিদির বাক্স থেকে আমার কাপড় একখানা এনে দিচ্ছি।” সে ছুটিয়া দিদির ঘরে চলিয়া গেল । বলাই-ব্যস্ত হইয়া কাপড় আনিয়া দিলে কানাই তাহ পরিয়া আর্দ্র-বস্ত্রখানি শুকাইতে দিল । ভিতর-বাড়ী হইতে ঝি বলাইকে জলযোগের জন্য ডাকিতে আসিল । কানাই একলাটি সেইখানেই বসিয়া রহিল। কিছুক্ষণ পরে জনৈক ভৃত্য ছোটো একখানি কলার পাতায় করিয়া তাহাকেও জলযোগের জন্য কিছু খাদ্য তথায় আনিয়া দিল । বলাই-এর জলযোগ শেষ হইলে তাহাকে সেইখানেই ভাত দেওয়া হইল। নৃপতিও তাহার সঙ্গে বসিলেন। কিন্তু হঠাৎ বলাই আসন ত্যাগ করিয়া উঠিল। তাহ দেখিয়া নৃপতি কহিলেন, “ভাত দেওয়া হয়েছে যে, কোথায় যাবে এখন ?” সে-কথার উত্তর না দিয়া বলাই কহিল, “আপনি একটু বন্ধন, আমি আসছি।”